×

মুক্তচিন্তা

পাকিস্তান প্রতিরক্ষা জার্নালে বাংলাদেশের জন্মকথা

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২২, ১২:৩৫ এএম

পাকিস্তান প্রতিরক্ষা জার্নালে বাংলাদেশের জন্মকথা

এসএএন ফিচার সার্ভিস পাকিস্তান ডিফেন্স জার্নালের একটি রিপোর্ট সম্পর্কে বলেছে এটি ‘আনইউজুয়াল’ বিশ্লেষণ, এসএএন ফিচার সার্ভিসের বিবরণীটি উপস্থাপন করা হলো : ১৯৭১-এর প্রথমদিকে দু-একজন ব্যতিক্রম বাদে (যেমন লেফটেন্যান্ট জেনারেল সাহেবজাদা ইয়াকুব খান একজন) প্রায় সব সেনা নেতৃত্বের কাছে সমস্যার একমাত্র সমাধান ছিল সামরিক বল প্রয়োগ। ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৭১ জেনারেল ইয়াহিয়া খান গভর্নর ও সামরিক আইন প্রশাসকদের বৈঠক ডাকলেন। জেনারেল ইয়াকুব খান ইয়াহিয়া খানের কড়া ব্যবস্থা নিয়ে লিখেছেন, ‘তিনি ভেবেছেন কয়েক ছররা গুলিতে কাজ হাসিল হয়ে যাবে আর সামরিক আইনের কঠোর প্রয়োগে তখন কোনো সমস্যাই হবে না।’ ইয়াহিয়ার প্রতি সুবিচার করতে চাইলে বলতে হয়, এই মূল্যায়ন কেবল তার একারই ছিল না। পশ্চিম পাকিস্তানি সব সামরিক ও বেসামরিক নেতৃত্বের একই মনোভাব ছিল। পশ্চিম পাকিস্তানি আতঙ্কের ব্যাখ্যা উঠে এসেছে নিয়াজির লেখায়, ‘বাঙালিরা সরকার গঠন করবে। মখমলের দস্তানার ভেতরে থাকবে হিন্দুদের লৌহমুষ্টি’। ১৯৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর ইয়াহিয়ার গোয়েন্দাপ্রধান মেজর জেনারেল আকবর খান বললেন, ‘আমরা এই জারজদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করব না।’ ১৯৭১-এর জুনে ডিভিশনাল কমান্ডারদের বৈঠকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতার প্রস্তাব প্রায় সব জেনারেল উড়িয়ে দিলেন এবং বললেন, ‘এটা আমাদের শেষ করে দিতে হবে।’ ১৯৭১-এর মার্চ অপারেশনের সময় ইয়াহিয়া খানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী বললেন, “যতক্ষণ না এদের আচ্ছামতো শিক্ষা দিয়ে সোজা করা যাচ্ছে, ‘বিঙ্গো’দের সঙ্গে কোনো ধরনের রাজনৈতিক সমাধান হতে পারে না।” পশ্চিম পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের মনেও একই ধারণা গেঁথে ছিল। পূর্ব পাকিস্তানিদের সোজা করতে দুজন কুখ্যাত আমলার একজনকে গভর্নর (ইস্কান্দর মির্জা) এবং অন্যজনকে চিফ সেক্রেটারি (এমএম খান) করে পূর্ব পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেয়া হলো। রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার ফুটো ঝালাই করার জন্য এটা কোনো স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা ছিল না। এটা যে দীর্ঘমেয়াদি আইয়ুব খান নিজেই তা স্বীকার করেছেন। মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে আইয়ুব খান খোলামেলা বলে দিয়েছেন, পূর্ব পাকিস্তানে দীর্ঘ সময়ের জন্য সেনাশাসন বলবৎ রাখা জরুরি হয়ে পড়বে। ১৯৫৮ থেকে ১৯৫৯ সালে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করে কঠোর কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণে আইয়ুব খানের শাসন বাঙালিদের দেয়ালের দিকে ঠেলে দেয়। গোটা শাসনকালই প্রতিবাদের আগুনে ধিকি ধিকি জ¦লতে জ¦লতে ১৯৬৯ সালে সরাসরি আইয়ুব খানের মুখের ওপর বিস্ফোরিত হয়। ততদিনে সাবেক পূর্ব পাকিস্তানে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ উল্লেখযোগ্য প্রভাবশালী শক্তিতে পরিণত হয়ে ওঠে। বাঙালিদের অংশগ্রহণের একটি ভুয়া প্রলেপ হিসেবে কেন্দ্রীয় সরকারের ক’জনকে যোগ দেয়ানো হয়, কিন্তু তাদের কোনো জনসমর্থন ছিল না। আইয়ুব সরকারের আমলে যে ১৬ জন পূর্ব পাকিস্তানি মন্ত্রী হিসেবে সেবা দিয়েছেন তাদের ৪ জন আমলা আর একজন সাংবাদিক (ডন পত্রিকার সম্পাদক আলতাফ হোসেন)। বাকি ১১ জন মুসলিম লীগের মধ্য-সারির নেতা, যাদের ৮ জন ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে হেরেছেন। প্রাপ্তবয়স্কের ভোটে এটিই পূর্ব পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত একমাত্র নির্বাচন। মোনায়েম খান, যিনি সাত বছর পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের পদ ধরে রেখেছিলেন, ১৯৫৪ সালে নির্বাচনে কেবল হারেননি, তিনি তার নিরাপত্তা জামানতও বাজেয়াপ্ত হতে দেখেছেন। ২০০২ সালের ৩১ জুলাই সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধের পরিদর্শন বইতে সফররত পাকিস্তানি প্রেসিডেন্ট জেনারেল পারভেজ মোশাররফ লিখেছেন, সেই দুর্ভাগ্যজনক সময়ে যে বাড়াবাড়ি করা হয়েছে তার জন্য অনুতাপ করতে হয়। ১৯৬৯-এ ইয়াহিয়া খান রাষ্ট্র ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেন। শনাক্ত সব ‘ফল্ট লাইনে’ দেশ কার্যত দ্বিধাবিভক্ত। ততদিনে দেশের দুই অংশের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক পর্যায়ে বিভাজন হয়েই গেছে। দেশের সামরিক ক্ষমতার দুর্গ পাঞ্জাব ও সিন্ধু তখন ভুট্টোর দখলে। পাকিস্তানের আমলা প্রশাসনের বদ্ধমূল ধারণা বড় ডান্ডার স্বাদ পেলে বাঙালি বাবু ঠাণ্ডা হয়ে যাবে। ইয়াহিয়া রাজত্বের বেসামরিক আমলা-সেবক তথ্য সচিব রোয়েদাদ খান জেনারেলদের পরামর্শ দিয়েছেন তারা যেন বাঙালিদের মনে আল্লাহর ভয় ঢুকিয়ে দেন; বাঙালি জাতির রক্তশুদ্ধি ও বাংলা হরফ আরবিতে চালু করার পরামর্শ তারই। বাঙালি সৈন্য, পুলিশ, কূটনীতিক, বৈমানিক যখন দলে দলে পাকিস্তানের প্রতি আনুগত্য অস্বীকার করে চলে যাচ্ছে সরকারের সদস্যরা তখন রাষ্ট্রদূতদের আশ্বস্ত করে যাচ্ছেন- সবকিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, বাঙালিদেরও অধিকাংশই, আমাদের সঙ্গে (মেজর জেনারেল গোলাম ওমর, তথ্য সচিব রোয়েদাদ খান এবং পররাষ্ট্র সচিব সুলতান মাহমুদ তেহরান ও জেনেভায় রাষ্ট্রদূতদের আশ্বস্ত করেন)। তারা এ ধরনের আশ্বাস তখনো দিয়ে চলেছেন যখন ঢাকা রেডিও স্টেশনে কাজ করার মতো কোনো বাঙালি আর পাওয়া যাচ্ছে না এবং নিয়তির এমনই মোচড় জেনেভাতে মানবাধিকার সম্মেলনে যোগ দিতে আসা পাকিস্তানি প্রতিনিধি (আবু সায়ীদ চৌধুরী) পাকিস্তানের প্রতি আনুগত্য প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এই চিন্তা প্রক্রিয়া কেবল ওপর মহলে সীমাবদ্ধ ছিল না; সাধারণ সৈনিকের মনেও সবকিছুর উপসংহার হচ্ছে- বাঙালি বিশ্বাসঘাতক, বিশ্বাসঘাতকের সঙ্গে কী করণীয় তা তো পরিষ্কার। বিশ্বাসঘাতকের সঙ্গে তো কেউ আর সমঝোতা করে না। তাদের ধ্বংসযজ্ঞের হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে হলে আগে শেষ করতে হবে বিশ্বাসঘাতকদের। একজন পশতু ভাষাভাষী অশ্বারোহী অফিসার তার মনের কথা খুলে বলল। ১৯৭১ সালে এক কথোপকথনে জানাল, বাঙালিরা এত ভীতু যে, প্রথম গুলির আওয়াজেই সব পালিয়ে যাবে। খুব আস্থার সঙ্গে বলল, আর্মার্ড রেজিমেন্ট বাংলাকে কী করতে পারে জানো? মাখনের মধ্যে যেভাবে ছুরি চলে বাঙালি (তার ভাষায় বিঙ্গো) জনগণের মধ্য দিয়েও একইভাবে চলবে। ১৯৭১-এর মার্চে সামরিক অভিযান শুরু হলে সর্বস্তরের অফিসার যেভাবে তাদের কাছে যুক্তিযুক্ত মনে হলো সেভাবেই অপারেশনের যৌক্তিকতা দাঁড় করাল। সাংবাদিক এন্থনি মাসকারেনহাসকে ১৬ ডিভিশনের সদর দপ্তরে বলা হয়েছে, ‘বিচ্ছিন্নতার সব হুমকি থেকে পূর্ব পাকিস্তানকে চিরতরে মুক্ত করতে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, যদি তাতে ২০ লাখ লোককে হত্যা করা হয় এবং প্রদেশটিকে ৩০ বছর উপনিবেশ হিসেবে রাখতে হয় তবুও।’ কুমিল্লায় নবম ডিভিশনের সদর দপ্তরে মেজর বশির সামরিক অভিযানকে যথার্থ কার্যক্রম মনে করে জানালেন, বাঙালি মুসলমানরা ‘অন্তরে হিন্দু’, আর এটা আসলে খাঁটি ও ভেজালের লড়াই। তার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা কর্নেল নাইম বেসামরিক হিন্দু নাগরিক হত্যার যৌক্তিকীকরণ করলেন এই বলে, হিন্দুরা বাঙালিদের ব্যবসা ও সংস্কৃতি নিয়ে নিচ্ছে। খুলনায় রয়টারের মরিস কুইনট্যান্সকে এক জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তা বললেন, ‘এই জায়গায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে আমার পাঁচ দিন সময় লেগেছে। সামনে যারা পড়েছে সবাইকে আমরা হত্যা করেছি। মৃতদেহ গোনার পরোয়া আমরা করিনি।’ মার্চ অপারেশন নিয়ে ক্যাপ্টেন চৌধুরীর মন্তব্য, বাঙালিদের এবার ঠিকমতো ধরে উপযুক্ত শিক্ষা দেয়া হয়েছে, অন্তত এক প্রজন্মের শিক্ষা। এই মূল্যায়নের সঙ্গে একমত প্রকাশ করে মেজর বশির মন্তব্য করলেন, “তারা একমাত্র ‘শক্তির ভাষা’কে ভয় পায়”, ইতিহাস তাই বলে। ১৯৭১-এর মার্চ-অপারেশনে বহু সংখ্যক বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়। পাকিস্তানের সুসংগঠিত সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে না পারায় বাঙালিদের ক্রোধ গিয়ে পড়ে তাদের মাঝে বসবাস করা অবাঙালি সম্প্রদায়ের ওপর।… বাঙালিদের পক্ষে কেউ কেউ পাকিস্তানি নৃশংসতার অতিরঞ্জিত বিবরণ দিয়েছে, আবার পাকিস্তানের পক্ষে তা সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করা হয়েছে। সব মিলিয়ে একটি অস্পষ্টতার সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রমাণ মিলছে, পরিকল্পনা করে পদ্ধতিগতভাবে বেসামরিক নাগরিকদের, বিশেষ করে শিক্ষিত এলিট ও হিন্দুদের হত্যা করা হয়েছে। নিয়াজি পূর্ব পাকিস্তানের দায়িত্বগ্রহণ করার পরই ১০০ ফর্মেশনে যে গোপন বার্তা পাঠান তাতে বলা হয়েছে, আমার আগমনের পর আমার কাছে অসংখ্য প্রতিবেদন এসেছে, যাতে উল্লেখ করা হয়েছে যেসব এলাকা রাষ্ট্রবিরোধীদের হাত থেকে মুক্ত করা হয়েছে সেখানে সেনাসদস্যরা লুট, অগ্নিসংযোগ এবং নির্বিচার ও অকারণ হত্যাকাণ্ড প্রশ্রয় দিচ্ছে। শেষে আমি ধর্ষণের খবরও পেয়েছি।… বলা হচ্ছে, লুটের মাল পশ্চিম পাকিস্তানে প্রত্যাবর্তনকারী পরিবারের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। একজন সাবেক ব্রিগেডিয়ার বলেছেন, বাঙালি নিধনের প্রধান স্থপতি ফরমান আলী এবং তিনি হিন্দু বস্তিতে হত্যাকাণ্ড চালানোর সঙ্গে সরাসরি জড়িত। নিয়াজি স্বীকার করেছেন, টিক্কা খান ‘পোড়ামাটি নীতি’ অনুসরণ করেছেন এবং তিনি বলেছেন, ‘আমি কেবল মাটি চাই, মানুষ চাই না।’ ঢাকায় থেকে তার কথাই অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়ন করেছেন মেজর জেনারেল ফরমান এবং ব্রিগেডিয়ার জেহানজেব আরবাব। তিনি স্বীকার করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের বিরুদ্ধে ট্যাংক ও মর্টার ব্যবহার করা হয়েছে এবং আরবাবের নেতৃত্বে সপ্তম ব্রিগেড কেবল মানুষই হত্যা করেনি, ব্যাংক লুটসহ বিভিন্ন স্থানে লুটপাটও করেছে। নিহতের সংখ্যা নিয়ে বিরোধ থাকতে পারে কিন্তু প্রকৃত সত্য হচ্ছে ২৫ মার্চের সেনা অপারেশনে বহুসংখ্যক মানুষকে হত্যা করা হয়েছে এবং বহু ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে। এই উপসংহারে পৌঁছার মতো বহু তথ্য ভারতীয় ও পাকিস্তানি উভয় দিকেই রয়েছে। কর্নেল রিয়াজ জাফরি লিখেছেন : আর একবার ইস্টার্ন কমান্ডের জিওসি জেনারেল আমীর আবদুল্লাহ খান নিয়াজি ওরফে টাইগার নিয়াজি, ১৯৭১-এর অক্টোবরে হেডকোয়ার্টার্স থেকে আগত জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের ব্রিফিং দেয়ার সময় কেউ যেন পূর্ব পাকিস্তানের ভয়ানক চিত্র তুলে ধরে কিংবা আরো ট্রুপস চেয়ে তাদের নিরুৎসাহিত না করেন সেই নির্দেশনা দিলেন। তিনি নিজে বললেন, তারা যদি আরো বেশি সৈন্য পাঠায় তা আনন্দের ব্যাপার, যদি না পাঠায়, যত কম তত ভালো। আমাদের বেলায় প্রেসিডেন্ট নিক্সন যদিও কিছু একটা করার জন্য কিসিঞ্জারকে আদেশ দিয়েছেন, সপ্তম নৌবহর বঙ্গোপসাগর দিয়ে যাওয়ার সময় রেডিওতে প্রথাগত সৌজন্য-শুভেচ্ছাও দেয়নি কিংবা তিনবার সৌজন্য ভেঁপুও বাজায়নি। আমরা চীনের সঙ্গে একটি জরুরি রেডিও সংযোগ স্থাপনের পর চীন আমাদের কীভাবে সাহায্য করতে পারে তার বহু বার্তা পাঠিয়েছে, যার সাক্ষী আমি নিজে। কিন্তু রাওয়ালপিন্ডিতে মদের ঘোরে থাকা প্রেসিডেন্টের সচিবালয় থেকে জবাব দেয়া হয়নি। আমরা যে বার্তা পেতে পারি তা হচ্ছে ‘অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন।’ চীনের সঙ্গে বন্ধুত্বের ওপর আমাদের এতই আস্থা ছিল যে যখন নারায়ণগঞ্জে প্যারাসুটে ভারতীয় সৈন্য নামছিল, অনেকেই ভেবেছিল চীনারা এসে পড়েছে। আমাদের পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের ভয় ছিল ভারত পূর্বাঞ্চলের ভূমি দখল করে নিয়ে মুক্তিবাহিনীকে দেবে এবং মুক্তিবাহিনী সেখানে পতাকা উড়িয়ে ঘোষণা করবে এটা বাংলাদেশ এবং ভারত তাৎক্ষণিকভাবে স্বীকৃতি দেবে। এভাবে বাংলাদেশের জন্ম হবে। আমাদের সেনাবাহিনীর ছোট ছোট দল সীমান্তে মোতায়েন হলো, ধীরে ধীরে তারা দুর্বল হয়ে পড়ল, কারণ রসদের মজুত নেই, দ্বিতীয় প্রতিরক্ষা ব্যূহ নেই, কোনো গভীরতা নেই। সামনে শত্রæ (ভারতীয়), পেছনে শত্রæ (মুক্তিবাহিনী)। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কর্তারা কখনো অনুধাবন করেনি ভূখণ্ড নয়, রাজধানী রক্ষা করাই সবচেয়ে বেশি জরুরি। এটা হওয়ার কথা ওয়ারশ, প্যারিস, মস্কো, বার্লিন- আমাদের বেলায় ঢাকা যতক্ষণ না শত্রæর অধিকারে যাচ্ছে, দেশের পতন ঘটবে না। তারা যদি সব সৈন্য ঢাকায় নিয়ে এসে, ঢাকার জন্য প্রতিরক্ষা দুর্গ তৈরি করত, তিন মাস তারা যুদ্ধ করতে পারত; পূর্ব পাকিস্তান কাহিনীটা তাহলে ভিন্ন হতো। আমরা তারপরও বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঠেকিয়ে রাখতে পারতাম না।

ড. এম এ মোমেন : সাবেক সরকারি চাকুরে, নন-ফিকশন ও কলাম লেখক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App