×

মুক্তচিন্তা

শিশুদের প্রশ্ন করার সুযোগ দিন

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০২২, ১২:১৬ এএম

শিশুদের প্রশ্ন করার সুযোগ দিন

শিশুদের প্রশ্ন করার প্রবণতা একজন শিশুর পরিপক্বতাকে নির্দেশ করে। অথচ শিশুদের প্রশ্নে আমরা অনেক সময় প্রচণ্ড বিরক্ত হই। শিশুদের বেশি কথা বলাটাকে অনেক সময় বাচাল বলতেও দ্বিধা করি না। কিন্তু তাদের বেশি কথা বলা ও তাদের কোনো কিছুর বিষয়ে জানতে চাওয়ার আগ্রহটা তাদের ভবিষ্যৎ জীবনে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। ইউনিসেফের তথ্যমতে মানুষের দ্রুততম বিকাশ হয় শৈশবের শুরুতে। জন্মের পর থেকে ৮ বছর বয়স পর্যন্ত থাকে বিকাশের এই পর্ব। ছয় মাসের মধ্যেই মানুষের মস্তিষ্কের অর্ধেক গঠিত হয়ে যায় এবং ৮ বছরের মধ্যে তৈরি হয় ৯০ শতাংশ। শিশুর বুদ্ধিবৃত্তি, আবেগ, সামাজিক যোগাযোগ ও শারীরিক সম্ভাবনা বিকাশের জন্য এই পর্যায় ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়টাতেই শিশুরা তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার প্রথম ধাপ শুরু করে। তারা তাদের আশপাশের ও পরিবেশের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে ওঠে আর এই নিয়ে তারা তাদের অভিভাবকদের ও পরিচিতদের বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করতে শুরু করে এবং সেসব প্রশ্নের সুন্দর উত্তর আশা করে। ইতিবাচকভাবে তার প্রশ্নগুলো যেন দেখা হয় শিশুরা নিশ্চয় সেই প্রত্যাশাও করতে পারে। কিন্তু অধিকাংশ সময় শিশুরা তাদের প্রশ্নের মনোপুত উত্তর পায় না। এ সময় পারিবারিক ও সামাজিকভাবে শিশুরা যে ধরনের সমর্থন পাবে সেভাবেই গড়ে উঠবে। সাধারণত শিশুদের কিছু প্রশ্ন খানিকটা অপরিপক্ব, কিছু প্রশ্ন বিব্রতকর, আর কিছু প্রশ্নের উত্তর আমরা বড়রাও জানি না। তাই তাদের প্রশ্নের উত্তরে আমরা বলি তুমি বেশি কথা বলো, কখনো বলি এই বয়সে এত জানা ভালো নই, কখনো বলি বড় হলে বুঝবে আবার কখনো ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দিই। কিন্তু এর ফল কতটা বাস্তবসম্মত? অনেক সময়েই শিশুদের প্রশ্নের উত্তরে তাদের ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দিই বটে কিন্তু তার প্রভাব চলতে থাকে দিনের পর দিন বছরের পর বছর। শিশুর প্রশ্নে নিরুত্তর থেকে তাকে দমিয়ে দেয়ার অর্থ হলো তার জানবার প্রচণ্ড আগ্রহকে চিরতরে দমিয়ে দেয়ার শামিল। শিশুদের মনে একটা বিষয়ই তখন ঘুরপাক খায় কোনো বিষয় বুঝি আর না বুঝি কোনো প্রশ্ন করা যাবে না, এতে বকুনি খেতে হতে পারে। অপমানিত বা অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়তে হতে পারে। আমাদের সমাজে এই ধারা পরিবার থেকে শুরু করে স্কুল বা প্রাইভেট টিউটর সবখানেই এই সংস্কৃতির প্রচলন আছে। কিন্তু আমাদের জানা উচিত শিশুদের জানবার আগ্রহই তাকে নতুন নতুন বিষয় বিষয়ে শিখতে আগ্রহী করে তুলতে পারে। তার প্রশ্নের সহসায় উত্তরে তার ভেতরের সংকোচ, ভীতি, লজ্জা দূর করে আত্মপ্রত্যায়ী হয়ে বেড়ে উঠতে সহায়তা করে। সেই সঙ্গে শিশুরা বড়দের কাছ থেকে সৌজন্যমূলক আচরণ না পেলে তারা একাকিত্ব অনুভবের পাশাপাশি খেলাধুলা বা অনলাইন গেমে আসক্তির দিকে ঝুঁকে পড়তে পারে। তাই সন্তানের প্রথম বিদ্যালয় যেহেতু তার বাড়ি ও পরিবার এবং প্রথম শিক্ষক যেহেতু তার বাবা-মা, তাই পরিবার থেকেই শিশুরা যাতে প্রশ্ন করতে আগ্রহী হয়ে ওঠে সে ব্যাপারে উৎসাহ দিতে হবে। শিশুদের প্রশ্ন করে উত্তর চাওয়ার পাশাপাশি শিশুরা যাতে সব সময় প্রশ্ন করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে সে দিকে নজর দিতে হবে।

নুরুন্নবী খোকন : সাহিত্যিক ও সমাজকর্মী, গাংনী, মেহেরপুর। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App