×

রাজনীতি

১০ ডিসেম্বর ঢাকায় সমাবেশ ‘হবেই’

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২২, ০৮:৪২ পিএম

১০ ডিসেম্বর ঢাকায় সমাবেশ ‘হবেই’

ছবি: ভোরের কাগজ

পুলিশের অনুমিত পাওয়া নিয়ে টানাপোড়নের মধ্যই ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় সমাবেশ ‘হবেই’ উল্লেখ করে এই ব্যাপারে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে না থাকার জন্য দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) বিকালে বিএনপির উদ্যোগে গুলশানে হোটেল লেক শোরে ‘বয়োলেন্স এন্ড পলিটিক্স অব ব্লেমিং’ শীর্ষক এই গোল টেবিল আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন। এতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ডা. সাখাওয়াত হোসেন সায়ন্থ। অনুষ্ঠানে বর্তমান সরকারের আমলে সন্ত্রাসের বিভিন্ন ঘটনার ওপর একটি তথ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ১০ ডিসেম্বর নিয়ে কোনো দ্বিধা রাখবেন না মনে। ১০ ডিসেম্বর অবশ্যই ঢাকায় সমাবেশ হবেই। এই সমাবেশ থেকে নতুন স্বপ্ন দেখবে মানুষ, এই সমাবেশ থেকে মানুষ নতুন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আরও তীব্রভাবে নামবে এবং ভয়াবহ যে আমাদের ওপর দানব যারা চেপে বসে আছে তাকে পরাজিত করে জনগণের সরকার যেন প্রতিষ্ঠিত হয় সেই কাজ তারা করবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা খুব পরিষ্কার করে বলেছি যে, আমরা এই সরকারের পতন চাই, আমরা সংসদ বিলুপ্ত চাই, আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর চাই, আমরা নতুন একটি নির্বাচন কমিশনের মধ্য দিয়ে একটা অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাই, যা জাতীয় আন্তর্জাতিকভাবে সকলে গ্রহণ করবে, সেই নির্বাচন আমরা চাই। আমাদের নেতা তারেক সাহেব আগেই বলেছেন, আমরা আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সকল দলগুলোকে নিয়ে আমরা জাতীয় সরকার গঠন করব, যে জাতীয় সরকার আমাদের রাষ্ট্রকে নতুন করে সমস্যা চিহ্নিত করে সাজাবে। আমরা আজকে সফলতার আশা নিয়ে শেষ করতে চাই। মির্জা ফখরুল বলেন, জনগণ যখন স্বতস্ফূর্তভাবে তাদের দাবি নিয়ে মাঠে নামছে, তাকে বন্ধ করার জন্য সরকার হীন চক্রান্ত আবার শুরু করেছে। আমরা ইতিমধ্যে পত্র-পত্রিকায় দেখেছি, বিভিন্নভাবে খবরও পেয়েছি যে, প্রায় ২০০টা নাকি বাস রেডি করা হয়েছে পুঁড়িয়ে দেয়ার জন্য। এটা অসমর্থিত কিছু সূত্র থেকে পাওয়া খবর।

আমরা শুনেছি ইতিমধ্যে কিছু কিছু লোককে, ইতিমধ্যে কিছু আলামতও আমরা পে্য়েছি যে, ছাত্রলীগ নামধারী, যু্বলীগ নামধারী কিছু সন্ত্রাসীকে প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে, থানায় থানায় নামিয়ে দিয়ে সেখানে তারা সন্ত্রাস প্রতিরোধ করবে। আমরা তখন থেকে এ ব্যাপারে সচেতন হয়েছি, সজাগ হয়েছি।। যে কারণে আজকে এই সেমিনারটি অনুষ্ঠান করা হয়েছে আমাদের সুধী সমাজকে, সুশীল সমাজকে, রাজনৈতিক দলগুলো এবং কুটনৈতিক মিশনের সদস্যবৃন্দকে জানাতে চাই যে, সরকার আবার সেই পুরনো খেলা, সেই উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর জন্য আবার কাজ শুরু করেছে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের মানুষ এখন জেগে উঠেছে। একটা বিখ্যাত গান আছে যে, গানটা আপনারা অনেকে শুনেছেন যে গানটাতে বলা হচ্ছে যে, ‘রাইজ আপ স্ট্যান্ড আপ’। এখন উঠে দাঁড়াতে হবে এবং সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। এই সরকার নির্বাচিত সরকার নয়, জনগণের ম্যান্ডেট এদের কাছে নেই। এরা ১৫টি বছর ধরে মানুষের ওপর নির্যাতনের স্টিম রোলার চালিয়ে গেছে। আমাদের ৬০০ নেতাকর্মীকে গুম করে দিয়েছে….। মানুষ আজকে এই ভয়াবহ দানব থেকে মুক্তি চায়। সরকার বিভিন্ন ব্যাংক থেকে অর্থ পাচার, মেগা প্রজেক্টের নামে অর্থ লুটসহ বিভিন্ন খাতে অর্থনীতিকে ফোকলা করার কথা তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, সরকার চুরি-চামারি করছে এখন জোড়াতালি দেয়ার চেষ্টা করছে। আর সমানে মুখে বলছে যে, পৃথিবী সংকট আছে, বাংলাদেশে সংকট নাই। আজকেও বলেছে যে, বাংলাদেশে খুব চমৎকার একটা অবস্থা বিরাজ করছে অর্থনৈতিক কোনো সংকট নাই। এই যে মিথ্যাচার করে জাতিকে বিভ্রান্ত করা, জাতিকে সবসময় একটা অন্ধকারের মধ্যে রেখে দেয়া এর একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে তাদের শাসনকে আরও স্থায়ী করতে চায়, স্থায়ী ব্যবস্থা করতে চায়।

এ জন্য এর বিরুদ্ধে আমরা মানুষকে সঙ্গে নিয়ে দাঁড়িয়েছি। মানুষ আমাদের চেয়ে আগে আছে- এটা অত্যন্ত সত্য কথা। যে মানুষটি সাঁতরে নদী পার হয়ে সমাবেশে আসে, যে বরিশালে তিন খোলা আকাশে নিয়ে থেকে সমাবেশ উপস্থিত হয়ে সাংবাদিকদের বলে যে, আমার বাবা দুইটা ছেলে-মেয়ে ঠিক মতো খেতে দিতে পারি না। ভেবেছি এই খালেদা জিয়ার এই সমাবেশে এসে যদি কোনো পরিবর্তন হয়। মরিয়ম বেগমকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেছিলো আপনি কি বিশ্বাস করেন পরিবর্তন হবে। তিনি বলেছেন, জানি না আল্লাহ বলতে পারেন তবে চেষ্টা তো করতে হয়। আমরা বিশ্বাস করি মানুষ যেভাবে জেগে উঠেছে অবশ্যই তারা সফল হবে।

রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশ্যে ফখরুল বলেন, আসুন এদেশের স্বার্থে পরিবর্তন নিয়ে এসে এই রাষ্ট্রকে সত্যিকার অর্থেই আমরা যে কারণে ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করেছিলাম সেই লক্ষ্যে আমরা একটা বাসযোগ্য রাষ্ট্র তৈরি করতে পারে সেজন্য ঐক্যবদ্ধ হই। বিএনপি মহাসচিবের সভাপতিত্বে ও দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদ এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির সদস্য ফারজানা শারমিন পুতুলের যৌথ সঞ্চালনায় এই গোল টেবিল আলোচনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, শাহজাহান ওমর, জয়নাল আবেদীন, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, গণফোরামের অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, শিক্ষা্বিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, অধ্যাপক আফম ইউসুফ হায়দার, অধ্যাপক তাজমেরী এস ইসলাম এবং সাবেক রাষ্ট্রদূত সিরাজুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, ইরান এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘের কুটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন। তবে তারা কেউ বক্তব্য রাখেননি। গোল টেবিলের এই আলোচনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, আবদুল্লাহ আল নোমান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বরকত উল্লাহ বুলু, আবদুল আউয়াল মিন্টু, মীর নাসির, নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী, আবদুস সালাম, জয়নাল আবেদীন ফারুক, আবদুল কাইয়ুম, ইসমাইল জবিহউল্লাহ, অধ্যাপক শাহিদা রফিক, বিজন কান্তি সরকার, এনামুল হক চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা মজিবুর রহমান সারোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, আসাদুজ্জামান, জহির উদ্দিন স্বপন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, ফাহিমা নাসরিন মুন্নী, কাদের গনি চৌধুরী, তাবিথ আউয়াল, মীর হেলাল, শাম্মী আখতার, চৌধুরী নায়াবে ইউসুফ, তাইফুল ইসলাম টিপু, শায়রুল কবির খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ফারুক রহমান, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির খন্দকার লুতফর রহমান, এসএম শাহাদাত, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা আবুল করিম খান, মুসলিম লীগের শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, এনডিপির আবু তাহের, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, ডিএলের সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, পিপলস লীগ সৈয়দ মাহবুব হোসেন, ন্যাপ-ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, ইসলামিক পার্টির আবুল কাশেম, বাংলাদেশ ন্যাপের এমএন শাওন সালেহিন প্রমুখ নেতারাও ছিলেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App