×

জাতীয়

রাজপথে থাকবে বিএনপির সমমনারাও

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২২, ০৮:৫১ এএম

রাজপথে থাকবে বিএনপির সমমনারাও

ফাইল ছবি

আসতে পারে যুগপৎ আন্দোলনের রূপরেখা
১০ ডিসেম্বরকে টার্নিং পয়েন্ট ধরে সরকারকে চাপে ফেলতে এবার আটঘাট বেঁধে মাঠে নামছে বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট। ডান, বাম ও মধ্যপন্থি বেশ কটি সমমনা রাজনৈতিক দলও বিএনপির সমাবেশের দিন মাঠে থাকবে। এ লক্ষ্যে তাদের প্রস্তুতি শেষ। বিএনপির পক্ষ থেকে ‘গ্রিন সিগন্যাল’ পেলেই একযোগে মাঠে নামবেন তারা। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বিএনপির প্রতি সংহতি প্রকাশ করা এ দলগুলোর প্রত্যাশা- ঐদিন যুগপৎ আন্দোলনের সূত্রপাত হবে এবং মুষ্টিবদ্ধ আন্দোলনেই সরকারের পতন হবে। সমমনা দলের নেতারা জানান, ১০ ডিসেম্বর বিএনপির গণসমাবেশ উপলক্ষে যুগপৎ আন্দোলনের লক্ষ্যে একযোগে রাজপথে সরব থাকবে তারা। সমাবেশ মঞ্চে না থাকলেও রাজধানীর প্রতিটি স্পটে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকবেন নেতাকর্মীরা। সরকারের পক্ষ থেকে বাঁধা আসলে প্রতিহত করার সব ধরনের কৌশলও এঁটে রাখা হয়েছে। ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ থেকে একটি যুগপৎ আন্দালনের বিষয়ে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা প্রত্যাশা করছে সমমনা দলগুলো। তাদের মতে, সরকার পতনের দাবিতে ঐক্যবদ্ধভাবে সব বিরোধীদল একসঙ্গে রাজপথে থাকলে মানুষের আস্থা বাড়বে। ছোট দলের বড় নেতাদের প্রত্যাশা- ১০ ডিসেম্বরের মহাসমাবেশ থেকে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি সরকারকে শক্ত ‘আল্টিমেটাম’ দেবে। জানতে চাইলে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না ভোরের কাগজকে বলেন, ১০ ডিসেম্বর বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে কি হবে, এখনো কিছুই বলা যাচ্ছে না। পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে। তবে যুগপৎ আন্দোলনের রূপরেখা ঘোষণার আলোচনা চলছে। তেমন হলে আমরা যে যার জায়গা থেকে ঘোষণা দিয়ে নেমে পড়ব। তবে ঐদিন নেতাকর্মীদের মাঠে থাকার নির্দেশ এখনো দেইনি। এ বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করে করণীয় ঠিক করব। সূত্র জানায়, যুগপৎ আন্দোলন দেশের সব রাজনৈতিক দলের জন্য উন্মুক্ত থাকলেও কৌশলগত কারণে আপাতত ফ্রন্টলাইনে থাকছে না জামায়াত। তবে মাঠে থাকবে দলটির নেতাকর্মীরা। কারণ, বাংলাদেশের নির্বাচনের বিষয়ে পশ্চিমা বিশ্ব সিরিয়াসলি কনসার্ন। সরাসরি জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপির কোনো পদক্ষেপ তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। তাছাড়া ঐক্যজোটের নেতাদেরও তুমুল আপত্তি রয়েছে জামায়াত প্রশ্নে। এজন্য দূরে থেকেই কৌশলে মিত্র বিএনপিকে সহায়তা করবে জামায়াত। ১০ ডিসেম্বর পল্টনের বায়তুল মোকাররম এলাকা থেকে শুরু করে প্রধান পয়েন্টগুলোতে ছদ্মবেশে পাহারায় থাকবে জামায়াত ও হেফাজতের নেতাকর্মীরা। জামায়াতকে বোঝানো হয়েছে- বিএনপির নেতাকর্মীদের চেয়ে জামায়াতের কর্মীরা বেশি কোণঠাসা। তাই এবার দল ক্ষমতায় যেতে না পারলে তাদের কোনো অস্তিত্বই থাকবে না। অন্যদিকে, এবার বিএনপি ক্ষমতায় গেলে জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ না করার বিষয়ে প্রশ্ন করারও কারও সুযোগ থাকবে না। মিত্রদের সবাই নতুন করে জোটবদ্ধ হওয়ায় বাধা থাকবে না। তাছাড়া আলাদা প্ল্যাটফর্মে জামায়াত যদি অন্য ইসলামি দলগুলোকে নিয়ে আন্দোলন করে সেক্ষেত্রে কারো কিছু বলার থাকবে না। জামায়াতের একটি শক্ত ভিত্তি তৈরি হবে। গণতান্ত্রিক বিশ্বেও নির্দ্বিধায় তাদের পার্ট-প্লে করবে। সব বিবেচনা করে বিএনপির এসব বক্তব্যে ‘অনাপত্তি’ দিয়েছে জামায়াত। সূত্র জানায়, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ও জোট সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায় গত ২ মাস ধরে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন জোট নেতাদের সঙ্গে। প্রতিটি দলকে নিজ-নিজ শক্তির ভিত্তিতে সরকারবিরোধী কর্মসূচি প্রণয়নের পরামর্শ দিয়েছে বিএনপি। তবে একই লক্ষ্য অর্জনে তারা কর্মসূচি আলাদাভাবে পালন করলেও তাতে সমন্বয় থাকবে। জানতে চাইলে স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ভোরের কাগজকে বলেন, ১০ তারিখে যেহেতু বিএনপির একক সমাবেশ, তাই আনুষ্ঠানিকভাবে সমমনা দলের নেতারা মঞ্চে থাকবেন না। তবে সবাই নিজেদের অবস্থান থেকে আমাদের সঙ্গে একাত্ম থাকবেন। জামায়াত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২০ দলীয় জোটে জামায়াত এখনো আছে। তারা তো থাকবেই। বিএনপির নীতিনির্ধারকদের দাবি, সরকার পতনের আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১০ ডিসেম্বর ঘিরে দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। তাই সেদিন একটা চমক দিতে হবে। সে লক্ষ্যে ঢাকার সমাবেশ থেকে যুগপৎ আন্দোলন শুরুর মাধ্যমে রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ করতে চায় বিএনপি। এ লক্ষ্যে রাষ্ট্রের সার্বিক সংস্কারের প্রতিশ্রæতি হিসেবে ২৭ দফা রূপরেখার প্রণয়ন করেছেন বিএনপির নীতি-নির্ধারকরা। আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপি ঢাকার সমাবেশে ১০ দাবি তুলে ধরে ‘সরকারের পদত্যাগের’ দাবিতে এক দফা আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণাা করবে বিএনপি। সূত্রের দাবি- সরকার হটাতে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দুই পর্বের সংলাপে প্রাপ্ত প্রস্তাবগুলোর ভিত্তিতে ১০ দফা তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া দেশ গঠনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ঘোষিত ‘ভিশন-২০৩০’ আলোকে রাষ্ট্র সংস্কারের রূপরেখার খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। এ কাজে বিএনপি সমর্থিত আইনজ্ঞ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং পেশাজীবী নেতারা পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। সূত্র জানায়, ১০ ডিসেম্বর কর্মসূচি ঘোষণার আগে অভিন্ন দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনে রাজি সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সর্বশেষ মতামত লিখিতভাবে নিতে চায় বিএনপি। এজন্য ১০ দফা দাবি আর ২৭ দফার রূপরেখার খসড়া প্রস্তাব দুটির লিখিত কপি বিএনপির ‘অফিসিয়াল প্যাডে’ জোটের নেতাদের কাছে পাঠানো হয়েছিলো। গত রবিার তাদের আপত্তি-অনাপত্তি, সংযোজন বিয়োজন করে দলের প্রধান নেতার সই সমেত জমা দেয়া হয়েছে। আগামী ২/১ দিনের মধ্যেই সব দলের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে চূড়ান্ত করনীয় ঠিক করা হবে। এসব বিষয়গুলো সমন্বয় করছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। বিএনপির নেতাদের চূড়ান্ত প্রত্যয়, এবার রাজপথ থেকে ফিরে পেছনে তাকানোর সুযোগ নেই। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ নির্বাচনের দাবি আদায়ে রাজপথের আন্দোলন ঘরে তুলতে সরকারবিরোধী দলগুলোও বদ্ধপরিকর। আগাম ‘রিহাসসেল’ হিসেবে ইতোমধ্যে তারা কর্মসূচি শুরু করে দিয়েছে। তবে যুগপতের চূড়ান্ত ঘোষণা একমঞ্চে হবে, নাকি আলাদা মঞ্চে হবে এ নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। সূত্র জানায়, প্রথমদিকে যুগপৎ আন্দোলনে রাজি দলগুলোকে ১০ ডিসেম্বর গণসমাবেশ মঞ্চে উঠানোর একটা প্রস্তাব ছিল। কিন্তু বিএনপির নীতিনির্ধারকরা চাচ্ছেন, আন্দোলনের শেষদিকে এক মঞ্চে উঠতে। তার আগে নিজ নিজ অবস্থান থেকে অভিন্ন দাবি ও কর্মসূচিতে দলগুলো সক্রিয় থাকবে। দুয়েক দিনের মধ্যে সব দল বসে যুগপৎ আন্দোলনের ধরন, দফা, রাষ্ট্র সংস্কারের রূপরেখা চূড়ান্ত করবে। জাতীয় ঐক্যের সঙ্গে যুক্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া পরিপূর্ণতা দেয়ার কাজ শেষ পর্যায়ে। সমমনা দলগুলোর সঙ্গে মূল বিষয়ে কোনো দ্বিমত তৈরি হয়নি। এখন এটিকে চূড়ান্ত রূপ দেয়ার কাজ চলছে। গণতন্ত্র পূনরুদ্ধারে ডিসেম্বরে সমমনা দলগুলো বিএনপির সঙ্গে মাঠে থাকবে। ২০ দলীয় জোটের নেতা ও কল্যান পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, ওইদিন আমরা বিএনপির সঙ্গে মঞ্চে থাকছি না, তবে মাঠে থাকছি। বিএনপির পক্ষ থেকে যুপৎ আন্দোলনের ঘোষণা আসবে। এরপরই আমরা যে যেখানে থাকবো সেখান থেকে মাঠে নেমে পড়বো। আমাদের কর্মীরা সেদিন বিভিন্ন স্পটে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকবে। লেবার পার্টির সভাপতি ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, ১০ ডিসেম্বর মহাসবেশে উপস্থিত থাকার আমন্ত্রন এখনো পাইনি। দুয়েকদিনের মধ্যেই জোটপ্রধান আমাদের নিয়ে বসবেন। সেখানে আলোচনা হবে ঐ দিন আমাদের কি ভূমিকা তারা দেখতে চান। তিনি বলে, আমরা সেদিন মঞ্চে থাকি বা না থাকি বিএনপির সব কর্মসূচিতেই আমাদের মৌন সমর্থন রয়েছে। আশা করছি, ঢাকার সমাবেশ তারা সমমনা দলগুলোকে সঙ্গে নিয়েই করবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App