×

আন্তর্জাতিক

রাশিয়ার তেলের দর বেঁধে দেয়ায় প্রভাব

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২২, ০৯:০৩ পিএম

রাশিয়ার তেলের দর বেঁধে দেয়ায় প্রভাব

ফাইল ছবি

গত শুক্রবার জি-৭, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও অস্ট্রেলিয়া যৌথভাবে রাশিয়ার তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ৬০ ডলার বেঁধে দিয়েছে। আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হবে এ সিদ্ধান্ত।

গত মে মাসে সমুদ্রপথে রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল আমদানিতে ইইউ এর দেয়া নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হতে শুরু করেছে। এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে বিশ্বজুড়ে রাশিয়ার তেল সরবরাহে নিযুক্ত জাহাজগুলোর বিমা ও অর্থায়নকারী ইইউর কোম্পানিগুলোও। তবে পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহকৃত রাশিয়ার তেলের ওপর এ নিষেধাজ্ঞা থাকবে না।

পাঁচটি ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা ও তেলের মূল্য বেঁধে দেয়ার প্রভাব নিয়ে একটি বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে আল-জাজিরা।

এতে বলা হয়, ১৯৬৪ সালে চালু হওয়া দ্রুজবা তেল পাইপলাইন দিয়ে জার্মানি, পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র, অস্ট্রিয়াসহ ইউরোপের মধ্য ও পূর্বাঞ্চলীয় অনেক দেশে রাশিয়ার তেল সরবরাহ করা হয়ে থাকে। জার্মানি, পোল্যান্ড ও অস্ট্রিয়া ইতিমধ্যে এ নিষেধাজ্ঞাকে সমর্থন দিয়েছে। চলতি বছরের শেষ নাগাদ রাশিয়া থেকে তেল আমদানি পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়ার অঙ্গীকার করেছে দেশগুলো।

এখনো রাশিয়ার পাইপলাইনে সরবরাহকৃত তেলের ওপর নির্ভরশীল হাঙ্গেরি, চেক প্রজাতন্ত্র, স্লোভাকিয়া ও বুলগেরিয়া। বিকল্প ব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এসব দেশকে সাময়িকভাবে রাশিয়ার কাছ থেকে তেল আমদানি করতে দেয়া হবে। ইউরোপীয় কমিশনের বক্তব্য অনুযায়ী, পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা এসব তেল ইইউভুক্ত দেশ কিংবা ইইউর বাইরের দেশে আবার বিক্রি করা যাবে না।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের তেলবাজারের প্রভাব

ইউক্রেনে রুশ অভিযান শুরুর আগে ২৭ সদস্যের এ জোট রাশিয়ার তেলের ওপর প্রচণ্ড রকমে নির্ভরশীল ছিল। ২০২১ সালে রাশিয়ার কাছ থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন সাত হাজার ৪৮০ কোটি ডলার মূল্যের অপরিশোধিত তেল ও পরিশোধিত জ্বালানি পণ্য আমদানি করেছিল।

আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থার (আইইএ) মতে, রাশিয়া থেকে ইইউ দিনে ২২ লাখ ব্যারেল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল আমদানি করে থাকে। এর মধ্যে পাইপলাইন দিয়ে প্রতিদিন সাত লাখ ব্যারেল তেল সরবরাহ হয়। পাশাপাশি দিনে ১২ লাখ ব্যারেল পরিশোধিত জ্বালানি পণ্যও সরবরাহ করা হয়ে থাকে।

আইইএ আরও বলেছে, প্রতিদিন ১০ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল এবং ১১ লাখ ব্যারেল জ্বালানি পণ্যের জন্য ইইউকে এখন বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে। দ্রুজবায় তেলের পাইপলাইনটি থেকে প্রায় ১০ শতাংশ তেল আমদানি সাময়িকভাবে অব্যাহত থাকবে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্কে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্রাসেলসভিত্তিক আইনজীবী মাৎস কুভেলিয়ার আল-জাজিরার সঙ্গে এ প্রসঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি মনে করেন, রাশিয়ার তেলের ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার কারণে স্বল্প মেয়াদে চাহিদা ও সরবরাহব্যবস্থার ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়বে না।

মাৎস কুভেলিয়ার বলেন, ছয় মাস ধরে এ বিধি নিয়ে আলোচনা চলছে। এর মধ্য দিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো তেল সরবরাহের বিকল্প পথ খুঁজে বের করার মতো যথেষ্ট সময় পেয়েছে।

ইউরোপিয়ান পলিসি সেন্টারের জ্বালানি নীতিমালাবিষয়ক বিশ্লেষক ফিলিপ লসবার্গ একই রকমের কথাই বলেছেন। তিনি মনে করেন, তেল আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়বে তেলের মূল্যের ওপর। তেলের দাম বেড়ে যাবে।

ইইউর অর্থায়ন ও বিমার ওপর নির্ভরশীল তেলের জাহাজগুলোর কী হবে

তেলের দাম বেঁধে দেয়া ও তেল আমদানিতে নিষেধাজ্ঞার কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়নের যে কোম্পানিগুলো সমুদ্রপথে রাশিয়ার তেল তৃতীয় কোনো দেশে পৌঁছে দিতে বিমা ও অর্থায়ন করত, তারাও বাধার মুখে পড়বে।

ইউরোপিয়ান পলিসি সেন্টারের জ্বালানি নীতিমালাবিষয়ক বিশ্লেষক ফিলিপ লসবার্গ মনে করেন, এতে বিশ্বের বাকি দেশগুলোতে অপরিশোধিত তেল ও জ্বালানি পণ্য রপ্তানি অব্যাহত রাখাটা রাশিয়ার জন্য কঠিন হয়ে পড়বে।

রাশিয়ার কী হবে

আইইএ বলছে, সমুদ্রপথে রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানির ওপর ইইউর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলে আগামী বছর রাশিয়ার তেল রপ্তানির পরিমাণ দিনে ১৪ লাখ ব্যারেল কমে যেতে পারে।

বিধির আওতাবহির্ভূত দেশগুলোর ওপর কী প্রভাব পড়বে

ভারত, চীন ও তুরস্কের মতো দেশগুলো রাশিয়ার তেলের ওপর নির্ভরশীল। এসব দেশ মস্কোর কাছ থেকে তেল আমদানি অব্যাহত রাখবে। নয়াদিল্লিভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ফেলো বিবেক মিশ্র আল-জাজিরাকে বলেন, ভারত ও চীনের মতো বড় ক্রেতা দেশগুলোর সঙ্গে রাশিয়া আলোচনা চালাতে পারে এবং মুদ্রা বিনিময় ব্যবস্থা চালু করতে পারে। এর মধ্য দিয়ে ইউরোপ থেকে রাশিয়া যে রাজস্ব পেত, তা পূরণ করা যাবে না ঠিকই, তবে তা মস্কোর অর্থনৈতিক মন্থরতায় কিছুটা হলেও গতি জোগাবে।

আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর কী প্রভাব পড়বে

জ্বালানি রপ্তানিকারক দেশ ও মিত্রদেশগুলো নিয়ে গঠিত জোট ওপেক প্লাস রোববার একটি বৈঠক করেছে। নতুন বিধির কারণে তেলের বাজার যেন নষ্ট না হয়, তা কীভাবে নিশ্চিত করা যাবে, সে ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে।

ইউরোপিয়ান পলিসি সেন্টারের জ্বালানি নীতিমালাবিষয়ক বিশ্লেষক ফিলিপ লসবার্গ মনে করেন, এসব বিধিতে রাশিয়া ছাড়া প্রতিটি তেল উৎপাদনকারী দেশই লাভবান হবে। তার মতে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে রাশিয়াকে শাস্তি দেয়ার জন্যই মূলত এ নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। তবে রাশিয়া যদি আরও ট্যাংকার কেনার মধ্য দিয়ে কিংবা অন্য কোনো কৌশলে আরও বেশি তেল রপ্তানি করে ফেলতে পারে, তবে বাকি বিশ্ব ও তেলের বাজার কী ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখাবে, তা এখন দেখার বিষয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App