×

সম্পাদকীয়

বায়ুদূষণে মৃত্যুঝুঁকি বাড়ছে : এখনই সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২২, ১২:১৮ এএম

বায়ুদূষণ পরিবেশ ও মানব স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বায়ুদূষণের অন্যতম উৎস হচ্ছে ধুলাবালি। নির্মাণকাজের কারণে বাতাসে প্রচুর ধুলা যুক্ত হয়। যানবাহনে ব্যবহƒত জ্বালানিও অন্যতম কারণ। এছাড়া বর্জ্য পোড়ানোর কারণে দূষিত হচ্ছে বাতাস। শিল্প কারখানার ধোঁয়া এবং রাজধানী ঢাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় অনিয়মের কারণে দূষণ কমানো যাচ্ছে না। শহর ও আশপাশের এলাকায় যেখানে-সেখানে ময়লার স্তূপ থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। গত রবিবারে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, উচ্চমাত্রার বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশে বছরে মারা যাচ্ছে প্রায় ৮০ হাজার মানুষ। ২০১৯ সালে দেশে বায়ুদূষণে সর্বোচ্চ ৮৮ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। ২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্বের দ্বিতীয় দূষিত শহর হিসেবে চিহ্নিত হয়। গবেষকদের মতে, দূষণের মাত্রা কমানো গেলে বাংলাদেশের মানুষ আরো ৫ দশমিক ৪ বছর বেশি বাঁচতেন। বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ না করতে পারার কারণে শুধু ঢাকায় বসবাসকারীদের গড় আয়ু কমেছে ৭ দশমিক ৭ বছর। রাজধানী ঢাকায় বায়ুদূষণের মাত্রা আশঙ্কাজনক হারে দিন দিন বেড়েই চলেছে। এতে বসবাসকারী জনগোষ্ঠী মারাত্মক সব রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। কেবল স্বাস্থ্য নয়, জিডিপির ক্ষতিও হচ্ছে ৩.৯-৪.৪ শতাংশ। শ্বাসকষ্ট, কাশি, নিম্ন শ্বাসনালির সংক্রমণ ও বিষণ্নতার ঝুঁকি বাড়ছে মানুষের। এ অবস্থায় বিশ্বব্যাংক ও গবেষকদের পর্যবেক্ষণকে অবশ্যই আমলে নিতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। জনস্বার্থে দূষণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সরকারের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া উচিত। ঢাকা দীর্ঘদিন ধরেই বায়ুদূষণ সমস্যায় জর্জরিত। ঢাকার বাতাসের গুণমান সাধারণত শীতকালে অস্বাস্থ্যকর হয়ে যায় এবং বর্ষাকালে উন্নত হয়। এর আগে গত বছরের ২৩ অক্টোবর ঢাকার বাতাসের গুণমান সূচক (একিউআই) ১৫৯ রেকর্ড করা হয়েছিল। তখন ঢাকাকে বিশ্বের দ্বিতীয় দূষিত শহর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। ঢাকা সিটিতে বায়ুদূষণের বিভিন্ন কারণ রয়েছে। তার মধ্যে তিনটি কারণ প্রধান। যাতে ঢাকাসহ সারাদেশে বায়ুদূষণের মাত্রা বাড়ছে। সেগুলো হলো ইটভাটা, মোটরযানের কালো ধোঁয়া ও যথেচ্ছ নির্মাণকাজ। জানা যায়, ২০১৩ সালে দেশে মোট ইটভাটার সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৯৮৫টি। ২০১৮ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৭ হাজার ৯০০টিতে। এর মধ্যে ঢাকার আশপাশেই রয়েছে ২ হাজার ৮৭টি। প্রতি মুহূর্তে এসব ইটভাটার ধোঁয়ায় বিষাক্ত হয়ে উঠছে ঢাকার বাতাস। শুষ্ক মৌসুমে ৫৮ শতাংশ বায়ুদূষণের পেছনে দায়ী এসব ইটভাটা। গত ৪০ বছরে ঢাকা শহরে সুউচ্চ ভবন ও অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে ৭৫ শতাংশ চাষযোগ্য জমি হারিয়ে গেছে। এছাড়া নন-কমপ্লায়েন্স শিল্প ও অপর্যাপ্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ফলে শহরের বাতাস এবং ভূপৃষ্ঠের পানি দূষিত হচ্ছে। বায়ুদূষণের উপাদানগুলো মূলত ধূলিকণা, সালফার ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড, হাইড্রো কার্বন, কার্বন মনোক্সাইড, সিসা ও অ্যামোনিয়া। অপরিকল্পিতভাবে শিল্পকারখানা স্থাপনে ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে বায়ুদূষণ ক্রমাগত বাড়ছে। ক্ষতিকর উপাদানগুলোর ব্যাপকহারে নিঃসরণ ঘটছে। এ কারণে বিশেষ করে শিশুদের বুদ্ধিমত্তা বিকাশে বিঘœ ঘটা ও স্নায়ুবিক ক্ষতি হতে পারে এবং গর্ভবতী নারীদের গর্ভপাত ও মৃত শিশু প্রসবের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। পরিবেশ দূষণ ও পরিবেশ সংরক্ষণ বর্তমান সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। সুস্থ থাকতে ও বাসযোগ্য পরিবেশ তৈরি করতে হলে বায়ুদূষণ কমানোর বিকল্প নেই। আমাদের সম্মিলিত সচেতনতা ও চেষ্টায় পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ করা অসম্ভব কিছু নয়। পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে পরিবেশ অধিদপ্তরকে সময়োপযোগী কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App