×

সারাদেশ

মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে আপস করে না ভোরের কাগজ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২২, ০৮:৫২ এএম

মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে আপস করে না ভোরের কাগজ

ছবি: ভোরের কাগজ

বিজয়ের মাসে ঐতিহ্যবাহী বাগেরহাটে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের প্রায় সাড়ে ৬০০ কর্মী নিয়ে অনুষ্ঠিত হলো ভোরের কাগজ প্রতিনিধি সম্মেলন-২০২২। গতকাল রবিবার নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে ভোরের কাগজের প্রতিনিধিদের দুদিনব্যাপী এ মিলনমেলা শেষ হয়। সমাপনী অনুষ্ঠান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভোরের কাগজের সাবেক সাংবাদিক ও বর্তমান মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ সদস্য এডভোকেট আমিরুল আলম মিলন। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্যসহ বিশিষ্টজনরা।

তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ধারক হয়ে দীর্ঘ ৩১ বছর পাড়ি দিয়ে ভোরের কাগজের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার ভূয়সী প্রশংসা করেন। সাংবাদিক থেকে ঐতিহ্যবাহী এই পত্রিকার সম্পাদক হওয়া শ্যামল দত্তের গণমাধ্যমে বলিষ্ঠ ভূমিকার কথাও উল্লেখ করেন তারা। পরে বাগেরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ হেলাল ও তার ছেলে বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ তন্ময়সহ আয়োজক এবং উপস্থিত প্রতিনিধিদের ধন্যবাদ জানিয়ে সম্মেলনের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

স্বাগত বক্তব্যে ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, বিজয়ের মাস ডিসেম্বর গৌরব, অহংকার আবার দুঃখের মাস। কারণ এ বিজয় ছিনিয়ে আনতে ৩০ লাখ শহীদ প্রাণ দিয়েছেন। দেশের যে অঞ্চলের মাটিই হাতে নিন সেখানেই রক্ত রয়েছে। কোনো জাতি ৯ মাসের যুদ্ধে এত প্রাণ দেয়নি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও ৫ মিলিয়ন লোক মারা গিয়েছিল। তবে তা হয়েছিল ৭ বছরে। তিনি আরো বলেন, ’৭৫ পরবর্তী মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করে দেয়ার চেষ্টা হয়েছে। তা পুনর্জাগরণ রাখাটা সব সময়ই একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। তবে আমরা তা সব সময় চেষ্টা করে গেছি ও ধারণ করেছি, দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ৬৫০ এর বেশি প্রতিনিধি নিয়ে। আমাদের প্রতিনিধিরা একটি আদর্শে বিশ্বাস করে, তা হলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। যে কোনো প্রশ্নে আপস করলেও বঙ্গবন্ধুসহ এ প্রশ্নে ভোরের কাগজ কখনো আপস করে না, করবেও না।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, আইন পেশায় ৩৬ বছর আমি কাজ করছি। তবে আমি গণমাধ্যমেও কাজ করেছি। বেতনভুক্ত সাংবাদিক ছিলাম। পরে আমি আইন পেশায় এসেছি। আইন পেশায় এলেও গণমাধ্যমের প্রতি আমার মমত্ব রয়েছে। আমি ফ্রিল্যান্সার হিসেবে লিখি। আমার নিজেরও একটি সংবাদপত্র আছে। কখনো কোনো কিছু করলে সুযোগ পেলে শ্যামলদা ছাড়াও অন্য যারা আছেন তাদের সঙ্গে আমি অনেক কিছু শেয়ার করি। এভাবেই আমি নিজেকে একজন গণমাধ্যমকর্মী মনে করি। ভোরের কাগজের একটি মৌলিক চরিত্র রয়েছে। আর তা হলো- মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর জায়গায় তারা কখনো আপস করে না। তথাকথিত নিরপেক্ষ সাজার প্রশ্নে কেউ কেউ মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও অন্য প্রসঙ্গকে বাইপাস করলেও এ কাগজটি তা করে না।

বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা, উন্নয়নের কথা বলার পাশাপাশি অপরাজনীতি এবং দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলার ক্ষেত্রেও ভোরের কাগজ তার স্বকীয়তাকে বিসর্জন দেয়নি। পুরনো সহযোগী হিসেবে আমি ভোরের কাগজের প্রতিনিধিদের বলব, সাংবাদিকতায় আসার মূলমন্ত্র হলো কঠিনেরেই ভালোবাসিলাম। আরো একটা প্রতিপাদ্য আছে, একজন ভালো সাংবাদিকের বন্ধু থাকে না। মফস্বলের সাংবাদিকতা তো আরো কঠিন। তবে আপনাদের একজন সম্পাদক আছেন যিনি সাংবাদিক থেকে সম্পাদক হয়েছেন। এমন সম্পাদকের সংখ্যা খুবই কম। কারণ অনেকেই তদবির বা টাকা দিয়ে পত্রিকা খুলে সম্পাদক হয়ে যান। তবে আমি বলতে পারি, সাংবাদিক থেকে সম্পাদক হওয়া শ্যামল দত্ত আপনাদের দুঃখ বোঝেন। আমি কখনো শুনিনি, কোনো প্রভাবের কারণে ভোরের কাগজের প্রতিনিধিদের চাকরি গেছে। সাংবাদিকতার পরিমণ্ডলের এমন একটি পত্রিকায় যুক্ত আছেন, যার নামই একটি সম্মান।

প্রধানমন্ত্রীকে সাংবাদিকবান্ধব উল্লেখ করে করে মন্ত্রী বলেন, বিশ্বায়নের যুগে তথ্য গোপন রেখে মানুষকে বিভ্রান্ত করার সুযোগ নেই। তথ্যের অবাধ পথ উন্মুক্ত করে দিতে হবে বলে বিশ্বাস করেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশে একটাই চ্যানেল ছিল বিটিভি। যা শুধু সরকারের কথা বলত। সেখানে তিনি ৩১টি টিভির লাইসেন্স দিয়েছেন। শত শত অনলাইন পোর্টাল ও পত্রিকার ডিক্লারেশন দিয়েছেন। কারণ শেখ হাসিনা মনে করেন, গণমাধ্যমের মাধ্যমে সমস্ত তথ্যউপাত্ত সামনে আনা দরকার। তাহলে সরকারকে সচেতন করার পাশাপাশি বিরোধী দলের দোষত্রæটি তুলে ধরা যাবে- ফলে সবাই মিলে কাজ করতে পারব। তবু কিছু জ্ঞানপাপী আবার ডিজিটাল অ্যাক্টের নামে ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করে। দেশ আজ একটি ষড়যন্ত্রের মুখোমুখি। এ ষড়যন্ত্র আরো বিভিন্ন সময় এসেছে। তবে মূল কথা হলো- এদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার থাকলে রাজাকারদের গাড়িতে পতাকা ওড়ে না, হিন্দুদের বাড়িতে হামলা হয় না ও দেশ ছাড়তে হয় না এবং দেশ পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয় না। বরং দেশ সফলতার ধারায় এগিয়ে যায়।

সম্পাদক শ্যামল দত্তের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ এডভোকেট আমিরুল আলম মিলন, সাবেক এমপি মীর শওকত আলি বাদশাহ, বাগেরহাটের কৃতিসন্তান শিক্ষাবিদ প্রফেসর মোজাফফর হোসেন, বাগেরহাটের পুলিশ সুপার কে এম আরিফুল হক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব ও শিক্ষা) মো. হাফিজ আল আসাদ, বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগের নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা হেয়ায়েত উদ্দিন ভুইয়া প্রমুখ।

এর আগে সকাল ১০টার দিকে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে দুদিনব্যাপী ভোরের কাগজ প্রতিনিধি সম্মেলন-২০২২ এর সমাপনী অনুষ্ঠান শুরু হয়। এ সময় দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেয়া ছাড়াও ভালো কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা এই তিন ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠ ৯ প্রতিনিধির হাতে পুরস্কার হিসেবে মোবাইল ফোন ও সনদ তুলে দেন সম্পাদক শ্যামল দত্ত। শ্রেষ্ঠ প্রতিবেদনের জন্যও পুরস্কার দেয়া হয়। উপজেলা পর্যায়ে প্রথম হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি নুর হাসান নাঈম, দ্বিতীয় হন সাভার প্রতিনিধি মো. আজিম উদ্দিন ও বগুড়া দুপচিয়া প্রতিনিধি মো. আজিজুল হক। জেলা পর্যায়ে প্রথম হন কাগজ প্রতিবেদক (বাগেরহাট) মিজানুর রহমান আকন, দ্বিতীয় হন জামালপুর প্রতিনিধি সাইমুম সাব্বির শোভন ও তৃতীয় হন যশোর জেলা প্রতিনিধি আলমগীর কবীর। বিভাগীয় পর্যায়ে প্রথম হন সিলেট ব্যুরো প্রধান ফারুক আহমেদ, দ্বিতীয় হন রাজশাহীর সাঈদুর রহমান ও তৃতীয় হন বরিশালের হারুন অর রশীদ মৃধা। প্রতিবেদনের জন্য জেলা পর্যায়ে নোয়াখালী জেলা প্রতিনিধি মোহাম্মদ সোহেল এবং উপজেলা পর্যায়ে চরফ্যাশন উপজেলা প্রতিনিধি মো. আতিকুর রহমান সোহেব শ্রেষ্ঠ পুরস্কার পান। এছাড়া সফলভাবে বাগেরহাট প্রতিনিধি সম্মেলন-২০২২ আয়োজনের জন্য কাগজ প্রতিবেদক (বাগেরহাট) মিজানুর রহমান আকন ও বাগেরহাট শহর প্রতিনিধি তালুকদার আব্দুল বাকীর হাতে ক্রেস্ট তুলে দেয়া হয়।

এরপর প্রতিনিধিদের উদ্দেশে বিভিন্ন পরামর্শমূলক বক্তব্য দেন মফস্বল বিভাগের ইনচার্জ মাকসুদুল বারী টিপু, প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা ও অর্থ ব্যবস্থাপক মো. আবদুল করিম (সোহাগ), বিজ্ঞাপন ব্যবস্থাপক এস এম এ রাজ্জাক, প্রসাশনিক ব্যবস্থাপক সুজন নন্দী মজুমদার, সার্কুলেশন ইনচার্জ মো. তছলিম চৌধুরী ও আইটি ইনচার্জ মেহেদী হাসান নিয়াজ। সমাপনী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ভোরের কাগজের সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি হেলাল উদ্দিন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App