×

মুক্তচিন্তা

জিপিএ-৫ নিয়ে প্রাসঙ্গিক ভাবনা

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২২, ১২:০৮ এএম

কিছুদিন আগে প্রকাশিত হয়েছে এসএসসি পরীক্ষার ফল। এতে দেখা যায়, সারাদেশে জিপিএ-৫ পাওয়া ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ২ লাখ ৬৯ হাজারেরও বেশি। বলা চলে এবার এসএসসি পরীক্ষায় ছাত্রছাত্রীরা রেকর্ডসংখ্যক জিপিএ-৫ পেয়েছে। ফলাফলের বিচারে এরাই ভালো ছাত্রছাত্রী। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে- এতসংখ্যক জিপিএ-৫ পাওয়া ছাত্রছাত্রী উচ্চশিক্ষার জন্য সবাই তাদের কাক্সিক্ষত কলেজ পাচ্ছে কিনা। পরিসংখ্যানে একেবারেই স্পষ্ট, অপেক্ষাকৃত ভালো কলেজগুলোতে এত বিপুল পরিমাণ জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ছাত্রছাত্রীর আসন সংকুলান হবে না। এতে জিপিএ-৫ পেয়েও অনেকেই সামান্য নম্বরের হেরফেরের কারণে তার কাক্সিক্ষত কলেজে ভর্তি হতে পারবে না। জিপিএ-৫ পেয়েও কোনো ছাত্রছাত্রী তার কাক্সিক্ষত কলেজে ভর্তি হতে না পারলে সে অনেকটাই মিইয়ে পড়ে এবং তার জীবনে একটা ধাক্কা লাগে। আর এই ধাক্কা অনেকেই সামাল দিতে না পারায় পরবর্তী শিক্ষাজীবনে এর প্রভাব পড়ে। এ ধরনের অনেক ছাত্রছাত্রী আছে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েও পরবর্তী জীবনে সে হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে লেখাপড়াই ছেড়ে দিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে পিতা-মাতা, শিক্ষক-শিক্ষিকা আর শিক্ষার্থীর সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই একজন শিক্ষার্থী ভালো ফলাফল করে কিংবা জিপিএ-৫ পায়, পরবর্তী সময়ে কোনো শিক্ষার্থী যখন বাস্তব ক্ষেত্রে দেখতে পায় যে, তার জিপিএ ৫-এর কোনো মূল্যই নেই তখন জিপিএ-৫ তার জন্য একটা বাড়তি বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। এই বিষয়টির একটি সমাধান হচ্ছে ভালো কলেজগুলোতে আসন সংখ্যা ডাবল করা আর একটি সমাধান হচ্ছে জিপিএ পদ্ধতিটাই বাদ দেয়া। জিপিএ পদ্ধতি বাদ দিয়ে একটি সর্বজন গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি শিক্ষাক্ষেত্রে প্রয়োগের মাধ্যমে সব শিক্ষার্থীর ভালো কলেজগুলোতে স্থান করে দেয়া যায় কিনা সে বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করে দেখতে হবে। আমরা জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ছাত্রছাত্রীদের অবশ্যই সমীহ করি; কিন্তু যারা জিপিএ-৫ পায়নি তাদের কোনো অবস্থাতেই অবমূল্যায়ন করি না। তারাও শিক্ষা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এগিয়ে যাক তা মনেপ্রাণে চাই; কিন্তু দেশের এত অধিকসংখ্যক জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ছাত্রছাত্রীর ভিড়ে তাদের প্রাপ্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির মান কেমন হবে তাও প্রশ্ন থেকে যায়। যদি সব ভালো ছাত্রছাত্রী দেশের কথিত সেরা সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তি হয়ে যায় তাহলে জিপিএ-৫ না পাওয়া ছাত্রছাত্রীরা কোথায় ভর্তি হবে? সরকারকে এই বিষয়টি অবশ্যই ভেবে দেখতে হবে। কারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যদি সমতার ভিত্তিতে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা না যায়, তাহলে কিছু কলেজ ভালো ছাত্রছাত্রী ভর্তি হওয়ার কারণে ভালো রেজাল্ট করতে থাকবে আর বাকি কলেজগুলো শুধু পিছিয়েই থাকবে। আমরা চাই দেশের সব কলেজে ভালো ছাত্রছাত্রী তৈরি হোক এবং তারা সবাই উচ্চশিক্ষার জন্য সুযোগ পাক। লাখ লাখ জিপিএ পেয়ে কোনো ছাত্রছাত্রী যাতে দেশের বোঝা হয়ে না থাকে সে বিষয়ে সরকারকে অবশ্যই পদক্ষেপ নিতে হবে। আর যারা জিপিএ-৫ পাচ্ছে তারাও যাতে তাদের শিক্ষার মান বজায় রাখতে পারে সে বিষয়টিও জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ছাত্রছাত্রীদের মনে রাখতে হবে। মূল কথা, দেশে লাখ লাখ জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ছাত্রছাত্রী ভবিষ্যতে সেভাবেই তাদের গড়ে তুলতে হবে। প্রয়োজনবোধে এসব শিক্ষার্থীর মানসিক দৃঢ়তা এবং শক্তি বাড়ানোর জন্য বিশেষ ব্যবস্থার আওতায় আনতে হবে। আমরা প্রত্যাশা করব সরকার লাখ লাখ জিপিএ-৫ পাওয়া ছাত্রছাত্রীর আসন সংখ্যা বাড়িয়ে হলেও ভালো কলেজগুলোতে ভর্তির ব্যবস্থা করবে। আর আমরা আরো প্রত্যাশা করব ভবিষ্যতে জিপিএ-৫ যাতে দেশের জন্য বোঝা হয়ে না দাঁড়ায় এবং জিপিএ-৫ প্রাপ্ত প্রতিজন ছাত্রছাত্রী যাতে ভালো কলেজে ভর্তি হতে পারে সে ব্যবস্থা হবে। রতন কুমার তুরী লেখক ও শিক্ষক, ঢাকা। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App