×

জাতীয়

বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে ইন্দিরা গান্ধীর প্রতি আহ্বান

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২২, ০৯:১৩ এএম

বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে ইন্দিরা গান্ধীর প্রতি আহ্বান

ছবি: ভোরের কাগজ

‘শনিবার, ৪ ডিসেম্বর, একাত্তর। দিনটা শুরু হলো আগেভাগে, ভোর ৩টার দিকে। এয়ারপোর্টের আকাশে পাকিস্তানি উড়োজাহাজ বিধ্বংসী কামানের গোলায় অদ্ভুত আতশবাজি চলছে।

ভারতীয় বিমানবাহিনীর আক্রমণ নাকি গোলন্দাজদের মহড়া, প্রশ্নটি তখনো অমীমাংসিত। কিন্তু সকাল নাগাদ ভারতীয় মিগ নিয়মিত রকেট আক্রমণ চালাতে শুরু করেছে। তখন আপনার মনে জাগতে পারে, ফটোগ্রাফার হলে ভালো ছিল। স্বচ্ছ নীল আকাশে মিগ ডাইভ দিচ্ছে। নিচ থেকে ছোড়া কামানের গোলার সাদা ধোঁয়াও দেখা যাচ্ছে। এমনকি হোটেলের ওপর আকাশে বেশ কটি ফলাফলশূন্য ডগফাইটও দেখা গেল। কয়েকটি ভারতীয় উড়োজাহাজ ভূপতিত হলো। কিন্তু সব পর্যবেক্ষকেরই নিজস্ব হিসাব রয়েছে। টেলিভিশনের একজন বলেছেন, পার্ল হারবারের চেয়ে ভালো করছে’- একাত্তরের ৪ ডিসেম্বরের এই স্মৃতিচারণ দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এশিয়ার সাংবাদিক (পরে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এশিয়ার সম্পাদক ও প্রকাশক) পিটার কানের।

একাত্তরে যুদ্ধ কভার করতে আসা পিটার কান থাকতেন ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে। একাত্তরের তার ডায়েরির পাতায় পাতায় ছিল বাংলাদেশের যুদ্ধগাথা। ১৪ ডিসেম্বর ’৭১ থেকে ধারাবাহিকভাবে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত হয় তার বিখ্যাত ‘ঢাকা ডায়েরি’। যার ফলশ্রæতিতে তার প্রাপ্তির ঝুলিতে যুক্ত হয় পুলিৎজার পুরস্কার।

পিটার কান লিখেন, ‘ঘণ্টায় ঘণ্টায় সারাদিনই আকাশপথে আক্রমণ চলতে লাগল। মাথায় তালপাতা লাগিয়ে অন্যান্য মিশ্রিত লতাগুল্মের ক্যামোফ্লেজ করে রাস্তায় বেরোনো কয়েকটি সামরিক যানবাহন ছাড়া ঢাকা শহরের রাস্তা জনশূন্য হয়ে পড়েছে। রাস্তায় টহল দেয়া পুলিশের মাথায়ও লতাপাতা বেঁধে রাখা হয়েছে। ঢাকার ডিপ্লোমেটিক কোরের ডিন নেপালের কনসাল অফিসে চলে এসেছেন। তিনি জানিয়েছেন, বিরাজমান সংকট নিয়ে পর্যালোচনার জন্য ডিপ্লোমেটিক কোরের একটি সম্মেলন ডেকেছেন, কিন্তু সংকটের কারণেই এটি বাতিল করেছেন।’

বাংলাদেশের ইতিহাসে মোড় ঘোরানো একটি দিন ৪ ডিসেম্বর। বাংলাদেশের সব রণক্ষেত্রে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকায় হানাদার বাহিনী সর্বত্র পিছু হটছিল। পাকিস্তানি বিমান বাহিনী ক্রমশ পঙ্গু হয়ে পড়ছিল। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী চারদিক দিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে। শুরু হয় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ। সম্মিলিত বাহিনীর দখলে চলে আসে সীমান্ত শহর দর্শনা।

‘এক্সেঞ্জ অব স্মল আর্মস ফায়ার’ : ৪ ডিসেম্বর রাতে আখাউড়াতে পাকিস্তানিবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহনীর প্রচণ্ড গোলা বিনিময় হয়, যাকে সামরিক পরিভাষায় বলা হয় ‘এক্সেঞ্জ অব স্মল আর্মস ফায়ার’। সারারাত যুদ্ধের পর ভোরে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানি বাহিনী। মূলত, ত্রিমুখী আক্রমণে পাকিস্তানি বাহিনীর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল পেট্রæম খান দলবলসহ আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হন। সেদিন মুক্তি ও মিত্রবাহিনীর হাতে পাকিস্তানি সৈন্যদের একটি অংশ আত্মসমর্পণ করে, কিছু সৈন্য গুলি খেয়ে মারা যায়, কিছু সৈন্য আখাউড়া রেললাইন ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দিকে পালিয়ে যায়। কিছু সৈন্য তিতাস নদীতে ঝাঁপ দিয়ে মারা যায়।

বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে ইন্দিরা গান্ধীর প্রতি আহ্বান : কূটনীতিতে এদিনটি বাংলাদেশের জন্য ছিল অস্থিরতা আর উদ্বেগের। পাকিস্তানের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি সিনিয়র জর্জ বুশ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব উত্থাপন করেন। যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে দাবি করে, এই মুহূর্তে ভারত ও পাকিস্তান নিজ নিজ সীমান্তের ভেতর সৈন্য প্রত্যাহার করে নিতে হবে। এই উৎকণ্ঠাময় অবস্থায় লিখিতপত্রে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর কাছে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার আহ্বান জানান প্রবাসী সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। এদিকে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব পাস করানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র যখন বৈঠকের পর বৈঠক করছে, তখন সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেটোর কারণে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিরাপত্তা পরিষদে ভেস্তে যায়। পোল্যান্ডও এ প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয়। তবে ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড এ যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ভোটদানে বিরত থাকে। প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্র হেরে যাওয়ার পর পাকিস্তানের পরাজয় সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় বাহিনীর যৌথ তীব্র আক্রমণের মুখে বাংলাদেশের প্রতিটি জায়গা থেকে পালানোর পথ খুঁজতে থাকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App