×

মুক্তচিন্তা

টিভি সিরিয়াল হোক শিক্ষামূলক

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২২, ০২:২৫ এএম

কিছুদিন ধরে একটি ছবি ফেসবুকে বারবার ঘোরাফেরা করছিল। একটি নিখোঁজ সংবাদের পোস্টার। আলিনা ইসলাম আয়াত নামে ৫ বছর বয়সি এক শিশুকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। দাদার সঙ্গে মক্তবে যেত সে। নাতনিকে মসজিদে পৌঁছে দেয়ার পর একটি দোকানে যায় দাদা, তারপর থেকে আয়াতকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরিবারটি হন্য হয়ে খুঁজতে থাকে মেয়েটিকে। থানা-পুলিশ, হাসপাতালে, হারানো বিজ্ঞপ্তির পোস্টার ও মাইকিং কোনোকিছুই বাদ রাখেনি। অবশেষে ১০ দিন পর মিলে আয়াতের খবর। তার লাশ কেটে টুকরো টুকরো করে সাগরে ভাসিয়ে দিয়েছে ঘাতক খুনি। ঘাতক ধরা পড়লে মিলে এমন তথ্য। টাকার নেশায় আয়াতকে অপহরণ করা হয়। আশ্চর্যের বিষয় হলো খুনি ভারতীয় টিভি সিরিয়াল ‘ক্রাইম প্যাট্রোল’ দেখে করে এমন অপহরণের পরিকল্পনা। বছর দুয়েক আগে সাতক্ষীরার কলারোয়ায় একই পরিবারের চারজনকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছিল। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) চার্জশিট প্রতিবেদন অনুযায়ী, কোমল পানীয়র সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে ভাই-ভাবি ও ভাতিজা-ভাতিজিকে খাওয়ায় খুনি। পরে ঘুমন্ত অবস্থায় চাপাতি দিয়ে গলা কেটে তাদের হত্যা করে। সে নিয়মিত ভারতীয় টিভি সিরিয়াল ‘ক্রাইম প্যাট্রোল’ দেখত। ক্রাইম প্যাট্রোল দেখেই সে খুনের এ কৌশল শেখে। ভারতীয় টিভি সিরিজ ‘ক্রাইম প্যাট্রোল’ দেখে দেশে কয়েক বছরে কিছু চাঞ্চল্যকর খুনের ঘটনা ঘটেছে। চট্টগ্রামের চান্দগাঁওয়ে মা-ছেলের জোড়া খুন, ২০১৯ সালে পিরোজপুরে ১৩ বছরের এক কিশোরকে অপহরণ করে হত্যা, চট্টগ্রামের আকবর শাহ এলাকায় টাকা না পেয়ে ভাবিকে হত্যা, কেরানীগঞ্জ ও এপ্রিলে সাভারে দুই রিকশাচালকের হত্যাকাণ্ড, বগুড়ায় ১৬ বছর বয়সি এক কিশোর হিন্দি সিনেমা ‘ধুম-৩’ ১৫৪ বার দেখে ‘ফিল্মি স্টাইলে’ ব্যাংক ডাকাতির চেষ্টা করে, ভারতীয় সন্ত্রাসী পরিচয়ে গাড়িতে নকল বোমা পুঁতে রেখে চাঁদা দাবিসহ রয়েছে অসংখ্য ঘটনা, যা হয়তো সেভাবে আলোচনায় আসে না। ঘটনাগুলোয় জড়িতদের বেশিরভাগই কৈশোর বয়স অতিক্রম করেছে। সিনেমায় দেখানো ‘অ্যাকশন’, ‘ক্রাইম’ ও ‘অ্যাডভেঞ্চার’ থেকে প্রভাবিত হয় অনেকে। তারপর বাস্তব জীবনে তা প্রয়োগের চেষ্টা করে। মানুষ সাধারণত তার আশপাশের পরিবেশ থেকে অনেক কিছু শিখে। যেই জায়গাগুলো থেকে আমরা শিখছি, সেই জায়গাগুলোয় দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয়া প্রয়োজন। সিনেমা সিরিয়াল যারা দেখে সবার ওপর এর প্রভাব পড়বে না এটা যেমন সত্য, আবার অনেকের ওপর যে প্রভাব পড়ছে এটাও সত্যি। সুতরাং সিনেমা সিরিয়ালে কিশোররা কি দেখছে সেখানে নজরদারির ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। টিভি সিরিয়ালের পাশাপাশি বর্তমানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণীদের মধ্যে ইন্টারনেট গেমিং আসক্তি। ইন্টারনেট বা গেমের বিষয়বস্তুর ওপর ভিত্তি করে তাদের আচরণ পরিবর্তিত হয়ে যায়। আগ্রাসী ভাব দেখা দেয়। অল্পতেই রেগে যায়। কখনো নিজের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বা অপরকে আঘাত অথবা হত্যা করার প্রবণতাও দেখা দিতে পারে। এটি মাদকাসক্তির মতোই একটি সমস্যা। মোবাইল গেমিংয়ের জন্যও এদেশে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এই সমস্যা প্রতিরোধে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। সেই সঙ্গে তার ব্যবহার যাতে সহনীয় পর্যায়ে রাখা যায় তার প্রতি দৃষ্টি দিতে হবে। তাই এসব ক্ষেত্রে সচেতনতার বিকল্প নেই। এই সচেতনতা হতে হবে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে। টিভি সিরিয়ালগুলোতে কী দেখানো হচ্ছে সেদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবার নজর রাখতে হবে। প্রয়োজনে কিছু সিরিয়াল সম্প্রচার নিষিদ্ধ করা হোক। সেই সঙ্গে শিশু-কিশোরদের জন্য শিক্ষা ও বিনোদনমূলক নানাবিধ কন্টেন্ট চালু করা প্রয়োজন, যাতে তারা ভালো বিষয় শিখতে পারে। এক্ষেত্রে ‘মীনা কার্টুন’ থেকে শিক্ষা নেয়া যেতে পারে। মো. মিলন হোসেন শিক্ষার্থী, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App