×

অপরাধ

ঘুস নিয়ে শিক্ষা কর্মকর্তা বললেন, ‘সম্মানি’ নিয়েছি!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২২, ০৯:০৪ এএম

ঘুস নিয়ে শিক্ষা কর্মকর্তা বললেন, ‘সম্মানি’ নিয়েছি!

ছবি: সংগৃহীত

সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার ভূঁইয়াগাতী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে চারটি পদে নিয়োগের জন্য মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম মোটা অঙ্কের ঘুস নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তার ঘুষ গ্রহণের দৃশ্য ক্যামেরায় ধারণ করা হয়েছে। তবে এটা ঘুস নয়, বরং ‘সম্মানী’ হিসেবে ৫০ হাজার টাকা নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

শনিবার দুপুরে উপজেলার ভূঁইয়াগাতী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে এই টাকা লেনদেনের ঘটনা ঘটে। শিক্ষা কর্মকর্তা ৫০ হাজার টাকার সঙ্গে গাড়ি ভাড়া হিসেবে আরো ৩ হাজার টাকা নিয়েছেন বলে জানা গেছে। জানা যায়, শনিবার উপজেলার ভূঁইয়াগাতী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে শূন্যপদ পূরণের জন্য নিরাপত্তাকর্মী, নৈশপ্রহরী, অফিস সহায়ক ও পরিছন্নতাকর্মী পদে চার জনকে নিয়োগ দেয়া হয়। স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় না দিয়ে টাকার বিনিময়ে চার জনকে নিয়োগ দেয়া হয়।

আর এতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম সহযোগিতা করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। প্রতিষ্ঠানে চারটি পদের বিপরীতে মোট কতজন আবেদন করেছেন, যাচাইবাছাইয়ে কতজন টিকেছেন এবং তাদের কবে প্রবেশপথ পৌঁছানো হয়েছে তা জানাতে অস্বীকৃতি জানান প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক ইয়াকুব আলী।

এমনকি নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষে কাদেরকে নিয়োগ দেয়া হলো সেটিও টাঙানো হয়নি নোটিস বোর্ডে। ভিডিওতে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইয়াকুব আলী মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে গিয়ে টেবিলের আড়াল করে তার হাতে একটি টাকার বান্ডিল তুলে দেন। শিক্ষা কর্মকর্তা টাকা নিয়ে তার স্যুটের ভেতরের ডান পকেটে রাখেন।

পরবর্তীতে প্রধান শিক্ষক শিক্ষা কর্মকর্তার হাতে আরো কিছু টাকা দিলে শিক্ষা কর্মকর্তা টাকাটা গুণে তার স্যুটের ভেতরের বাম পকেটে রাখেন। এ সময় পাশেই বসে ছিলেন ডিজির প্রতিনিধির পাঠানো মনোনীত কর্মকর্তা। তার পাশে থাকা ডিজির প্রতিনিধির মনোনীত কর্মকর্তাকেও প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষককে টাকা দিতে দেখা যায়।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে টাকা দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে ভূঁইয়াগাতী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইয়াকুব বলেন, আমি তাকে কোনো টাকা দিইনি। টাকা দেয়ার ভিডিও ফাঁস হওয়ার কথা তাকে বললে তিনি মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। তবে মো. তরিকুল ইসলাম টাকা নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমি ৫০ হাজার টাকা নিয়েছি আমার সম্মানী হিসেবে, এটা ঘুস নয়।

এ ছাড়াও আমি গাড়ি ভাড়া হিসেবে আরো ৩ হাজার টাকা নিয়েছি। এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য ভূঁইয়াগাতী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি অনিল কুমারের মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

ডিজির প্রতিনিধি কাজিপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রেজাউল করিমের মুঠোফোনে কল দিয়ে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি অসুস্থ থাকায় সেখানে যেতে পারিনি। আমার প্রতিষ্ঠানের অন্য শিক্ষককে পাঠিয়েছিলাম। তবে নিয়োগে এমন টাকা লেনদেন হওয়ার কথা নয়। ডিজির প্রতিনিধির দায়িত্ব দিয়ে কাকে পাঠানো হয়েছিল তার নাম-পরিচয় ও মুঠোফোন নাম্বার চাইলে, তার নাম-পরিচয় দিয়ে কী করবেন বলে তিনি মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

এ ব্যাপারে রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তৃপ্তি কণা মণ্ডল বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়া সব সময়ই স্বচ্ছ হবে এটাই প্রত্যাশা। কারণ এখানে মানুষের জীবিকার ব্যাপার থাকে। এছাড়াও যেহেতু মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বলেছেন তিনি ‘সম্মানী’ নিয়েছেন সেক্ষেত্রে তাদের কত টাকা সম্মানী নেয়ার নিয়ম আছে সেটা আমি জানি না।

তবে যদি এখানে অনিয়ম-দুর্নীতি হয়ে থাকে, তাহলে আশা করছি শিক্ষা বিভাগ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। এছাড়াও বিষয়টি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হলে এ ক্ষেত্রে অবশ্যই তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাজি সলিম উল্লাহ বলেন, এত টাকা কারো ‘সম্মানী’ হতে পারে না। বিষয়টি আগামীকাল (আজ) অফিস খুললে আমি জানার চেষ্টা করব। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি, উন্নয়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) মো. তমাল হোসেন বলেন, বিষয়টি আপনার (সাংবাদিক) কাছ থেকে জানতে পারলাম। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে আমরা অবশ্যই তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App