ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ জরুরি
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২২, ০২:২৬ এএম
ওষুধের দাম বৃদ্ধি চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত ছয় মাসে প্যারাসিটামল, মেট্রোনিডাজল, এমোক্সিসিলিন, ডায়াজিপাম, ফেনোবারবিটাল, এসপিরিন, ফেনোক্সিমিথাইল, পেনিসিলিনসহ অন্যান্য জেনেরিকের ওষুধের দাম ১৩-৭৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এছাড়া গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ, এন্টিবায়োটিক, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগের ওষুধের দাম বেড়েছে ১৩-৩৩ শতাংশ পর্যন্ত। সর্বশেষ ২০১৫ সালে কয়েকটি ব্র্যান্ডের ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছিল। এ বছর আবারো বাড়ানো হয় অতিপ্রয়োজনীয় ওষুধের দাম। জনসাধারণের আয় না বাড়লেও ওষুধের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বেড়ে গেছে চিকিৎসা ব্যয়। নিয়ন্ত্রক সংস্থা ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর বিষয়টিকে মূল্যবৃদ্ধি বলতে নারাজ। তাদের দাবি, ওষুধে ব্যবহৃত কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি হওয়ায় এর সঙ্গে সমন্বয় করে ওষুধের দাম কিছুটা ‘আপডেট’ করা হয়েছে। উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, শুধু কাঁচামালের দামই বাড়েনি- প্যাকেজিং ম্যাটেরিয়াল, পরিবহন ও ডিস্ট্রিবিউশন ব্যয়, ডলারের বিনিময় মূল্য, মুদ্রাস্ফীতিসহ নানা কারণেই ওষুধ উৎপাদনের খরচ বেড়েছে। এসব কারণে ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে। এতে মানুষের দুশ্চিন্তা বেড়েছে। দাম বাড়াতে না দিলে উৎপাদন বন্ধের হুমকিও দিয়েছিল প্রতিষ্ঠানগুলো। এখানে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর অসহায়। ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর এমন আচরণ সত্যিই দুঃখজনক। অতিপ্রয়োজনীয় ওষুধের দাম নির্ধারণ করে দেয় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের করা প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ২০টি জেনেরিকের ৫৩ ব্র্যান্ডের ওষুধের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত দেয় সরকার। এর মধ্যে বিভিন্ন মাত্রার প্যারাসিটামলের দাম বাড়ানো হয় ৫০ থেকে শতভাগ। মাত্র ৪০ টাকার এমোক্সিসিলিনের দাম করা হয় ৭০ টাকা, ২৪ টাকার ইনজেকশন ৫৫ টাকা। ৯ টাকার নাকের ড্রপের দাম বাড়িয়ে করা হয় ১৮ টাকা। কোনো কোনো ওষুধের দাম ৯৯-১৩২ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। দেশের মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য তালিকাভুক্ত ১১৭টি জেনেরিকের ওষুধের দাম বাড়ানোর ক্ষমতা রয়েছে সরকারের হাতে। ওষুধ কোনো বিলাসী ভোগ্যপণ্য নয়। এর ওপর মানুষের জীবন-মরণ নির্ভর করে থাকে। এক্ষেত্রে ক্রেতার স্বার্থরক্ষা করাই অনেক বেশি জরুরি। ওষুধের মূল্যবৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে কোম্পানিগুলোর উচ্চাভিলাষী বিপণন নীতি ও অধিক মুনাফা করার প্রবণতাকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। ওষুধ কোম্পানিগুলোর অতি মুনাফা প্রবণতার বলি হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এটি অনৈতিক। সরকারকে অবিলম্বে এদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। উদ্বেগের বিষয়, ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণে দেশে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। কার্যত প্রায় গোটা ওষুধের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে ওষুধ শিল্প মালিক সমিতি। সরকারের আইনের দুর্বলতার কারণেই ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য আইন সংশোধন করা প্রয়োজন। বৈশ্বিক এ দুর্যোগের সময় কেউ যদি ওষুধের সংকট তৈরি করে বা বেশি দাম নেয়, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। ওষুধের ব্যবসার সঙ্গে যারা যুক্ত, তাদের আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন ও মানবিক হওয়া প্রয়োজন। যুক্তিসঙ্গতভাবে ওষুধের দাম নির্ধারণ করতে হবে, যাতে তা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে। চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে গিয়ে প্রতি বছর দেশে প্রায় ৮৬ লাখ মানুষ আর্থিক সমস্যায় পড়েন। ব্যয় বেশি হওয়ার কারণে ১৬ শতাংশ মানুষ স্বাস্থ্যসেবা নেয়া থেকে বিরত থাকেন। এভাবে দফায় দফায় ওষুধের দাম বাড়লে সাধারণ মানুষ তাদের মৌলিক অধিকার চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হবে, রোগে ভুগে মারা যাবে। জনস্বার্থে চিকিৎসা ব্যয় কমাতেই হবে। তাই ওষুধের বাজার নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্টদের তদারকি বাড়ানো ও সরকারের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের বিকল্প নেই।