×

জাতীয়

আইএমএফের শর্ত মানতে সেবাখাতে ভর্তুকি উঠছে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২২, ০৮:৩৫ এএম

আইএমএফের শর্ত মানতে সেবাখাতে ভর্তুকি উঠছে

ছবি: সংগৃহীত

দিন দিন বাড়ছে সব শ্রেণির মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়। সবচেয়ে বিপাকে রয়েছে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণীর মানুষ। বাজারে নিত্যপণ্যের দাম যত বাড়ছে, ততই তাদের টান পড়ছে উপার্জনে। খাদ্য তালিকাও সীমিত হয়ে আসছে। এদিকে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশকে ঋণ দিতে বেশ কিছু শর্ত দিয়েছে। গত ২ নভেম্বর পিডিবি ও বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করে ঢাকা সফরকারী আইএমএফ প্রতিনিধি দল। এরপর ৬ নভেম্বর বিইআরসির সঙ্গেও বৈঠক করে সংস্থাটি। জানা গেছে, ঋণ পাওয়ার অন্যতম শর্ত হচ্ছে কৃষি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানিসহ কয়েকটি খাতে ভর্তুকি কমানো। সে প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে বলে অনেকে মনে করছেন।

জানা গেছে, বাংলাদেশকে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে প্রাথমিকভাবে কর্মকর্তা পর্যায়ে সমঝোতায় পৌঁছেছে আইএমএফ। এখন শর্তসহ বাকি খুঁটিনাটি চূড়ান্ত করতে আগামী জানুয়ারিতে ফের বৈঠক করতে চায় সংস্থাটি। এদিকে ঋণ পেতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের শর্ত পূরণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। এর অংশ হিসেবে ভর্তুকি ও ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ কমাতে উদ্যোগ নিয়েছে সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভোক্তা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ২০ শতাংশ বাড়ানোর আবেদন করেছে বিতরণ কোম্পানিগুলো। বিদ্যুতের দাম বাড়ালে এর প্রভাব পড়ে সব খাতে। এতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে, সাধারণ মানুষ ভর্তুকী প্রত্যহারের চাপে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, আমার মতে, জ¦ালানিতে অনেক বেশি ভর্তুকি দিতে হয় সরকারের ভ্রান্তনীতি ও অপচয়মূলক সিদ্ধান্তের কারণে। ভোক্তাদের উপরে বাড়তি চাপ সৃষ্টি না করে অপচয় এবং নীতি সিদ্ধান্তের সংশোধন করলেই ভর্তুকি কমে যাবে। ভর্তুকি কমানোর জন্য সঠিকভাবে নজর দেয়া উচিত এবং পরীক্ষা করে দেখা উচিত কোনো কোনো জায়গায় অপচয় আছে, কোথায় ভুল সিদ্ধান্ত আছে। যদি সেগুলো দূর করা যায় তাহলে ভোক্তাদের উপর বাড়তি চাপ পড়বে না, বরং ভোক্তাদের আরো সাশ্রয়ী মূল্যে সেবা দেয়া সম্ভব হবে বলে মনে করেন এ সভাপতি।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ফলে মধ্যবিত্ত শ্রেণি ক্রমাগত দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। ফলে নৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক দ্ব›েদ্বর সৃষ্টি হচ্ছে বলে মনে করেন নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ও বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, একসময় মধ্যবিত্তরা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রতি সহমর্মী ছিলেন। কিন্তু বর্তমানে তারা নিজেরাও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে। ফলে গত কয়েক বছরে মানুষের জীবনমানের যে উন্নতি হয়েছিল, তার ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে।

জানা গেছে, মোটা দাগে আইএমএফের চাওয়ার মধ্যে আছে, খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনাসহ ব্যাংক খাতের নানা সংস্কার, সরকারের ভর্তুকি ব্যয় কমিয়ে আনা এবং রাজস্ব খাতের সংস্কার। এ বাস্তবতায় সবকিছু চূড়ান্ত করতে আগামী জানুয়ারিতে ফের বৈঠক করতে চায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহিবল-আইএমএফ। এবারের বাংলাদেশ সফরে আইএমএফ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন সংস্থার উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক আন্তোনেত্তে মনসিও সাইয়া। বৈঠকের সম্ভাব্য তারিখ জানিয়ে আইএমএফ ঢাকা কার্যালয় থেকে একটি চিঠি দেয়া হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংককে। ১৪ থেকে ১৮ জানুয়ারি চার দিনের ওই সফরের সম্ভাব্য সূচি নিয়ে আলোচনা চলছে বাংলাদেশ ব্যাংক ও আইএমএফ এর মধ্যে। উচ্চ পর্যায়ের এ সফরের প্রটোকল নিশ্চিত করতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো হয়েছে আইএমএফ এর পক্ষ থেকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ এ প্রসঙ্গে বলেন, ঋণ সম্পর্কিত বিষয়ে ফলোআপ করতে জানুয়ারির ১৪ তারিখে আইএমএফ প্রতিনিধি দল বৈঠকের আগ্রহ জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এবং অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পরিকল্পনার কথা ওই চিঠিতে জানিয়েছে আইএমএফ।

জানতে চাইলে আইএমএফের সাবেক কর্মকর্তা ও গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর ভোরের কাগজকে বলেন, আইএমএফের যেসব শর্তের কথা শোনা যাচ্ছে, তা খুবই নমনীয়। এসব শর্ত মানতে না পারলে বুঝতে হবে, আমরা সমস্যার সমাধান চাই না।

আইএমএফ ২০২৪ সালের মধ্যে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশে নামিয়ে আনতে বলেছে। এখন বেসরকারি খাতের বেশির ভাগ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের কম হলেও সরকারি খাতে তা ২০ শতাংশের বেশি। এ অবস্থায় রাষ্ট্রমালিকানাধীন চার ব্যাংককে আগামী বছরের জুনের মধ্যে খেলাপি ঋণ ১২ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের হিসাবায়ন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে বলেছে আইএমএফের প্রতিনিধিদল। এতে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকও। ফলে প্রকৃত রিজার্ভের পরিমাণ হয় ২৬ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি।

এর ধারাবাহিকতায় ৯ নভেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেছিলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৪ বিলিয়ন। তার থেকে ৮ বিলিয়ন বাদ দিলে প্রকৃত রিজার্ভের পরিমাণ বের হবে। গভর্নর সেদিন প্রকৃত রিজার্ভ কত, তা সরাসরি না বললেও গতকাল প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান মেহেরপুরের মুজিবনগরে আইএফআইসি ব্যাংকের এক অনুষ্ঠানে বলেন, দেশের রিজার্ভ নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণসহ দেশে রিজার্ভ আছে ২৬ বিলিয়ন ডলার, যা দিয়ে চলবে ছয় মাস।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App