×

খেলা

মেসিকে এবার জ্বলে উঠতে হবে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২২, ০৯:২৫ এএম

মেসিকে এবার জ্বলে উঠতে হবে

ছবি: ভোরের কাগজ

প্রথম ম্যাচে আর্জেন্টিনার পরাজয়, ২য় ম্যাচে জয় তবে খেলায় মন ভরল না দর্শকদের। চারদিকে চিন্তার ছাপ। মেসিরা কি দ্বিতীয় পর্বে যাবে? এরকম একটি সমীকরণে পোল্যান্ডর মুখোমুখি হলো আর্জেন্টাইনরা। আবার সেই চিন্তাকে মুক্ত করে দিল তাদের সেই ম্যাচে পারফম্যান্সে ভিন্ন এক আর্জেন্টিনাকে দেখা গেল। শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ভূমিকা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল পোল্যান্ডের উপর। একের পর এক সুযোগ তৈরি করতে থাকল। আবারো চিন্তার ছাপ মেসির পেনাল্টি মিসের মাধ্যমে। তবে সবকিছুকে পেছনে ফেলে শেষ পর্যন্ত যেভাবে খেলায় জয়লাভ করা তাতে আবারো আশার আলো দেখাল বিশ্ববাসীকে এবং বাংলাদেশের বিশাল সমর্থকগোষ্ঠীকে আনন্দ উল্লাস করার উপকরণ তৈরি করে দিল। তাদের আনন্দ উল্লাসের সামনে বাধা এখন অস্ট্রেলিয়া। যারা গ্রুপপর্ব শুরুর আগে ডেনমার্ককে পিছনে ফেলে ২য় পর্বে উঠে আসবে সেটা মনে হয় কেউ ভাবেনি। তিউনিশিয়া এবং ডেনমার্ককে হারিয়ে তারা অনেকটা ইতিহাস তৈরি করে উঠে গেল দ্বিতীয় পর্বে। এখন তাদের প্রতিপক্ষ শক্তিশালী আর্জেন্টিনা।

গ্রুপ পর্বের মতো এই ম্যাচটা তাদের জন্য অতটা সহজ হবে না। তারপরও গত দুই ম্যাচে তাদের জয়লাভ বিশ্বফুটবলে তাদের অন্যভাবে চেনাচ্ছে। ম্যাচ বাই ম্যাচ মেসিদের খেলার যে উন্নতি ঘটেছে সেটার ধারাবাহিকতা যদি কোচ স্কালোনির শিষ্যরা বজায় রাখতে পারে তবে ম্যাচ জয়টা খুব কঠিন হবে না বলে মনে হয়। তবে মেসিকে আরো বেশি প্রাণবন্ত হিসেবে মাঠে দেখার অপেক্ষায় আছি। তার পায়ের যে জাদু সেটা যেন বিশ্ববাসী আরো বিশদভাবে দেখার সুযোগ দেখার অপেক্ষায়। মেসি যদি সেই আলো ছড়াতে পারে এবং সেই সঙ্গে তার সতীর্থরা যদি সহযোগিতার হাতটুকু বাড়িয়ে দেয় এবং রক্ষণে অস্ট্রেলিয়ার আক্রমণভাগকে যদি একটু সতর্ক দৃষ্টি রাখে তাহলে আমাদের বিশাল আর্জেন্টাইন সমর্থকরা আবারো আনন্দ মিছিল করতে পারবে বলে আমার মনে হচ্ছে। তারই অপেক্ষায় আর্জেন্টাইন ভক্তরা।

হারলেই বিদায় এরকম একটি সমীকরণে টিমগুলো তাদের দ্বিতীয় পর্ব শুরু করবে আজ থেকে। ২য় পর্বে প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হবে নেদারল্যান্ডস ও যুক্তরাষ্ট্র।

প্রথম রাউন্ডের ম্যাচগুলোর দিকে তাকালে যুক্তরাষ্ট্রকে মনে হয়েছে একটি লড়াকু প্রতিপক্ষ। ম্যাচের প্রতিটা মুহূর্তে যেন তারা হার না মানার মানসিকতায় প্রতিপক্ষের সঙ্গে লড়াই করে সমান তালে। অন্যদিকে নেদারল্যান্ডস তাদের স্বভাবসুলভ খেলাই হচ্ছে টোটাল ফুটবল। কিন্তু সেভাবে তারা নিজেদের উপস্থাপন করতে পারেনি এখন পর্যন্ত। এই বিশ্বকাপে জিততে হলে তাদের পারফরম্যান্সের উন্নতি ঘটাতে হবে। তাই মনে হচ্ছে লড়াকু যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ডাচদের কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে।

[caption id="attachment_387562" align="aligncenter" width="700"] ছবি: ভোরের কাগজ[/caption]

দ্বিতীয় রাউন্ডের দুইটি ম্যাচ নিয়ে আলোচনার আগে জাপানকে নিয়ে দুটা কথা না বললে মনে হয় বিশ্বকাপটা অপূর্ণ থেকে যাবে। এই বিশ্বকাপে জাপানের অসাধারণ পারফরম্যান্স সত্যিই সারা বিশ্বের ফুটবল পাগল দর্শকদের সঙ্গে আমাকেও মুগ্ধ করেছে। একটা পরিপূর্ণ দল হিসেবে খেলা, সেই সঙ্গে সময় এবং খেলার ফলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মাঠে খেলার কৌশলের পরিবর্তন এসব কিছু মিলিয়ে অন্য এক জাপানকে দেখছি এই বিশ্বকাপে। একটু বিশদভাবে যদি বলি, স্পেনের সঙ্গে তাদের এই বাঁচা-মরার ম্যাচে প্রথমার্ধে স্পেন তার স্বভাবসুলভ খেলার মধ্য দিয়ে বল নিজেদের দখলে রেখে গোল আদায় করে নেয়। সমান তাল মিলিয়ে খেলে যাচ্ছিল ঠিকই কিন্তু স্পেনকে সেভাবে বিপদে ফেলতে পারছিল না। ১ গোলে পিছিয়ে থেকে বিশ্রামে গিয়ে জাপান যখন দ্বিতীয়ার্ধ শুরু করল তখন মনে হয় অন্য এক জাপানকে দেখলাম। দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে তারা আক্রমণাত্মক হয়ে উঠে। যে স্পেনকে সারাক্ষণ বল নিয়ন্ত্রণে রাখতে দেখি সেটা যেন উল্টো জাপানের খেলায় দেখা যেতে লাগল। ছোট ছোট পাসে বল নিজেদের দখলে রেখে স্পেনের উপর প্রাধান্য বিস্তার শুরু করল। সেই সঙ্গে সুযোগ তৈরি করতে থাকল গোলের।

দ্বিতীয়ার্ধের ৪৮ মিনিটে রিতসু দোয়ান অসাধারণ এক গোল করে জাপানকে খেলায় ফিরাল। আর ৩ মিনিট পরে ৫১ মিনিটে তানাকার গোল যেন সারা বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীদের জন্য অন্য এক অনুভূতির জন্ম দিল। স্টেডিয়ামে জাপানি দর্শকদের আনন্দ, কান্না বা চোখ বন্ধ করে ঈশ্বরের কাছে জয়লাভের জন্য প্রার্থনা সবই যেন ফুটবল আনন্দের এক অসাধারণ বহিঃপ্রকাশ বলা যায়। গোল দেয়ার পরও তারা বল দখলে রেখে স্পেনকে বিচলিত করে রাখল। কিন্তু স্প্যানিশরা গোল করে খেলার ফেরার জন্য পাগল হয়ে উঠল। কারণ অন্য মাঠে কোস্টারিকা যে জার্মানির সঙ্গে ২-১ এগিয়ে।

স্পেনের খেলার চেষ্টাকে রুখে দেয়ার জন্য সময় গড়ানোর সঙ্গে জাপানকে অন্য রূপে দেখা গেল যা তখন সময়ের দাবি ছিল। নিজেদের ডিফেন্ডিং থার্ডে ফরমেশন পরিবর্তন করে যে লো ব্লক তৈরি করল, তাতে মনে হচ্ছিল আরো ৩০ মিনিট খেলা হলে স্প্যানিশরা জাপানের গোলের দরজা খুলতে পারত না। একই ম্যাচে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন রূপে উপস্থাপনের জন্য কোচ হাজিমে মরিইয়াসুকে সেলুট জানাতে হয় এবং সেই সঙ্গে পুরো দলকে। জাপানের এই পারফরম্যান্স সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে তাদের এই অগ্রযাত্রা কোথায় গিয়ে শেষ হয়। জার্মানির মতো দলকে হারিয়ে গ্রুপ থেকে বিদায় জানানো, স্পেনকে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়া-এটা যেন অন্য এক জাপানকে দেখছি এই বিশ্বকাপে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App