×

সারাদেশ

ধর্মঘটে বিচ্ছিন্ন রাজশাহী: নৌকাই ভরসা বিএনপির!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২২, ০৯:৫০ এএম

ধর্মঘটে বিচ্ছিন্ন রাজশাহী: নৌকাই ভরসা বিএনপির!

প্রতীকী ছবি

আজ শনিবার বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় গণসমাবেশ। নগরীর ঐতিহাসিক মাদরাসা মাঠে বিকেলে আয়োজিত এ গণসমাবেশের আগেই পরিবহন ধর্মঘটে সারাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে রাজশাহীর। বাধ্য হয়ে নদীপথে নৌকায় চড়ে গণসমাবেশে যোগ দেন বিএনপির কয়েক হাজার নেতাকর্মী। তবে গতকাল শুক্রবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত সমাবেশস্থলে কোনো নেতাকর্মীকে ঢুকতে দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।

জানা গেছে, ১০ দফা দাবিতে গত বৃহস্পতিবার থেকে ধর্মঘট শুরু করে পরিবহণ মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। এর মধ্যেই গতকাল সকাল থেকে সিএনজি চালিত অটোরিকশা, থ্রিহুইলার, হিউম্যান হলার ও লেগুনা মালিক সমিতির ডাকে শুরু হয়েছে ধর্মঘট। সব সড়কে অবাধ চলাচল ও হয়রানিমুক্ত রেজিস্ট্রেশনের দাবিতে রাজশাহীতে অনির্দিষ্টকালের এ ধর্মঘট বলে দাবি করেছেন সিএনজি চালিত অটোরিকশা (মিশুক) মালিক সমিতির সহসভাপতি আহসান হাবিব। তিনি বলেন, সকল সড়কে আমরা অবাধে চলাচল করতে পারি না। পদে পদে আমাদের বাধা দেয়া হয়। নতুন অটোরিকশা কেনার পর রেজিস্ট্রেশন করতে গিয়েও হয়রানির শিকার হতে হয় আমাদের। সেজন্য আমরা ধর্মঘটে যেতে বাধ্য হয়েছি।

কার্যত রাজশাহীর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েন সাধারণ মানুষ। তবে পাবনা ও নাটোরের লালপুর, বাগাতিপাড়া থেকে রাজশাহীর চারঘাট হয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা পদ্মায় নৌকাযোগে নগরীতে প্রবেশ করেন। তারা বলেন, সড়কপথে গাড়ি বন্ধ এবং পুলিশি বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে অনেককে। সেজন্য নৌপথে নিরাপদ হওয়ায় তারা কর্মসূচি সফল করতে এ পথ বেছে নিয়েছেন। এ বিষয়ে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাইদ চাঁদ ভোরের কাগজকে বলেন, বাধা দিয়ে গণজোয়ার ঠেকানো যাবে না। প্রায় ৫০ হাজার নেতাকর্মী নৌপথে আমাদের কর্মসূচিতে যোগ দেবেন। তবুও সফল হবে সমাবেশ।

দুদিন আগেও সমাবেশে আসতে বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে বলে দলটির নেতারা অভিযোগ করেছেন। গত বুধবার রাত ১০টায় রাজশাহীতে আসেন বগুড়া জেলা মহিলা দলের সহ. সাধারণ সম্পাদক মোছা. মুক্তা। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, বুধবার বিকেলে আমরা বাসযোগে রওনা হয়ে পৌঁছেছি রাতে। বিভিন্ন পয়েন্টে চেকিংয়ের কথা বলে পুলিশ আমাদের গাড়ি আটকিয়েছে। ঊর্ধ্বতন দায়িত্বশীলদের হস্তক্ষেপে আবারো কিছুদূর আসি, আবারো আটকিয়েছে, ছেড়েছে, এভাবে এসেছি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাদরাসা মাঠ সংলগ্ন ঈদগাহ মাঠে পলিথিনের তাবু টাঙিয়ে বিশ্রাম করছেন অনেকে। কেউ কেউ খোলা আকাশের নিচেই শুয়ে রয়েছেন। বাকিরা খাবার তৈরিতে ব্যস্ত। মাঠের মধ্যেই চুলা তৈরি করে আগুন জ্বালিয়ে রান্না করছেন। বস্তায় চাল, ডাল, বিভিন্ন শাকসবজি, ডিম ও জ্বালানি নিয়ে এসেছেন তারা। বগুড়ার গাবতলি থেকে হাড়ি, চালের বস্তা, ডিম ও সবজি নিয়ে এসেছেন পৌর বিএনপি নেতা আল ইমরান বাবু।

তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, গাড়ি বন্ধের জন্য দুদিন আগেই প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী নিয়ে গণসমাবেশে এসেছি। মাঠেই রান্না করে খাচ্ছি আর থাকছি। তবে পদে পদে বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে আমাদের। বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে আগত নেতাকর্মীদের জায়গা তৈরি করে দিচ্ছিলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সহসম্পাদক ও মহানগর কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট শফিকুল হক মিলন। তিনি ভোরের কাগজকে জানান, পথে পথে বাধা অতিক্রম করে আসতে হচ্ছে বিএনপি নেতাকর্মীদের। পুলিশ তাদের কোথাও দাঁড়াতে দিচ্ছে না। তবে যেকোনোভাবে সমাবেশ সফল হবেই। এ বিষয়ে ঘটনাস্থলে দায়িত্বরত আরএমপির গোয়েন্দা পুলিশের সহকারি উপ-কমিশনার আব্দুল্লাহ আল মাসুদের মন্তব্য জানতে চাওয়া হলে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে বলেন তিনি।

এদিকে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে মহানগর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করেছে আওয়ামী লীগ। সংবাদ সম্মেলনে দলটির প্রেসিডিয়াম মেম্বার ও রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেছেন, শনিবারের সমাবেশকে ঘিরে বিএনপি ইতোমধ্যে সরকারের বিরুদ্ধে নানা রকম ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত ও অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে। যখনই বাংলাদেশে নির্বাচন এগিয়ে আসে, ঠিক তখনই বিএনপি নামক সংগঠনটি সরকারের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। উদ্বেগ প্রকাশ করে রাসিক মেয়র বলেন, বিএনপি এ সমাবেশকে কেন্দ্র করে ওয়ার্ডগুলোতে কর্মিসভার নামে সরকারের বিরুদ্ধে নানা ধরনের মিথ্যা, বানোয়াট ও অসত্য তথ্য উপস্থাপনসহ প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে অশোভন বক্তব্য দিয়ে রাজশাহীর শান্তিপূর্ণ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে চায়। এভাবে হীন রাজনৈতিক ফায়দা নিতে চায় তারা। তিনি দাবি করেন, বিএনপি ইতিপূর্বে রাজশাহীর মাদ্রাসা মাঠে সমাবেশ করেছিল। সেই সমাবেশ থেকে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রাণনাশের হুমকি দেন। সেটি নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা এখনো বিচারধীন। সংবাদ সম্মেলনে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী কামাল, সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারসহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App