×

জাতীয়

দফায় দফায় বাড়ছে ওষুধের দাম

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২২, ০৯:১৬ এএম

দাম বাড়ানোর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন ক্যাবের, দাম বাড়লে সাধারণ মানুষ রোগে ভুগে মারা যাবে

দফায় দফায় বাড়ছে ওষুধের দাম। গত ৫ মাসেই বেড়েছে কয়েক দফা। তথ্য অনুযায়ী, গত ২০ জুলাই ৫৩টি ওষুধের দাম পুনর্নির্ধারণ করে সরকার। এই তালিকায় ছিল প্যারাসিটামল, মেট্রোনিডাজল, এমোক্সিলিন, ডায়াজিপাম, ফেনোবারবিটাল, এসপিরিন, ফেনোক্সিমিথাইল, পেনিসিলিনসহ অন্যান্য জেনেরিকের ওষুধ। ২০১৩ সালের পর ওই ওষুধগুলোর দাম বাড়ানো হয়। গত ছয় মাসে এসব ওষুধের দাম ১৩ থেকে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এছাড়া গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ, এন্টিবায়োটিক, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগের ওষুধের দাম বেড়েছে ১৩ থেকে ৩৩ শতাংশ পর্যন্ত।

এই দাম বাড়ানোর কারণ হিসেবে তখন ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আইয়ুব হোসেন বলেছিলেন, কাঁচামালের দাম ও উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। কোম্পানিগুলো লোকসান দিয়ে তো ব্যবসা করবে না। তবে ঔষধ প্রশাসন এককভাবে কারো দাম বাড়িয়ে দেয় না। যখন যে কোম্পানি দাম বাড়াতে আসবে; তারা যদি ব্যয়ের কারণ দেখাতে পারে- তখন সেটি আমাদের ফর্মুলার মধ্যে যদি থাকে তাহলে দামটা বাড়াতে পারে। তবে অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়া কেউ দাম বাড়াতে পারে না।

এরপর আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ২০ নভেম্বর দুপুরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ওষুধের দাম নির্ধারণ কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় হাইকোর্টে আবেদনের প্রেক্ষিতে ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি লিবরা ইনফিউশন লিমিটেডের প্রস্তুতকৃত ২৪ ধরনের ওষুধের দাম প্রকারভেদে ৫ শতাংশ থেকে ১২ শতাংশ বাড়ানো হয়। এসব ওষুধের তালিকায় রয়েছে কলেরার স্যালাইনও। জানা যায়, লিবরা ইনফিউশনের ২৩টির মতো স্যালাইন পণ্য রয়েছে বাজারে। এগুলো প্রতি প্যাকেট ৩৫ থেকে ১৪৫ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়। গত মাসে এসএমসির ওরস্যালাইনের দাম প্রতি পিসে ১ থেকে ২ টাকা টাকা বাড়ানো হয়েছে।

এসব ওষুধের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া, উৎপাদন খরচ বাড়াসহ বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে স্যালাইনসহ বেশ কিছু ওষুধের দাম বাড়ানোর আবেদন করেছিল কোম্পানিগুলো। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দাম সমন্বয় করা হয়েছে। এর আগে গত জুন মাসে ওষুধের দাম নির্ধারণ কমিটির সভায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় বহুল ব্যবহৃত ২০টি ওষুধের দাম ১৩২ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল।

আর ওষুধ মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের (বিএপিআই) মহাসচিব এস এম শফিউজ্জামান জানান, ইচ্ছা করলেই কোম্পানি ওষুধের দাম বাড়াতে পারে না। এর জন্য ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর থেকে অনুমোদন নিতে হয়। আবেদন সাপেক্ষে আইনকানুন ও নীতিমালা অনুসরণ করে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর তা যাচাইবাছাই করে সিদ্ধান্ত দেয়।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, দেশে ১৫০টিরও কম জেনেরিক ব্র্যান্ডের ২৭ হাজারের বেশি ওষুধ তৈরি হয়। এর মধ্যে মাত্র ১১৭টি ওষুধের দাম সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদন সাপেক্ষে বাকি ওষুধের দাম ওষুধ কোম্পানিগুলোই নির্ধারণ করে।

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে ওষুধের দাম বাড়ানোর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান। তিনি বলেন, কোনো ওষুধ কোম্পানি কি এখন লোকসানে চলছে? যদি লোকসানেই না চলে, তাহলে এই সময়ে দাম বাড়ানো কি যুক্তিসঙ্গত হয়েছে? স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সে প্রস্তাব সময়োপযোগী কিনা, যুক্তিসঙ্গত কিনা তা বিবেচনা করবেন।

তিনি আরো বলেন, গত দুই-তিন বছরে মানুষের আয় বাড়েনি। এ অবস্থায় ওষুধ কোম্পানিগুলোর ‘অতি লোভের’ কারণে দাম বাড়ানো হচ্ছে ভোক্তার অধিকার উপেক্ষা করে। গোলাম রহমান আরো বলেন, সরকারি সংস্থা হিসেবে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তারা যখন ব্যর্থ হয়, তখন আমরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ি। তারা যেন যুক্তিসঙ্গতভাবে ওষুধের দাম নির্ধারণ করেন এবং ওষুধ যেন মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ‘যুক্তিসঙ্গতভাবে’ ওষুধের দাম নির্ধারণ করবে- এটাই আমরা প্রত্যাশা করি।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. আ ব ম ফারুক ভোরের কাগজকে বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী, অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকা করা ছাড়াও ওষুধগুলোর দাম নির্ধারণ করে সরকার। আমাদের দেশের ১৯৮২ সালের ওষুধ নীতিতেও তা ছিল। কিন্তু ১৯৯৪ সালে ওষুধ কোম্পানির দাবির মুখে বলা হলো, ১৭ শতাংশ ওষুধের দাম সরকার নির্ধারণ করবে, বাকিটা করবে কোম্পানি। একে বলা হলো ইন্ডিকেটিভ প্রাইস। এ রকম আজব নিয়ম দুনিয়ার কোথাও নেই।

দেশের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের তথ্যমতে, চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে গিয়ে প্রতি বছর দেশে ৮৬ লাখ মানুষ আর্থিক সমস্যায় পড়ে। ব্যয় বেশি হওয়ার কারণে ১৬ শতাংশ মানুষ স্বাস্থ্যসেবা নেয়া থেকে বিরত থাকে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, গত জুলাইয়ে এসেনশিয়াল ড্রাগের দাম বাড়ানো হয়েছিল। যেগুলো সরকারের ফর্মুলা অনুযায়ী নির্ধারণ করা হয়। এভাবে দফায় দফায় যদি ওষুধের দাম বাড়ে, তাহলে সাধারণ মানুষ রোগে ভুগে মারা যাবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App