×

জাতীয়

শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কায় আদিবাসীরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ ডিসেম্বর ২০২২, ০৭:২৩ পিএম

শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কায় আদিবাসীরা

ছবি: ভোরের কাগজ

শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কায় আদিবাসীরা
শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কায় আদিবাসীরা
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৫ বছর পেরিয়ে গেছে। চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। প্রশাসনিক, আইন-শৃঙ্খলা, ভুমি, অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন সংক্রান্ত অধিকার এখনো পার্বত্যবাসীদের হাতে দেয়া হয়নি। অন্যাদিকে পাহাড়ে সেনা ক্যাম্প বাড়ানো হয়েছে। যা শান্তি চুক্তি বিরোধী। ২৫ বছর পার হলেও চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য পাঁচটি মিটিংও হয়নি। তাই চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে জুম্ম জনগণ। শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) রাজধানীর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির ২৫তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম। বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি এমপি রাশেদ খান মেনন বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম উপজাতীয় অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃত হওয়ার কথা ছিল। সেটেলার বাঙ্গালি টুকিয়ে পাহাড়ের সমস্যা আরো বাড়িয়ে তোলা হয়েছে। ২৫ বছরেও হয়নি চুক্তির বাস্তবায়ন। উল্টো নানা সশস্ত্র গ্রুফ তৈরি করে পাহাড়কে রক্তাক্ত করা হচ্ছে। পাহাড়ের সমস্যা সমাধান সামরিকভাবে নয়, রাজনৈতিকভাবে করতে হবে। চুক্তির বাস্তবায়ন না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির ও বাংলাদেশ আধিবাসী ফোরাম এর সভাপতি বোধিপ্রিয় লারমা। তার ভাষ্য, রাষ্ট্র কথা রাখেনি। রাষ্ট্র চায় না চুক্তি বাস্তবায়ন হোক। পার্বত্য চট্টগ্রামে যে একটি শান্তি চুক্তি হয়েছে সেটা যেন মানুষ ভুলে যায় শাসক গোষ্ঠী সেটাই চেয়েছে। স্বাধীনতার মাধ্যমে আমরা নতুন দেশ পেয়েছিলাম। পাহাড়ের মানুষের স্বপ্ন ছিল সামরিক শাসন আর থাকবে না। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে সামরিক শাসন উঠে গেলেও পাহাড়ে এখনো সামরিক শাসন জারি আছে। সামরিক সরকারে সহায়তা পাহাড়ে বাঙালি ও মুসলমান প্রবেশ করিয়ে পাহাড়কে বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলে দেয়া হলো। পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী চলে না বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, পাহাড়ে অগণতান্ত্রিকতা, সাম্প্রদায়িকতা, উগ্রজাতীয়তাবাদ বিরাজ করছে। সেখানে বাক স্বাধীনতা নেই। চুক্তি নিয়ে কোন আলাপ করতে দেয় না। সরকার যেভাবে বলে সেভাবে বলতে বাধ্য করে। শুভেচ্ছা বক্তব্যে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, পার্বত্য চুক্তির ২৫ বছর পার হয়েছে। তবু এত দিনেও পাহাড়ি মানুষের মন ভাল নাই। পার্বত্য চুক্তি অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়ন হলে পাহাড়িদের সঙ্গে বাঙ্গালী ভাই-বোনদের জন্যও ভাল। রাষ্ট্রকে সকল মানুষের অধিকার দিতে হবে। আদিবাসীদের অধিকার রক্ষায় সব কটি চুক্তি বাস্তবায়ন করতে হবে। তার সঙ্গে একমত পোষণ করে রবীন্দ্রনাথ সরেন বলেন, চুক্তি বাস্তবায়ন হবে কিনা, সেটা নিয়ে শঙ্কায়। পাহাড়ে নারীরা সবচেয়ে হুমকির মধ্যে। ধর্ষণ, গণ-ধর্ষণের বিচার হয় না। আদিবাসীদের পক্ষে কেউ দাড়াতে চায় না। আওয়ামীলীগ সরকারে আমলে সমতল আদিবাসীদের জন্য ভুমি কমিশন করার কথা ছিল। কিন্তু হয়নি। এখন মাত্র ৮ ভাগ আদিবাসীদের কাছে ভুমি আছে। আদিবাসীরা আর এই সরকারকে বিশ্বাস করতে চায় না। তিন টার্ম চলে গেলো কিছু হলো না। এই সরকার আমাদের কথা শুনেনি, শুনবে না। চুক্তি বাস্তবায়নে পাহাড়ি বাঙ্গালিদের ঐক্যবদ্ধ লড়াই ডাক দেয় বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স। তিনি বলেন, সরকারকে প্রশ্ন করতে চাই আজ থেকে ২৫ বছর আগে চুক্তি তো আপনারাই করেছেন। কিন্তু তা কেন এখনো বাস্তবায়ন হচ্ছে না? ২৫ বছরে দাঁড়িয়ে আমরা রোড ম্যাপ বাস্তবায়ন দেখতে চাই। এই সকল চুক্তির বাস্তবায়ন আপনাদেরই (আওয়ামী লীগ) করতে হবে। কারণ চুক্তি আপনারাই করেছেন। আমরা আদিবাসীদের নাগরিক ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি চাই। রাষ্ট্রের শক্তি দিয়ে কতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা যায়, শান্তি পাওয়া যায়না বলে মনে করেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল। সামরিক বাহিনী দিয়ে বল প্রয়োগ করে সমাধান করলে হবে না। পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যার সমাধান রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে করতে হবে। রাজনীতি থেকে অস্ত্রের প্রয়োজন দূর করতে হবে। তবে বর্তমানে আদিবাসীদের অস্তিত্ব প্রায় বিলুপ্তির পথে, তাই অস্তিত্ব রক্ষায় পাহাড়ী তরুণদের মূলধারার রাজনীতিতে আসা প্রয়োজন বলে মনে করেছেন কবি ও সাংবাদিক সোহরাব হাসান। তিনি বলেন, নির্মম সত্য হল আজকে ২৫ বছর পর এসে উপজাতী বা আদিবাসীদের অস্তিত্ব প্রায় বিলুপ্তির পথে। অধিকার আদায় করতে হলে তরুণদের সামনে আসতে হবে। পাহাড়ি তরুণদের মূলধারার রাজনীতিতে আংশ নিতে হবে। এছাড়া আলোচনা সভায় আরো অংশ নেন ঐক্য ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. আসাদুল্লাহ তারেক, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক আন্তর্জাতিক কমিশনের সদস্য খুশী কবির, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অলিক মৃ প্রমুখ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App