×

মুক্তচিন্তা

বিয়েবিচ্ছেদ ও বাস্তবতা

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২২, ০১:৪৯ এএম

বিয়েবিচ্ছেদ ও বাস্তবতা

একটি সংসারের শ্রীবৃদ্ধির জন্য একজন স্ত্রীর ভূমিকা যেমন আছে তেমন স্বামীরও আছে। একটি সংসারে স্বামী আর স্ত্রীর মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকলে সেই সংসারের সন্তানগুলো শ্রদ্ধাবান হয়। সংসারে শ্রদ্ধাবান ছেলেমেয়ে না আসলে সমাজে বিশৃঙ্খলা দেখা যাবে। বিশৃঙ্খল সমাজে বিভিন্ন অপরাধ সংঘটিত হবে। মানুষের মধ্যে হানাহানি সৃষ্টি হবে। কেউ কাউকে শ্রদ্ধা করবে না। এত কিছু জানার পরও অনেকে আবেগতাড়িত হয়ে অথবা বিবিধ সমস্যার কারণে বিয়েবিচ্ছেদের মতো সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। ডিভোর্স বলুন অথবা তালাক বলুন কোনোটাই আমাদের জন্য সুখকর হতে পারে না। এই বিচ্ছেদের সঙ্গে শুধু দুজন মানুষ না, দুটি পরিবারের সবাই জড়িত। নিজেদের যে সন্তান আছে সেই নিষ্পাপ সন্তানগুলোর প্রতি মারাত্মক অবহেলা হয় বিয়েবিচ্ছেদের মাধ্যমে। বিয়ের মাধ্যমে নতুন একটি সংসারের যাত্রা হয়। কিন্তু সংসার ভাঙনের এই প্রবণতা টিভি সিরিয়ালের মতো দিন দিন কেবলই বাড়ছে। সংসার সাজানোর জন্য ধৈর্য ও পারস্পরিক বোঝাপড়া খুব প্রয়োজন। বিয়েবিচ্ছেদ কখনো মঙ্গলজনক নয়। বিচ্ছেদ কখনোই সুখকর হয় না। সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা জরুরি। দুজন কিছুটা সচেতন ও আগ্রহী হলে বিয়েবিচ্ছেদ আটকানো যেতে পারে। তাই সবার উচিত একটি সুখী, সুন্দর পরিবার গড়ে তোলা। অনেক বিচ্ছেদের ফলে তাদের সন্তানরা স্নেহ, ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়। পরিবারের মধ্যে ধর্মীয় শিক্ষা, পারস্পরিক মর্যাদা থাকা প্রয়োজন। বিয়েবিচ্ছেদ নয় বরং স্বামী-স্ত্রীর গুণে সংসার উষ্ণ থাকুক আজীবন এমনটাই চাওয়া। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, বর্তমানে জনসংখ্যার ক্ষেত্রে প্রতি হাজারে ১০.৮ শতাংশ নারী এবং ১.৫ শতাংশ পুরুষ বিয়েবিচ্ছেদ করছেন। এতে দেখা যায়, নারীরা বেশি বিচ্ছেদের ঝুঁকিতে রয়েছে। গ্রামাঞ্চলে বিচ্ছেদের হার প্রতি হাজারে ১.৩ শতাংশ এবং শহরে ০.৮ শতাংশ। গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, অপ্রাপ্ত বয়স্ক বৈবাহিক বন্ধনে যারা আবদ্ধ হয় তারা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। বিয়েবিচ্ছেদের ভয়ংকর ছোবলে ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছে অগণিত পরিবার। অবশ্য মা-বাবার বিচ্ছেদের কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সন্তানরা। আমাদের সমাজে আদিকাল থেকে প্রচলিত প্রথা- ছেলে বিয়ে করে বাবা, মা, ভাই, অবিবাহিত বোনের সঙ্গে স্ত্রীসহ একই বাসায় বাস করে এবং এটিই সমাজে পছন্দনীয়। বাবা-মাও আশা করে ছেলের বৌ তাদের সঙ্গে থেকে তাদের সেবা-যতœ করবে। এসব দায়িত্বে অবহেলা হলে বা পালনে কিছু কমতি হলে পরিবারে অশান্তি শুরু হয়, শাশুড়ি-বৌ মনোমালিন্য, একে অপরের নামে অভিযোগ, ঝগড়া ইত্যাদি তখন নিত্য বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। এ অবস্থার অবনতি ঘটতে ঘটতে এমন অবস্থায় পৌঁছায় যে একসময় পরিবার থেকে, বিশেষত মা-বাবার পক্ষ থেকেও, অনেক সময় ছেলের ওপর চাপ আসে অন্য পরিবার থেকে আসা বৌকে তালাক দিতে। ফলে অনেক ক্ষেত্রে মা-বাবার প্রতি বাধ্য থাকা এবং তাদের খুশি করার জন্য স্ত্রীর ওপর অন্যায় তালাক চাপিয়ে দিয়ে তাকে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দেয়া হয়। মেয়েদের শিক্ষার হার বেড়ে গেছে। আগের যুগের নারী আর বর্তমান যুগের নারীদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে অনেক ব্যবধান। তখনকার দিনে সব কর্তৃত্ব ছিল পুরুষের হাতে। নারীরা চুপ থেকে সব মেনে নিত। কিন্তু বর্তমানে নারীরা নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে শিখেছে। পুরুষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে শিখেছে। পাশাপাশি পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার বিরুদ্ধে তারা প্রতিবাদও করছে। স্বামী অথবা পরিবার কর্তৃক শারীরিক, মানসিক, অর্থনৈতিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে কথা বলছে। সংসার পরিচালনার জন্য স্বামী এবং স্ত্রী দুজনকেই একসঙ্গে হাতে হাত রেখে চলতে হয়। শুধু আবেগ নয়, প্রয়োজন পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, দায়িত্ববোধ ও বিশ্বাস। মাঝে মাঝে সংসারের জন্য হলেও ত্যাগ স্বীকার করুন। প্রত্যেক মেয়েরই বিয়ের পরে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। অনেক পুরুষ আছে স্ত্রীকে বাবার বাড়িতে যেতে দিতে চায় না বা যাওয়া পছন্দ করে না। সেটা কিন্তু ভালোবেসে না পাছে তার মা-বাবা, ভাই-বোনের খাওয়ার সমস্যা হবে বা বাড়িতে কাজের সমস্যা হবে তাই। কিন্তু দেখা যায় তার বিবাহিত বোনটা মাসের পর মাস বাবার বাড়িতে বেড়ালেও কোনো সমস্যা হয় না। এ ধরনের মানসিকতাগুলো আমাদের ত্যাগ করতে হবে। আমাদের সন্তানদের দিকে তাকিয়ে পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নে সচেষ্ট থাকতে হবে। একটা আদর্শ সংসার একজন সন্তানকে সুসন্তান হিসেবে গড়তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই আসুন, সম্পর্ক সুন্দর করে আমাদের সংসারগুলো টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করি।

রূপম চক্রবর্ত্তী : লেখক, চট্টগ্রাম। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App