×

জাতীয়

পাকিস্তানকে সৈন্য অপসারণের আহ্বান ইন্দিরা গান্ধীর

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২২, ১০:১৪ এএম

পাকিস্তানকে সৈন্য অপসারণের আহ্বান ইন্দিরা গান্ধীর

ছবি: প্রতীকী

ডিসেম্বর। এই ডিসেম্বর উনিশ শত একাত্তরের। লাশের পাহাড়ের নিচ থেকে বেরিয়ে বিজয় গর্বে মাথা উচুঁ করে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছে ফিনিক্স পাখি বাংলাদেশ। মৃত্যু উপত্যকা ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের ভূখণ্ড তখন রক্তের হোলিখেলা। জেনারেল ইয়াহিয়া খানের শাসনাধীন পাকিস্তান তাদের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের নিক্সন সরকারের স্টেট ডিপার্টমেন্ট গোপনীয় চিঠি চালাচালিতে স্পষ্টই জেনেছে অদূরেই নিশ্চিত পরাজয়।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র অষ্টম, একাদশ ও দ্বাদশ খণ্ড থেকে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ঘটনাবহুল একটি দিন ১ ডিসেম্বর। এদিন বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানকে সেনা অপসারণের আহ্বান জানান ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। দিল্লিতে রাজ্যসভার অধিবেশনে দেয়া এক বক্তৃতায় উপমহাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার স্বার্থে বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানি সৈন্য অপসারণের নির্দেশ দেয়ার জন্য ইয়াহিয়া খানের প্রতি আহ্বান জানান ইন্দিরা গান্ধী। তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানি সৈন্য অপসারণই সমস্যার শ্রেষ্ঠ সমাধান। ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য বাংলাদেশ ও ভারতের জনসাধারণকে প্রস্তুত থাকতে হবে।

একই দিন (দৈনিক ইত্তেফাক ২ ডিসেম্বর ১৯৭১ প্রকাশিত) রাওয়ালপিন্ডি থেকে জানানো হয়, ভারত পাকিস্তানের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে। পাকিস্তানি ফাইটারের ধাওয়ায় ভারতীয় জাহাজ চলে গেলেও চৌগাছায় মাটি থেকে শত্রæর গুলিতে তাদের স্যাবর যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হয়েছে। রাওয়ালপিন্ডি থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের মুখপাত্র জানান, ভারত সংঘর্ষ তীব্রতর করে পাকিস্তানকে যুদ্ধের দিকে টেনে আনছে, যদিও পাকিস্তান বরাবরই শান্তি বজায় রাখার এবং যুদ্ধ পরিহার করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

১ ডিসেম্বর নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে গেরিলা তৎপরতা বাড়ার কারণে পশ্চিম পাকিস্তানি সামরিক জান্তার নির্দেশে সামরিক বাহিনীর লোকেরা পুনরায় গ্রামবাসীদের হত্যা এবং বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়ার বর্বর অভিযান শুরু করেছে। গেরিলা সন্দেহে জিঞ্জিরার কতজন যুবককে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে হত্যা করেছে তার সঠিক হিসেব নেই। বুড়িগঙ্গার অপর পারের এই গ্রামটিতে অন্তত ৮৭ জনকে সামরিক বাহিনীর লোকেরা হত্যা করেছে। এদের অধিকাংশই যুবক। নারী এবং শিশুরাও ওদের হাত থেকে রেহাই পায়নি।

মৃত্যু উপত্যকায় জীবনের জয়গান : বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র অষ্টম, একাদশ ও দ্বাদশ খণ্ড থেকে জানা গেছে, গাজীপুরের কালীগঞ্জে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাহাদুরসাদী ইউনিয়নের খলাপাড়া গ্রামে ন্যাশনাল জুট মিলের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ওপর পৈশাচিক গণহত্যা চালায়। এই গণহত্যায় শহীদ হন ১৩৬ জন নিরীহ মানুষ। দিনাজপুরের ময়দান দিঘির কাছে পুটিমারীতে অবস্থানরত মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনী সম্মিলিতভাবে দুপুর ১২টায় হানাদার বাহিনীর উপর আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণে মুক্তিবাহিনীর ৫ জন ও ভারতীয় বাহিনীর ৫৫ জন হতাহত হন। এরপর যৌথবাহিনী ময়দান দিঘি দখল করে। এদিন বিকালে মুক্তিবাহিনী বোদা থানার কাছে পৌঁছালে হানাদার বাহিনী তাদের উপর হামলা চালায়।

যৌথবাহিনী হানাদারদের হেডকোয়ার্টার আক্রমণ করলে হানাদার বাহিনীর সঙ্গে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। এসময় ভারতীয় আর্টিলারির ক্যাপটেন সুধীর শহীদ হন। এদিন সন্ধ্যায় বোদা থানা মুক্ত হয়। এই যুদ্ধে হানাদার বাহিনীর ৬০/৭০ জন সৈন্য হতাহত হয়। পরে ভারতীয় বাহিনী বোদা থানায় অবস্থান নেয়। মুক্তিবাহিনী বোদা থেকে তিন মাইল সামনে ঠাকুরগাঁও এর পথে ডিফেন্স নেয়। এ রাতে ভুলক্রমে ভারতীয় বাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর মধ্যে গোলাগুলির কারণে ২০/২৫ জন ভারতীয় জোয়ান হতাহত হন এবং মুক্তিবাহিনীর খাদ্য ও রান্না বহনকারী পার্টির ৪/৫ জন শহীদ হন।

সিলেটের শমসের নগর ও কুষ্টিয়ার দর্শনা দখল লড়াইয়ের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে। এদিন রাতে কর্নেল শফিউল্লাহ, দ্বিতীয় বেঙ্গলের কমান্ডিং অফিসার মেজর মঈন, ১১ বেঙ্গলের কমান্ডিং অফিসার মেজর নাসিমের নেতৃত্বে মুজিব বাহিনী ও বেঙ্গল রেজিমেন্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেরানী, সিঙ্গারাইল, গৈরালসানী, রাজাপুর ও আজমপুর এলাকা শত্রুমুক্ত করে। যুদ্ধে মুজিববাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা ইয়াসিন খাঁ (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) শহিদ হন। আর ২৩ জন পাকসেনা নিহত হয়। কুষ্টিয়ার কাছে মুন্সীগঞ্জ ও আলমডাঙ্গা রেলস্টেশনের মধ্যে মুক্তিসেনারা মাইন বিস্ফোরণের মাধ্যমে পাক সৈন্যবাহী ট্রেন বিধ্বস্ত করে। এতে বহু পাকসেনা হতাহত হয়। সিলেটের ছাতক শহরে মুক্তিবাহিনী ও পাকসেনাদের মধ্যে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে ৬৫ জন রাজাকার নিহত হয়। আর মুক্তিযোদ্ধারা সুনামগঞ্জ মৌলভীবাজার মুক্ত করে সামনে এগিয়ে যায়। কুমিল্লার কসবা রণাঙ্গনে মুক্তিবাহিনীর হাতে ৬০ জনের বেশি পাকসেনা নিহত হয়।

এদিকে সাতক্ষীরা মহকুমার কালিগঞ্জ পাকবাহিনী মুক্ত হওয়ায় বিপ্লবী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ এম কামরুজ্জামান, ফণীভূষণ মজুমদার, তোফায়েল আহমেদ এমএনএ, অর্থসচিব এ জামান, আইজি এম এ খালেক কালিগঞ্জে বেসামরিক প্রশাসন প্রতিষ্ঠাকল্পে সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। অন্যদিকে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়- সিলেট, রংপুর, দিনাজপুর, খুলনা, রাজশাহী ও যশোর জেলার ৬২টি থানা এবং নোয়াখালী জেলার সব চর এলাকায় বেসামরিক প্রশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App