×

জাতীয়

এখনই এলএনজি আমদানির পরিকল্পনা নেই সরকারের

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২২, ০৯:৪১ এএম

এখনই এলএনজি আমদানির পরিকল্পনা নেই সরকারের

ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেও স্পট মার্কেট থেকে বাংলাদেশের এখনই তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির কোনো পরিকল্পনা নেই। দাম আরো সহনীয় ও যৌক্তিক পর্যায়ে আসার পর পেট্রোবাংলা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করবে। এরপর সরকারের অনুমোদন পেলে আমদানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। অন্যদিকে স্পট মার্কেটে এলএনজির দাম ৬৩ শতাংশ কমলেও রিজার্ভ কমে যাওয়া এবং ডলার সংকটের কারণেও এই মুহূর্তে এলএনজি কেনা হচ্ছে না বলে পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গেছে।

এলএনজি আমদানির বিষয়ে পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান জানিয়েছেন, এলএনজির দাম স্পট মার্কেটে গত মে মাসের পর অনেক কমেছে। দাম কমার বিষয়টি আমাদের জন্য ভালো লক্ষণ হলেও আমরা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি। আরো প্রায় দুই মাস পর্যবেক্ষণের পর দাম সহনীয় ও যৌক্তিক পর্যায়ে আসলে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হবে। পরবর্তীতে আমদানির বিষয়টি সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। সরকার আমাদের যে সিদ্ধান্ত দেবে আমরা সেই অনুযায়ী কাজ করব।

জানা গেছে, অনুসন্ধান ও উৎপাদন কমে যাওয়ায় দেশে গ্যাস সংকট তীব্র আকার ধারণ করে। ওই অবস্থায় সংকট মেটাতে সরকার এলএনজি আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়। একই সঙ্গে স্পট মার্কেট থেকেও এলএনজি কেনা শুরু করে। এলএনজি জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ার পর গ্যাস সংকট অনেকটাই কমে যায়। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে রাশিয়া ইউরোপে পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। এই অবস্থায় ইউরোপের দেশগুলো এশিয়ার দেশগুলো থেকে এলএনজি আমদানির ওপর জোর দেয়। ইউরোপের দেশগুলোর অর্থের অভাব না থাকায় এবং শীত মৌসুম মোকাবিলার জন্য অপেক্ষাকৃত বেশি দামে এলএনজি কিনতে শুরু করে।

এর ফলে জুন মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে হু হু করে এলএনজির দাম আকাশ ছুঁতে শুরু করে। জুলাই মাসের শুরুতে প্রতি মিলিয়ন মেট্রিক ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিটের (এমএমবিটিইউ) দাম ৩৭ ডলারে উঠলে জ¦ালানি বিভাগ এলএনজি আমদানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর গত ২৫ আগস্ট এলএনজির দাম বেড়ে ইতিহাসের সর্বোচ্চ হয়। জাপান-কোরিয়া মার্কার (জেকেএমসি ১) দাম প্রতি এমএমবিটিইউর এলএনজির দাম ৬৯ ডলার ৯৬ সেন্টে পৌঁছে। তবে গত সপ্তাহে এলএনজির দাম ২৫ ডলার ৮৮ সেন্টে নেমেছে।

জ¦ালানি বিভাগ ও পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দাম ৬৩ শতাংশ কমলেও এখনো কেনার কোনো সিদ্ধান্ত সরকারের নেই। দাম বাড়ার পর সরকার ১ বছরের জন্য এলএনজি না কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। এখন সরকারের হাতে পর্যাপ্ত ডলার নেই। অর্থ বিভাগের কাছ থেকে যে টাকা পাওয়া যাচ্ছে তা

দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির অধীনে এলএনজি কিনতেই খরচ হয়ে যাচ্ছে। স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনার মতো অবস্থা এখনো তৈরি হয়নি। আগামী এক থেকে দুই মাস দাম ওঠানামার বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন এন্ড মাইনস ও পরিকল্পনা) প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান খান জানান, স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনার কোনো পরিকল্পনা নেই। আরো সহনীয় পর্যায়ে এলে চিন্তা করা হবে।

অপর একটি সূত্র জানায়, দেশে উৎপাদন বাড়ানোর জন্য শিল্পকারখানায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে আবাসিকে গ্যাসের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এখন সরকার চাইলে এলএনজি আমদানির সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তবে তা একেবারেই সহজ নয়। এজন্য সরকারকে প্রচুর অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে। বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দের মতো সক্ষমতা এখনো সরকারের নেই। তাছাড়া দেশীয় গ্যাসক্ষেত্রগুলো অনুসন্ধান ও খনন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ওইসব গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। সেই আশায় পেট্রোবাংলা ও সরকার আরো কিছুটা সময় নিতে চায়। এ কারণেই আন্তর্জাতিক বাজার পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তবে সবকিছুই সরকারের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বদরূল ইমাম বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দাম কমলেও আমাদের সরকারের এখনই এলএনজি কেনার মতো অবস্থা আছে কিনা তা ভেবে দেখতে হবে। পুরো বিষয়টি অর্থের ওপর নির্ভর করে। বর্তমান দামেও এলএনজি কেনা সরকারের জন্য ব্যাপক ব্যয়বহুল হবে। সিদ্ধান্তের আগে কিছুটা সময় নেয়া উচিত। এখন কমেছে, আবার কয়েকদিন পর দাম বেড়েও যেতে পারে। আমি মনে করি, দেশীয় যেসব সম্ভাবনাময় গ্যাসক্ষেত্রগুলোর সন্ধান পেট্রোবাংলা পেয়েছে এবং খনন কাজ শুরু করেছে, সেগুলো খনন এবং উৎপাদন বাড়ানোর ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্বারোপ করা উচিত।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App