×

জাতীয়

আদালতের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আসেনি কার্যকর পরিবর্তন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২২, ০৮:৪৯ এএম

আদালতের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আসেনি কার্যকর পরিবর্তন

ফাইল ছবি

সম্প্রতি রাজধানীর আদালত এলাকা থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনতাইয়ের ঘটনার পর ঘটনাস্থল ঢাকার নিম্ন আদালতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। তবে এখনো প্রচলিত নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেনি। অস্থায়ীভাবে বসা দোকান ও ফেরিওয়ালা উচ্ছেদ, গাড়ি পার্কিং নিষেধসহ আদালত পাড়ায় পুলিশ সদস্যদের বাড়তি উপস্থিতি দেখা গেছে। তবে হাজতখানা থেকে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) আদালতে তুলতে আগের মতোই আসামিদের সদরঘাটগামী রাস্তা (যেখানে জঙ্গি ছিনতাই হয়) ঘুরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে পুলিশকে অর্থের বিনিময়ে আসামিদের সঙ্গে স্বজনদের দেখা-কথা বলার প্রচলিত সুযোগ-সুবিধা এখনো বহাল তবিয়ত আছে। এখনো দেদারসে চলছে অর্থের বিনিময়ে আসামিদের সঙ্গে স্বজনদের সাক্ষাৎ ও তাদের খাবার সরবরাহের সুযোগ। এতে করে চাঞ্চল্যকর জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনার পরও নিম্ন আদালতে ‘কার্যকর পরিবর্তন’ আসেনি বলে মনে করছেন আদালত সংশ্লিষ্টরা।

সরেজমিন আদালত চত্বর ঘুরে দেখা যায়, হাজতখানা থেকে আসামিদের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তুলতে এখনো সদরঘাটগামী রাস্তা ঘুরিয়ে নেয়া হচ্ছে। তবে আগের চেয়ে পুলিশ প্রশাসন আসামি তোলার ক্ষেত্রে সতর্ক রয়েছে। কিন্তু রাস্তা ঘুরিয়ে আসামি তোলায় জঙ্গি ছিনতাইয়ের মতো ঘটনার ঝুঁকি এখনো থেকেই যাচ্ছে। দেখা যায়, চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পেছনের গেট এখনো বন্ধ। এটি নিয়েও আদালত পাড়ায় আলোচনা সবার মুখে মুখে। ওই গেট খোলা থাকলে আসামিদের হাজতখানা থেকে সরাসরি এজলাসে তোলা যেত বলে মনে করছেন তারা। তবে বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় বাড়তি নিরাপত্তা দিয়ে আসামিদের আদালতে তোলা হচ্ছে বলে জানায় আদালতের পুলিশ কর্তৃপক্ষ।

অন্যদিকে আসামিদের সঙ্গে তাদের স্বজনদের দেখা-সাক্ষাৎ ও খাবার দেয়া আগের মতোই চলছে। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালতের বটতলায় মাদক মামলার এক আসামিকে প্রিজন ভ্যানে তোলার সময় তার বাবা জোরে ডাক দিয়ে বলেন, ‘খাবার পাইছিস তো, ২০০ টাকা লাগছে খাবার দিতে।’ তাদের পরিচয় জানতে চাইলে পুলিশ সদস্যরা তাদের বারণ করে দেন। এছাড়া এজলাস কক্ষ থেকে আসামিদের হাজতখানায় নিয়ে যাবার সময় সিঁড়িতে কিংবা লিফটে গোপনে টাকা নিয়ে খাবার দেয়া ও আসামিদের স্বজনদের সাক্ষাতের সুযোগ দিতে দেখা গেছে। এমন ঘটনা এখনো হরহামেশা ঘটতে দেখা যাচ্ছে আদালত পাড়ায়। এরই মধ্যে জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় তদন্তে বের হয়েছে, মামলার হাজিরার সময় সাক্ষাতে জঙ্গি আসামিদের সঙ্গে একমাস ধরে সংগঠনের নেতাদের ছিনতাই পরিকল্পনা নিয়ে কথা হয়। ওইসময় জঙ্গিদের কাছে মোবাইল ফোন সরবরাহ করা হয়। পরে কারাগারে বসেই জঙ্গি সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয় তাদের। অর্থের বিনিময়ে আসামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও খাবার দেয়ার এই সুযোগই ছিনতাই পরিকল্পনাকে সফল করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে করে খাবারের প্যাকেটের সঙ্গে আসামিদের কাছে মোবাইল ফোন দেয়ার ঝুঁকি ও কারাগারে বসে শীর্ষ সন্ত্রাসীরা তাদের অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণ করার খবরও নানা সময় উঠে আসে।

টাকার বিনিময়ে আসামিদের এসব সুবিধা দেয়ার বিষয়ে ঢাকা মহানগর আদালতের হাজতখানার ইনচার্জ আব্দুল হাকিম বলেন, টাকার বিনিময়ে এসব কোন সুবিধা এই আদালতে হয় না। আগের চেয়ে আসামিদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো জোরদার করা হয়েছে। আদালত চত্বরে কোনো হকারের দোকান নেই। মোটরসাইকেল পার্কিংও বন্ধ করা হয়েছে। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ আসামি নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বুলেটপ্রæফ জ্যাকেট, হেলমেট ব্যবহার করা হচ্ছে। আসামিদের ডাণ্ডাবেড়ি পরানো হচ্ছে। আদালতে আসামিদের খাবারের কোনো ব্যবস্থা থাকে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের হাজতখানায় খাবারের কোনো ব্যবস্থা নেই। আসামিদের হাজিরার জন্য রাত ৩-৪টার দিকে কারাগার থেকে রওনা দেয়া হয়। শুনানি শেষে বিকালে আবার কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। সারাদিন আসামিরা না খেয়ে কাটায়। স্বজনরা খাবার দিতে চাইলেও আমরা দিই না।

আদালতে ঢাকা মহানগর অপরাধ, তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার জসিম উদ্দিন বলেন, অর্থের বিনিময়ে আসামিদের খাবার দেয়া বা স্বজনদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ আগেও ছিল না, এখনো নেই। যদি কেউ করে থাকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বাড়তি পুলিশি নিরাপত্তা দিয়ে হাজতখানা থেকে আসামিদের রাস্তা ঘুরিয়ে সিজেএম আদালতে তোলা হচ্ছে। সিজেএম আদালতে পেছনের গেট বন্ধ থাকার বিষয়ে জানতে চাইল তিনি বলেন, ওই গেট বিচারকরা ব্যবহার করেন। গেট বন্ধ থাকবে, নাকি খোলা থাকবে তা আদালতের ব্যাপার। আদালতের নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুরো আদালত চত্বর সিসি ক্যামেরার আওতায় আনতে নতুন করে আমরা চাহিদাপত্র দিয়েছি। এছাড়া আদালত প্রাঙ্গণের অস্থায়ী দোকান ও গাড়ি পার্কিং তুলে ফেলা হয়েছে।

আদালত প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের সামনে আগের চিরচেনা হকারদের হাকডাক, অস্থায়ী দোকান ও মোটরসাইকেল পার্কিং নেই। আদালতের সামনে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আগে বিশেষ মামলা ছাড়া বুলেটপ্রæফ জ্যাকেট পরে আদালতে নিরাপত্তা দিতে তেমন না দেখা গেলেও এখন সবাই জ্যাকেট পরে সতর্কভাবে দাঁড়িয়ে আছেন।

উল্লেখ্য, গত ২০ নভেম্বর দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ঢাকার সিজেএম আদালত প্রাঙ্গণ থেকে পুলিশের চোখে স্প্রে মেরে প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়া হয়। এরপরই আদালত চত্বরের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। নড়েচড়ে বসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App