×

জাতীয়

জাপা থেকে শুধু মোস্তফা আ.লীগে একাধিক প্রার্থী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০২২, ০৮:৫৫ এএম

জাপা থেকে শুধু মোস্তফা আ.লীগে একাধিক প্রার্থী

মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা

উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে গতকাল মঙ্গলবার রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচনের প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তবে সব উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার অবসান ঘটিয়ে জাতীয় পার্টির (জাপা) একক প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন সদ্য বিদায়ী মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। জাতীয় পার্টিতে রওশন এরশাদপন্থি হিসেবে আলোচনায় থাকা সাবেক পৌর মেয়র আব্দুর রউফ মানিক মনোনয়নপত্র কিনলেও শেষ পর্যন্ত তা জমা দেননি। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে একাধিক প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

গত সোমবার রাতে ঢাকার একটি হোটেলে মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাকে সমর্থন দেন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ। ফলে নির্ভাবনায় জাতীয় পার্টির একক প্রার্থী হিসেবে রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মাঠে থাকছেন মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিন দুপুরে রংপুর আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়ে গিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা আব্দুল বাতেনের কাছে মনোনয়ন পত্র জমা দেন জাপা প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। এরপর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সবার সহযোগিতায় রংপুরে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে। রংপুরে জাতীয় পার্টির মধ্যে কোন ধরনের বিভেদ নেই। রংপুরের মানুষ সিদ্ধান্ত নিতে কখনো ভুল করেনি, এবারো করবে না। আগামী ২৭ তারিখ ভোটাররা লাঙ্গল মার্কায় ভোট দিয়ে আমাকে পুনরায় নির্বাচিত করবে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মেয়র পদে যারা লড়বে তারা সবাই আমার প্রতিদ্বন্দ্বী। এখানে কাউকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। ইভিএম একটি যন্ত্র, এর পিছনের কারিগররা যদি নিরপেক্ষ থাকে তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভাপতি এস এম ইয়াসির, সিনিয়র সহ-সভাপতি লোকমান হোসেন, সহসভাপতি জাহিদুল ইসলাম, জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল মাসুদ চৌধুরী নান্টু, সদস্য সচিব আব্দুর রাজ্জাক, নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব আনিছুর রহমান আনিছ প্রমুখ।

এদিকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া গতকাল দুপুর দুইটায় দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, রংপুরের মানুষ নৌকা মার্কায় ভোট দিতে উদগ্রিব হয়ে আছে। ২৭ ডিসেম্বর হবে নৌকা মার্কার বিজয়ের দিন। জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা এখন ঐক্যবদ্ধ। তাদের সবার সহযোগিতা এবং সাধারণ মানুষের দোয়া ও সমর্থন নিয়ে এবার নৌকার জয় হবে ইনশাআল্লাহ।

দলীয় অপর প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে এখনই কিছু বলার নেই। সময় এখনো আছে। শেষ পর্যন্ত তারা নাও থাকতে পারেন। বিষয়টি কেন্দ্রীয় নেতারা অবগত আছেন। এ বিষয়ে তারাই ব্যবস্থা নেবেন।

মনোনয়নপত্র জমাদানের সময় প্রার্থীর সাথে ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রেজাউল করিম রাজু, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিউর রহমান সফি ও সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মন্ডল প্রমুখ।

তবে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনীত প্রার্থী ছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন মহানগরের আওতাধীন কোতয়ালি থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ইঞ্জিনিয়ার লতিফুর রহমান মিলন এবং মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আতাউর জামান বাবু। বিএনপি এই নির্বাচনে অংশ নেবে না তা আগেই ঘোষণা দেয়া হয়। তবে জামায়াতে ইসলামী রংপুর মহানগরের সাবেক আমির মাহবুবুর রহমান বেলাল এতদিন প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে আসলেও শেষ পর্যন্ত তিনি মনোনয়ন জমা দেননি। এছাড়া জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ-ইনু) শফিয়ার রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমিরুজ্জামান পিয়াল, খেলাফত মজলিশের তৌহিদুর রহমান মন্ডল রাজু, জাকের পার্টির খোরশেদ আলম খোকন, বাংলাদেশ কংগ্রেস পার্টির আবু রায়হান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেহেদী হাসান বনি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেন জানান, মনোনয়ন দাখিলের শেষ সময় পর্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে মেয়র পদে ১০ জন, ১১টি সংরক্ষিত নারী আসনে ৬৯ জন এবং ৩৩টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১৯৮জনসহ মোট ২৭৭ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

নিয়ম অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ৮ ডিসেম্বর। প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে পর দিন ৯ ডিসেম্বর। আগামী ২৭ ডিসেম্বর তৃতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হবে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন। ২২৯টি কেন্দ্রে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ইভিএমে ভোটগ্রহণ করা হবে।

২০১২ সালের ২৮ জুন ৩৩টি ওয়ার্ড নিয়ে রংপুর সিটি কর্পোরেশন গঠনের পর ঐ বছরের ২০ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীক ছাড়া নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেবার ১ লাখ ৬ হাজার ২৫৫ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু। নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৭৪২ জন।

দ্বিতীয় মেয়াদে ২০১৭ সালের ২১ ডিসেম্বর দলীয় প্রতীকে অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা ১ লাখ ৬০ হাজার ৪৮৯ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। ২০১৭ সালে ভোটার সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৯৯৪ জন। এবার ভোটার সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪ লাখ ২৬ হাজার ৪৬৯ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ১২ হাজার ৩০২ জন এবং নারী ভোটার ২ লাখ ১৪ হাজার ১৬৭ জন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App