×

মুক্তচিন্তা

ডিম পাড়ে হাঁসে, খায় বাঘডাশে

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৯ নভেম্বর ২০২২, ০১:৫৭ এএম

বাংলায় একটি প্রবাদ বহু আগে থেকেই লোকমুখে চলে আসছিল। প্রবাদটি নিয়েই লেখার শিরোনাম করেছি। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক নানা প্রতিশ্রæতি শুনে এই প্রবাদটি নতুন প্রজন্মের তরুণদের মনে করিয়ে দিতেই এই উদ্যোগ। প্রবাদটি একসময় স্বাধিকার আন্দোলনে কবি, শিল্পীদের জাগরণী সংগীত রচনায় উদ্বুুদ্ধ করেছিল। ফেরদৌস হোসেন ভূঁইয়া নামে একজন চারণকবি প্রবাদটি নিয়েই রচনা করেছিলেন, ‘ডিম পাড়ে হাঁসে খায় বাঘডাশে। শুনছোনি ভাই শুনছোনি, বুঝছোনি ভাই বুঝছোনি। আসল কথা বুঝছোনি…’ গীতিকবিতাটি। এই গীতিকবিতাটির একটি চমৎকার সুর দিয়ে ৬০ এর দশকে পূর্ব বাংলায় জাগরণ সৃষ্টির ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখেছিলেন কুমিল্লার প্রখ্যাত গণসংগীতশিল্পী, গীতিকার, সুরকার ও সংগীত-পরিচালক সুখেন্দু চক্রবর্তী (১৯২৮-১৯৮০)। এটি ছিল মূলতই, কষ্ট করে হাঁস ডিম পাড়ে আর বাঘডাশে সেটি খেয়ে ফেলে। এই বাস্তবতাটি দেখেই আমাদের পূর্বপুরুষরা মুখে মুখে প্রবাদটি উচ্চারণ করেছেন। আধুনিককালে একজনের কষ্টার্জিত সম্পদ অন্যরা কীভাবে হরণ করে, মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে, সেটির গভীর অন্তরদৃষ্টি দিয়েই গীতিকার এই গানটি রচনা করেছেন। সুরকার ও গীতিকার সুখেন্দু চক্রবর্তী এমন একটি জাগরণী সংগীত স্বাধিকার আন্দোলনে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন, যা মানুষের মুখে মুখে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধেও প্রবলভাবে আকর্ষণ করেছিল। স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর মুখে সাধারণ মানুষের মুক্তির কথা যত শুনেছি, তা থেকে যেন আমরা সব সময় কেবল বঞ্চিতই হয়েছি। কিন্তু যারা মুক্তির কথা বলেছেন, তাদের অনেকেই সেই মুক্তি যেন নিজেরাই গিলে খেয়েছেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলার জন্য আমাদের অবশ্যই নীতি, পরিকল্পনা, লক্ষ্য, আদর্শ, উদ্দেশ্য এবং যোগ্য নেতৃত্ব নিয়ে অগ্রসর হওয়ার কোনো বিকল্প ছিল না। আমাদের তেমন যোগ্য নেতৃত্বও ছিল। মুক্তিযুদ্ধ সেই যোগ্য নেতৃত্বের পরিকল্পনা, নির্দেশনা এবং ত্যাগেই সফল হয়েছিল। যেই নেতৃত্ব এত বড় মুক্তিযুদ্ধ গঠন করতে সফল হয়েছিলেন, তাদের পক্ষে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলা কিছুটা চ্যালেঞ্জের ব্যাপার হলেও মোটেও অসম্ভব ব্যাপার ছিল না। মুক্তিযুদ্ধের সেই নেতৃত্ব আমাদের একটি সংবিধান, প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, জাতীয় শিক্ষানীতি এবং রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গ ও প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার উদ্যোগ একের পর এক গ্রহণ করছিলেন। আমাদের এই নেতৃবৃন্দ একটি আধুনিক রাষ্ট্র কীভাবে গঠিত হতে হয়, কি ধরনের আদর্শ দ্বারা রাষ্ট্রটিকে পরিচালিত করলে সাম্য, ন্যায়বিচার এবং সুখী-সমৃদ্ধ জনজীবন রাষ্ট্রের গড়ে উঠবে- সেটি বঙ্গবন্ধুসহ তার সুযোগ্য সহকর্মীরা জানতেন এবং বুঝতেনও। সেই অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়েই বাংলাদেশ যাত্রা শুরু করেছিল মাত্র। কিন্তু যুদ্ধোত্তরকালের বাস্তবতাকে উপলব্ধি না করে এক শ্রেণির রাজনীতিবিদ উগ্র হঠকারী স্লোগান দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা শুরু করেছিল, ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়নসহ অনেক দেশ এবং বন্ধুরা যারা ১৯৭১ এ সাহায্য ও সহযোগিতা প্রদান করেছিল, তাদের বিরুদ্ধে কুৎসা ও অপপ্রচার শুরু করেছিল। রাতারাতি বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র, কমিউনিজম প্রতিষ্ঠার নামে মানুষের মুখে সোনার ডিম তুলে দেয়ার স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছিল। অতিবিপ্লবীদের এই বিভ্রান্তিকর রাজনীতির আড়ালে চাপা পড়ে গিয়েছিল সমাজ, রাষ্ট্র, রাজনীতির অনেক জরুরি কাজ ও বোধ। এরপর পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির জীবনে বড় বিয়োগান্তক ঘটনা ঘটে গেল। ত্যাগী, মেধাবী, যোগ্য এবং রাষ্ট্র নির্মাতা নেতৃত্বশূন্য হয়ে গেল জাতি। রাষ্ট্র চলে গেল এমন সব ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর হাতে, যারা এই রাষ্ট্র নির্মাণের সামান্যতম কর্মযজ্ঞ চিন্তা করার কোনো পর্যায়েই ছিল না। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অর্জনের অনেক কিছুই এমন সব বাঘডাশে খেয়ে ফেলল, যা আমাদের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ তৈরির আকাক্সক্ষাকে অনেকটাই ধূলিসাৎ করে দিল। বাংলাদেশের আদর্শের রাজনীতিকে তছনছ করে দেয়া হলো। রাজনীতির মাঠে আবির্ভাব ঘটেছিল নতুন নতুন বাঘডাশের- যারা বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের আদর্শকে গিলে খেয়ে ফেলেছিল। ৮০ এর দশকে যখন কিছুটা সম্বিত ফিরে আসতে শুরু করেছিল, তখনই হত্যা ও রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের নতুন ঘটনা ঘটে গেল। এরপর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলো জোটবদ্ধ হয়েছিল, সামরিক শাসন এবং স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়ে দেশকে গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের ধারায় ফিরিয়ে আনার। কিন্তু সেই আন্দোলন কখনো বেগবান, কখনো বেগহীন হয়ে পড়ায় নতুন ছদ্মবেশী রাজনৈতিক দলের আন্দোলনে অংশ নেয়ার ঘটনা ঘটতে থাকে। তৈরি হয় ১৫ দলীয় ও ৭ দলীয় জোট। এক পর্যায়ে যুগপৎ আন্দোলনের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু চিরায়ত রাজনৈতিক ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের রাজনৈতিক দলসমূহ উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছিল পঁচাত্তর পরবর্তী ভাঙাচোরা রাজনীতির ফলে সমাজমানসে যে সাম্প্রদায়িক ও অগণতান্ত্রিক শক্তির উত্থান ঘটেছে- যারা আদর্শের রাজনীতিকে এতদিন গিলে খেয়েছে, এখন তারা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রæতিদাতা হয়েছে। এই বাস্তবতা উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছে রাজনীতির পোড় খাওয়া দল ও নেতৃত্ব। ১৯৯০ সালে তারা ৩ জোটের রূপরেখা প্রণয়ন করেছিল, যেখানে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের ধারায় বাংলাদেশকে ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রæতি দেয়া হয়েছিল। তাতে স্বাক্ষর করেছিল ৮ দল, ৭ দল এবং ৫ দলীয় ঐক্যজোটের নেতৃবৃন্দ। কিন্তু ওই প্রতিশ্রæতির দলিল এরশাদ সরকারের পতনের পর কোনো কোনো জোটের কাছে আর গুরুত্বপূর্ণ থাকেনি। ১৯৯১ এর নির্বাচনে বিএনপি এবং জামায়াত সিট ভাগাভাগির ভোটদানের প্রতিশ্রæতি দিয়ে জয়লাভ করে বের হয়ে এসেছিল। ৩ দলীয় জোটের রূপরেখার দলিল সেদিনই পরিত্যাজ্য হয়ে গেল। ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে বিএনপি সাম্প্রদায়িক ধারারই শুধু রাজনীতিকে ধরে রাখেনি, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকেও নিজেদের মতো করে চালু করার উদ্যোগ নেয়। দীর্ঘ আন্দোলনের পর এরশাদ সরকারের পতন ঘটলেও ডিমটা যারা হাতে তুলে নিয়ে গেল, তারা বাংলাদেশকে পঁচাত্তরের পর থেকে যে সাম্প্রদায়িক এবং স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিদের অভয়ারণ্যে পরিণত করতে তৎপর ছিল। তারা আরো শক্তি সঞ্চয় করতে সক্ষম হলো। স্বাধীনতাবিরোধী, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শবিরোধী সাম্প্রদায়িক মধ্যম, উগ্র ও চরমপন্থার সব শক্তিকে রাজনীতি, অর্থনীতি, রাষ্ট্র, প্রশাসন, সমাজ এবং জনমানসে ছড়িয়ে দেয়ার কাজটি তারা তাদের রাজনৈতিক মিশন হিসেবেই নিয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ এবং অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক আদর্শ বেহাত হয়ে গেল বাঘডাশের কবলে পড়ে। ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে বাংলাদেশে বাঘডাশের চতুর্মুখী আক্রমণ সমাজ, রাষ্ট্র, রাজনীতির সর্বত্র ঘটতে দেখা যায়, অসাম্প্রদায়িক ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও রাজনৈতিক শক্তিকে নির্মূল করার এক দুর্দমনীয় অভিযান পরিচালিত হতে থাকে। বাংলাদেশ রাষ্ট্র কার্যত অচল এবং ব্যর্থ হয়ে পড়ে। ২০০৯ সালের পরও এই অপশক্তির অভ্যুত্থান ঘটানোর বারবার চেষ্টা দেখা গেছে। দেশে ও বিদেশে এই অপশক্তি বাংলাদেশকে আবারো মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের অসাম্প্রদায়িক ধারা থেকে সরিয়ে নেয়ার জন্য চরমপন্থার বিশ্বাসীদের নিয়ে বারবার চেষ্টা করেছে। এখন তারা মনে হয় কৌশল পাল্টেছে। দেশে এখন বিএনপির নেতৃত্বে সরকার হটাও, খালেদা জিয়ার মুক্তি, তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন, রাষ্ট্র মেরামত, সংবিধান সংশোধন, ‘গণতন্ত্রের বন্দোবস্ত’ ইত্যাদি দাবিতে নাম সর্বস্ব বেশ কিছু রাজনৈতিক দল যুগপৎ আন্দোলন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে অদৃশ্যে রয়েছে জামায়াত, জঙ্গিবাদী গোষ্ঠী ও সাম্প্রদায়িক শক্তিসমূহ। ২৫ নভেম্বর দৈনিক ভোরের কাগজ ‘দশ দফা দাবি আদায়ে এক দফার ছক বিএনপির’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপি তাদের সমাবেশে দশ দফা উত্থাপন এবং তা না হলে এক দফায় যুগপৎভাবে সরকার উৎখাতের আন্দোলনে সর্বশক্তি নিয়োগ করার ঘোষণা দিতে যাচ্ছে বলে গণমাধ্যমে আভাস দিচ্ছে। গণআন্দোলনের ১০ দফার খসড়ায় সংসদ বিলুপ্ত করে বর্তমান সরকারের পদত্যাগ; ১৯৯৬ সালে সংবিধানে সংযোজিত ধারা ৫৮-খ, গ ও ঘ-এর আলোকে দল নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন বা অন্তর্র্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন; বর্তমান কমিশন বিলুপ্ত করে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন, খালেদা জিয়াসহ সব বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী, সাংবাদিক ও আলেমদের সাজা বাতিল ও মামলা প্রত্যাহারের পাশাপাশি নতুন মামলায় গ্রেপ্তার বন্ধ ও সভা-সমাবেশে বাধা সৃষ্টি না করা, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ ও বিশেষ ক্ষমতা আইন-১৯৭৪-সহ মৌলিক মানবাধিকার হরণকারী সব কালাকানুন বাতিল; বিদ্যুৎ, জ¦ালানি, গ্যাস, পানিসহ জনসেবার সব খাতে দর বাড়ানোর গণবিরোধী সিদ্ধান্ত বাতিল; নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনা; গত ১৫ বছরে বিদেশে অর্থ পাচার, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত ও শেয়ারবাজারসহ রাষ্ট্রীয় সব ক্ষেত্রে সংঘটিত দুর্নীতি চিহ্নিত করার লক্ষ্যে কমিশন গঠন; গুমের শিকার সব নাগরিককে উদ্ধার, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনার দ্রুত বিচারসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, উপাসনালয় ভাঙচুর ও সম্পত্তি দখলের বিচার এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন ও বিচার বিভাগে সরকারি হস্তক্ষেপ বন্ধ করে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেয়ার কথা বলা হয়েছে। বিএনপি অবশ্য তাদের ২৭ দফা কর্মসূচিকে এই ১০ দফার সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করে যুগপৎ আন্দোলনে ১০ দফা প্রণয়নে ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। এই ১০ দফার মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিলুপ্ত অনুচ্ছেদ খ, গ ও ঘ এর পুনরুজ্জীবন তারা দাবি করছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ৩ মেয়াদে আমাদের চারটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেখতে হয়েছে। এই অভিজ্ঞতা ক্রমেই রাষ্ট্রকে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি কিংবা নাগরিক সমাজের কাউকে দিয়ে ভবিষ্যতে অন্তর্র্বর্তীকালীন বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা আদৌও সম্ভব হবে কিনা সেটি মস্ত বড় প্রশ্ন। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে অনির্বাচিত ব্যক্তিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর সম্পূর্ণ অবৈধ বলেই রায় দেয়া আছে। বিএনপি ক্ষমতা থাকাকালে সংবিধানে কালাকানুন কোনোটিই তো বাতিল করেনি। তখন কি সেগুলো কালাকানুন ছিল না? ভবিষ্যতে কালাকানুন বাতিল করবে এই নিশ্চয়তা কে দেবে? বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে হত্যা, গুম এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর যেসব নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছিল, সেগুলোর তদন্ত হবে না কেন? বিদেশে অর্থ পাচার, দুর্নীতি ইত্যাদির বিচার কেন ২০০৯ সাল থেকে হবে, ২০০১ সাল বা ১৯৯১ সাল থেকে তদন্ত হবে না কেন? বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালেও তো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনের ওপর সরকারের হস্তক্ষেপ ছিল। সেগুলোর কী হবে? বিএনপির মহাসচিব বলেছেন, তারা ১০ দফার মধ্যে রাষ্ট্র সংস্কারের রূপরেখা প্রদান করতে যাচ্ছেন। বিএনপি রাষ্ট্র সংস্কার করার মতো কোনো রাজনৈতিক দল হিসেবে কখনো প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল? সেরকম রাষ্ট্র নির্মাণ অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ নেতৃত্ব কি বিএনপিতে আছে, নাকি এসব বিপ্লবী কথাবার্তা শুনিয়ে কিছু সংখ্যক মানুষকে ‘স্বপ্ন’ দেখানোর পাঁয়তারা হচ্ছে? রাষ্ট্র এত সহজ ব্যাপার নয়। যে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় তাদের কোনো ভূমিকাই ছিল না, বরং পঁচাত্তরের পর থেকে এই রাষ্ট্রের চরিত্র বদলে দিয়েছে, শোষক লুটপাটকারীর অভয়ারণ্যে পরিণত করেছে, তারা কীভাবে আশা করে যে তারা একটি রাষ্ট্রের সংস্কার বা মেরামত করবেন। আর ওই ইঁচড়ে পাকা কিছু অতিবিপ্লবী জ্ঞানশূন্য ‘তত্ত্ববিশারদদের’ বুলি কপচানো কথা শুনিয়ে মানুষকে বোকা বানাবেন? আসলে এসবই হাঁসের ডিম বাঘডাশে খাওয়ার পুরাতন অভিজ্ঞতা ছাড়া আর নতুন কিছু নয়। রাজনীতি যাদের কাছে নিছক গলাবাজি, তত্ত্ববাগীশদের কপচানি, অতীতে যারা এই রাষ্ট্রের জন্য সামান্যতম ত্যাগ স্বীকার করার পরীক্ষা দেননি, কেউ কেউ হ্যামিলনের বংশী বাজিয়ে একাধিক প্রজন্মকে রাজনীতির ঢেউয়ে ডুবিয়ে মেরেছে তারা এখন ‘গণতন্ত্রের বন্দোবস্ত’, রাষ্ট্র সংস্কার ইত্যাদি বুলি আউড়িয়ে আসলে হাঁসের ডিমগুলোই খাওয়ার চেষ্টা করছে। বিএনপি কোনো বিপ্লবী নয় বরং প্রতিবিপ্লবী রাজনৈতিক শক্তি। স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্র ইত্যাদি নিয়ে তাদের নেতাকর্মী-সমর্থকরা বিকৃত ধারণা, ভারতবিরোধিতা এবং সাম্প্রদায়িকতায় আচ্ছন্ন। তাদের হাতে রাষ্ট্র নির্মাণ বা সংস্কারের অর্থ দাঁড়াবে প্রতিসংস্কারের এক নির্মম রূপ। বাংলাদেশের যুগপৎ আন্দোলনের পূর্ব অভিজ্ঞতা হচ্ছে বাঘডাশের মুখেই হাঁসের ডিম তুলে দেয়া। সেটি নতুন করেও হতে যাচ্ছে। সেই অভিজ্ঞতা যখন হবে তখন এই দেশ, এর সংবিধান সবই শেষ হয়ে যাওয়ার বাকি থাকবে না। মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী : অধ্যাপক (অবসরপ্রাপ্ত), ইতিহাসবিদ ও কলাম লেখক। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App