×

জাতীয়

জগলুল আহমেদ চৌধুরী স্মরণসভা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ নভেম্বর ২০২২, ০৮:৪৩ পিএম

জগলুল আহমেদ চৌধুরী স্মরণসভা

মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদিক জগলুল আহমেদ চৌধুরীর ৮ম মৃত্যুবাষির্কী উপলক্ষে স্মরণসভায় বক্তারা। ছবি: ভোরের কাগজ

জগলুল আহমেদ চৌধুরী স্মরণসভা
জগলুল আহমেদ চৌধুরী স্মরণসভা

জগলুল আহমেদ ছিলেন একজন জ্ঞানী ও সাহসী সাংবাদিক

বহুমাত্রিক ব্যক্তিত্ব হিসাবে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন

জগলুল আহমেদ চৌধুরী ছিলেন একজন জ্ঞানী ও সাহসী সাংবাদিক। দেশের প্রতি তার ভালোবাসা ছিলো। তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে লালন করতেন। তার উদার মানসিকতা ও বন্ধুত্বের কাছে আমরা বার বার পরাজিত হয়েছি। একজন বহুমাত্রিক ব্যক্তিত্ব হিসাবে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন। অথচ সড়ক দুর্ঘটনার পর এই খ্যাতিমান সাংবাদিকের দেহ ১০ মিনিট রাস্তায় পড়েছিলো। তদন্ত কমিটি আজো ঘাতক বাসটি শনাক্ত করতে পারেনি।

মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদিক জগলুল আহমেদ চৌধুরী ৮ম মৃত্যুবাষির্কী উপলক্ষে স্মরণসভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। সাবেক খাদ্যমন্ত্রী অ্যাড. কামরুল ইসলামের সভাপতিত্বে স্মরণ সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। আরো ছিলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক হারুন হাবিব, বিশিষ্ট সাংবাদিক আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়া, বার্তা সংস্থা ইএনবি’র সম্পাদক ফরিদ হোসেন, বিশিষ্ট সাংবাদিক মনোজ রায়। এছাড়া জগলুল আহমেদ চৌধুরীর ছেলে নাবিদ আহমেদ চৌধুরী ও তাদের নিকটআত্মীয়রা স্মরণসভায় উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ছিলেন ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত।

স্মরণসভার প্রধান অতিথি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, জগলুল আহমেদ চৌধুরী ছিলেন একজন জ্ঞানী ও সাহসী সাংবাদিক। উপমহাদেশ সম্পর্কে তার গভীর আগ্রহ ছিলো। আমিও তার কাছ থেকে উপকৃত হয়েছি। সব সময় সঠিক তথ্য সংগ্রহ করে তারপর লিখতেন। জগলুল আহমেদ সবসময় উত্তম সাংবাদিকতা করতেন। কিন্তু বর্তমান সময়ের সাংবাদিকরা অনেক অপরিপক্ক। তারা অনেক সময় ভুল তথ্য দেন। বাংলাদেশের সাংবাদিকদের জগলুল আহমেদের মতো সঠিক তথ্য নির্ভর সাংবাদিকতার দিকে নজর দিতে হবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় জগলুল আহমেদ চৌধুরীর মৃত্যু খুবই জঘন্য ও দুর্ভাগ্যজনক। চলন্ত বাস থেকে কেউ যেন নামতে না পারে তা আইন করে বন্ধ করতে হবে। এভাবে বিশ্বের কোনো দেশে চলন্ত বাস থেকে যাত্রী নামানোর নিয়ম নেই।

সভাপতির বক্তব্যে জগলুল আহমেদের বাল্যবন্ধু ও সাবেক খাদ্য মন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকে জগলুল আহমেদ চৌধুরীর সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব। আমি যখন ছাত্রলীগ করতাম, জগলুল তখন ছাত্র ইউনিয়ন করতেন। তারপরেও আমৃত্যু আমাদের বন্ধুত্ব ছিলো। দেশের প্রতি তার ভালোবাসা ছিলো। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন করতেন বলেই বঙ্গবন্ধুর প্রতি তার অনেক শ্রদ্ধাবোধ ছিলো। সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন এক উজ্জল নক্ষত্র। সাংবাদিকতায় তিনি সাহসী ভূমিকা পালন করতেন। আমরা রাজনীতিবিদরাও তার টকশো থেকে অনেক কিছু শিখতে পারতাম।

ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, জগলুল আহমেদ চৌধুরীর কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার সুযোগ হয়েছে। তরুণ সাংবাদিকদের তিনি সব সময় উৎসাহ দিতেন। তিনি বড় মাপের সাংবাদিক ছিলেন, কিন্তু নিজের প্রচার করতেন না। তার মৃত্যুর পর শেখ হাসিনা শোকবাণীতে বলেছিলেন, আমি আমার বন্ধুকে হারালাম। তখন আমরা জানতে পারলাম তাদের বন্ধুত্বের সম্পর্কের কথা। কিন্তু তার আগে দীর্ঘ সময়েও জগলুল ভাই কখনো একথা বলেননি। দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো, এই জগলুল ভাইয়ের বাবা এবং শ্বশুর মন্ত্রী ছিলেন, অথচ তিনি ১০ মিনিট রাস্তায় পড়ে ছিলেন। পুলিশ উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়নি। দ্রুত হাসপাতালে নেয়া হলে তিনি বেঁচে যেতেন। মৃত্যুর পর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু ঘাতক বাসটি আজো শনাক্ত হয়নি। পুলিশের গাফিলতি ছিলো।

বিশিষ্ট সাংবাদিক হারুন হাবিব বলেন, দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংবাদকর্মী ছিলেন জগলুল আহমেদ চৌধুরী। অথচ এখানো তার মৃত্যুর ঘটনায় জড়িত ঘাতক বাসটি শনাক্ত না হওয়া দুঃখজনক। যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিলো, সেই তদন্ত প্রতিবেদন যেন প্রকাশ পায় সেজন্য উদ্যোগ নিতে হবে। কেনো ঘাতক বাস শনাক্ত হবে না তা সবাই জানতে চায়। তার উদার মানসিকতা ও বন্ধুত্বের কাছে আমরা বার বার পরাজিত হয়েছি। দিল্লীতে থাকাকালীন সময়ে সাহিত্যিক ও সংঙ্গীত শিল্পীসহ বিভিন্ন ব্যক্তিদের তার বাসায় যাওয়া-আসা ছিলো। তিনি সবাইকে সম্মান করতেন।

বিশিষ্ট সাংবাদিক আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, জগলুল ভাই ছিলেন একজন শক্তিশালী রাজনৈতিক বিশ্লেষক। বিভিন্ন দেশ থেকে তার কাছে রাজনৈতিক বিশ্লেষণ জানতে চাওয়া হতো। তিনি সেই সাংবাদিক যে, শেখ হাসিনা প্রথম আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব নেয়ার পর দিল্লীতে বসে প্রথম সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। লোভ, লালসা, ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে সাংবাদিকতা করেছেন।

বার্তা সংস্থা ইউএনবির সম্পাদক ফরিদ হোসেন বলেন, অনেক বিষয়ে তিনি জ্ঞান রাখতেন। তিনি অনেক কিছু জানতেন। এসব কারণে তিনি নিজেকে একজন বহুমাত্রিক ব্যক্তি হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি ছিলেন একজন বড় মাপের কূটনৈতিক বিশ্লেষক। ভারতের সঙ্গে কোন বিষয়ে কাজ করা উচিৎ বা উচিৎ না জগলুল ভাই তার সাহসী বিশ্লেষণ করতেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App