×

মুক্তচিন্তা

কিশোর অপরাধ প্রতিরোধে করণীয়

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৯ নভেম্বর ২০২২, ০১:৫৬ এএম

শিল্পবিপ্লবের ফলে যেসব নেতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হয় তার মধ্যে কিশোর অপরাধ অন্যতম। শিল্পবিপ্লবের ফলে দ্রুত শিল্পায়ন ও নগরায়নের বিকাশ ঘটেছে। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পনির্ভর সমাজব্যবস্থা ভেঙে যান্ত্রিক প্রযুক্তির প্রয়োগ ঘটে। জ্ঞান, বিজ্ঞান, প্রয়োগ ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিপ্লব সংঘটিত হয়। কারখানা শিল্পের ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করে। এর ফলে নারী-পুরুষ উভয়েরই কারখানায় কর্মসংস্থানের সুযোগ ঘটে। আর সেক্ষেত্রে পরিবারের নির্ভরশীল শিশুরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে শিশু-কিশোররা অপরাধে জড়িয়ে যাওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে বৃদ্ধি পায়। সাধারণত ৭-১৬ বছর বয়সি কিশোর-কিশোরীদের দ্বারা সংঘটিত সমাজবিরোধী আচরণকেই কিশোর অপরাধ বলা হয়। শিশু আইন ২০১৩ অনুযায়ী ১৮ বছরের কম বয়সি শিশু-কিশোরদের দ্বারা সংঘটিত অপরাধই হলো কিশোর অপরাধ। কিশোর-কিশোরীরা সাধারণত আবেগের বশবর্তী হয়ে কিংবা পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে অপরাধ করে থাকে। উদ্দেশ্যহীনভাবে শুধু কৌতূহলের কারণে ও অসামাজিক কার্যক্রমে লিপ্ত হতে পারে। প্রাপ্তবয়স্ক অপরাধীদের মতো কোনো পরিকল্পনা করে অপরাধ করে না। ইদানীং কিশোররা গ্যাং তৈরি করে নতুন করে অপরাধের মাত্রা যোগ করেছে। গণমাধ্যমে উঠে এসেছে এ ধরনের অপরাধের বিভিন্ন চিত্র। তাছাড়া অল্প বয়সে স্মার্টফোন হাতে পাওয়ার কারণে প্রযুক্তির অপব্যবহার করে অপরাধ সংঘটিত করছে। ফেসবুক, মেসেঞ্জার ব্যবহার করে গ্রুপের মাধ্যমে গ্যাং তৈরি করে অপরাধ ও অসামাজিক কার্যক্রমে লিপ্ত হচ্ছে। টিকটক অ্যাপস ব্যবহার করে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। বাবা-মা উভয়ের কর্মক্ষেত্রের কারণে একদিকে যৌথ পরিবারগুলো ভেঙে একক পরিবারের সৃষ্টি হয়েছে অন্যদিকে পরিবারের শিশু-কিশোররা নিরাপত্তাহীনতা জনিত কারণে যা ইচ্ছা তাই করার সুযোগ পাচ্ছে। মোবাইল গেমস, ইউটিউবে আসক্ত হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফেসবুক, মেসেঞ্জারে অসৎসঙ্গীর সঙ্গে চ্যাটিং করে অনৈতিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ছে। বাবা-মায়ের আদেশ-উপদেশ, লেখাপড়া তাদের কাছে বিরক্তিকর। এভাবেই যেন আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আজ হুমকির সম্মুখীন। আমরা জানি আজকের শিশুরা আগামী দিনের উন্নত ও সমৃদ্ধশালী জাতির কর্ণধার। আর শিশু-কিশোরা যদি বিপথগামী হয় তাহলে জাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকার। আধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তির নেতিবাচক প্রভাবগুলোর মধ্যে পারিবারিক ভাঙন, বিবাহবিচ্ছেদ, দাম্পত্য কলহ, পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে অসামঞ্জস্যতা অন্যতম। যার ভুক্তভোগী বেশির ভাগ শিশু-কিশোর। যেসব পরিবারে দাম্পত্য কলহ, বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে সেসব পরিবারের শিশু-কিশোর মনস্তাত্ত্বিক সমস্যায় পড়ে যায়। এর ফলে তাদের নৈতিক চরিত্র গঠন, মূল্যবোধ, আচার-আচরণ সঠিকভাবে গড়ে ওঠে না। এমন পরিবারের শিশু-কিশোররা বিচ্যুত আচরণ করে থাকে, এক পর্যায়ে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়। তাছাড়া বস্তি এলাকায় ঘিঞ্জি পরিবেশে শিশু-কিশোররা অপরাধের দিকে ধাবিত হয়। ঘিঞ্জি পরিবেশের কারণে খুব সহজেই প্রাপ্তবয়স্ক অপরাধীদের সঙ্গে মিশে তারাও অপরাধী হয়ে ওঠে। মাদকাসক্ত, চোরাচালান, ধর্ষণসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যকলাপে যুক্ত হয়ে যায়। কিশোর অপরাধ প্রতিরোধে পরিবারসহ অন্যান্য সামাজিক প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পরিবার থেকেই একটা শিশুর বেড়ে ওঠা। তাই সুষ্ঠু সামাজিকীকরণে পরিবারকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। শিশু-কিশোরদের ব্যস্ত রাখতে হবে বিভিন্ন সৃজনশীল কাজের মাধ্যমে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়ার পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষা, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক চর্চার মাধ্যমে শিশু-কিশোরদের উন্নত বিকাশে ভূমিকা রাখতে হবে। বিদ্যালয়ে অমনোযোগী ছাত্রছাত্রীদের কাউন্সেলিংয়ের জন্য বিদ্যালয় সমাজকর্মী নিয়োগ করা জরুরি। এখনো আমাদের দেশে পর্যাপ্ত শিশু-কিশোর সংশোধনী ইনস্টিটিউট গড়ে ওঠেনি। যেখানে অপরাধী বা উচ্ছৃঙ্খল শিশু-কিশোরদের আচরণ সংশোধন করে সমাজে পুনর্বাসিত করার সুযোগ রয়েছে। সর্বোপরি বলা যায় পরিবার, সামাজিক প্রতিষ্ঠান, শিশু-কিশোর আইনের যথাযথ প্রয়োগ, কিশোর আদালতের সুসংগঠিত বিচার কার্যক্রম প্রতিটি স্তরে সচেতনতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করলে কিশোর অপরাধ সমাজ থেকে দূরীভূত হতে পারে। মেশকাতুন নাহার প্রভাষক, কচুয়া বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজ চাঁদপুর। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App