×

খেলা

এক গোলে অনেক রেকর্ড মেসির

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ নভেম্বর ২০২২, ০৮:৫২ এএম

এক গোলে অনেক রেকর্ড মেসির

লিওনেল মেসি

বর্তমান ফুটবল বিশ্বের অন্যতম সেরা তারকা ফুটবলার লিওনেল মেসি। আর্জেন্টিনার সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন এই ফুটবল জাদুকর। বল পায়ে তার সামর্থ্য নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। মেসি মাঠে নামা মানেই যেন রেকর্ডের ফুলঝুরি। একের পর এক রেকর্ড ভেঙে তিনি প্রতিনিয়ত নিজেকে ছাড়িয়ে যাচ্ছেন।

কাতার বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের বিপক্ষে ২-১ গোলে হার দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করে আর্জেন্টিনা। দ্বিতীয় ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ায় মেসি বাহিনী। এ ম্যাচে মেক্সিকোকে ২-০ গোলে হারিয়ে নকআউট পর্বে খেলার আশা বাঁচিয়ে রাখে লিওনেল স্ক্যালোনির দল। দলের হয়ে একটি গোল করেন অধিনায়ক মেসি। ডান দিক থেকে আনহেল ডি মারিয়ার পাসে বলটা বাঁ পায়ে নিয়ন্ত্রণে নেন লিওনেল মেসি। একটু জায়গা বানিয়ে প্রায় ২৫ গজ দূর থেকে বাঁ পায়ের নিখুঁত শট। ঝাঁপিয়েও বলের নাগাল পাননি গোলরক্ষক গিয়েরমো ওচোয়া। পোস্ট ঘেঁষে বল আশ্রয় খুঁজে নেয় জালে। দুই হাত মেলে মেসি ছুটেন গ্যালারির দিকে। তাদের সঙ্গে যোগ দেন অন্য সতীর্থরা। মেসি চমৎকার গোলটি করার পর সতীর্থের গোলেও অবদান রাখেন। দ্বিতীয়ার্ধে বদলি নেমে এনসো ফের্নান্দেসের করা গোলটিও ছিল দেখার মতো। মেসির পাস পেয়ে বাঁ দিক দিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে এক ঝটকায় সামনের প্রতিপক্ষের বাধা এড়িয়ে নেয়া শটে বল বাঁক খেয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া ওচোয়াকে ফাঁকি দিয়ে চলে যায় কাক্সিক্ষত ঠিকানায়। আন্তর্জাতিক ফুটবলে প্রথম গোলটি এর চেয়ে সুন্দর হয়তো হতে পারত না ২১ বছর বয়সি মিডফিল্ডারের জন্য।

চমৎকার একটি গোল করে ও করিয়ে আর্জেন্টিনার জয়ের নায়ক অধিনায়ক লিওনেল মেসি। এই ম্যাচে অনেক রেকর্ডের মালিক হয়েছেন তিনি। একদিনে দুটি অর্জনে দিয়েগো ম্যারাডোনাকে ছুঁয়ে ফেলেন মেসি। লুসাইল স্টেডিয়ামে বাঁচা-মরার লড়াইয়ে মেক্সিকোর বিপক্ষে খেলতে নামে আর্জেন্টিনা। বিশ্বকাপে মেসির এটি ২১তম ম্যাচ, দেশটির হয়ে কারো সর্বোচ্চ।

১৯৮৬ বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক ম্যারাডোনাও বিশ্ব মঞ্চে খেলেছিলেন ২১ ম্যাচ। গোলশূন্য প্রথমার্ধের পর ৬৪তম মিনিটে চমৎকার এক গোলে দলকে এগিয়ে নেন মেসি। এখানেও তিনি পাশে বসেন ম্যারাডোনার। বিশ্বকাপে এই দুজনের গোলই এখন সমান ২১ ম্যাচে ৮টি করে। আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্ব মঞ্চে তাদের চেয়ে বেশি গোল আছে কেবল গাব্রিয়েল বাতিস্তুতার। তার গোলসংখ্যা ১০টি। দেশের হয়ে এই নিয়ে টানা ৬ ম্যাচে জালের দেখা পান মেসি। এর আগে ২০১১ সালের নভেম্বর থেকে ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্তও টানা ছয় ম্যাচে গোল করেছিলেন তিনি।

১৯৬৬ সালের টুর্নামেন্ট থেকে ধরে সবচেয়ে কম বয়সি খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপে একই ম্যাচে গোল এবং গোলে সহায়তার কীর্তি মেসির আগে থেকেই। ২০০৬ আসরে সার্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে তিনি এই অর্জনে নাম লেখান ১৮ বছর ৩৫৭ দিন বয়সে। এবার সবচেয়ে বেশি বয়সি খেলোয়াড় হিসেবেও এই কীর্তি গড়েন মেসি, বয়স ৩৫ বছর ১৫৫ দিন। বিশ্বকাপে নিজের সবশেষ চার ম্যাচেই গোলে সম্পৃক্ত থেকেছে মেসির নাম। গোল ও অ্যাসিস্ট, দুটিই সমান তিনটি করে।

কাতার আসরে পর্তুগালের প্রথম ম্যাচে সেরার পুরস্কার পাওয়ার দিনে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপের ভিন্ন পাঁচ আসরে গোল করার কীর্তি গড়েন রোনালদো। এবার প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ভিন্ন পাঁচ আসরে অ্যাসিস্টের কীর্তি গড়েন মেসি। মেক্সিকোর বিপক্ষে তার জাদুকরী পারফরম্যান্স লুসাইল স্টেডিয়ামে বসে দেখেছেন ৮৮ হাজার ৯৬৬ জন দর্শক। গত প্রায় তিন দশকে বিশ্বকাপের কোনো ম্যাচে যা সর্বোচ্চ। ১৯৯৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র আসরের ফাইনাল মাঠে বসে দেখেছিল ৯৪ হাজার দর্শক। এ ম্যাচের পর ড্রেসিংরুমে যেতেই উদ্দাম উদযাপনে মাতেন মেসিরা। এই বিষয়টি জানা গেছে নিকলাস অটামেন্ডির টুইটার থেকে। নিজের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে আর্জেন্টাইন এই ডিফেন্ডার শেয়ার করেন সেই আনন্দের ভিডিও। যেখানে দেখা যায় আর্জেন্টিনার তারকারা সাজঘরে নাচছেন, গাইছেন মনের আনন্দে। সেন্টার টেবিলে এমিলিয়ানো মার্টিনেজকে দেখা যাচ্ছিল খালি গায়ে নাচছেন। মেসিও শার্ট খুলে উদ্দাম নাচতে থাকেন। জয়ের পর মেসির কণ্ঠে শোনা যায় তৃপ্তির সুর। দলের প্রতি সমর্থকদের আস্থা রাখতে বলেন নিজের পঞ্চম ও সম্ভাব্য শেষ বিশ্বকাপ খেলতে আসা ৩৫ বছর বয়সি তারকা। তার ভাষ্য, ‘আর্জেন্টিনার জন্য আরেকটি বিশ্বকাপ শুরু হলো। আমি সবাইকে একই কথা বলি, তারা যেন সবসময় আমাদের ওপর বিশ্বাস রাখে।

যা করার দরকার ছিল, আমরা তাই করেছি। আমাদের সামনে অন্য কোনো পথ ছিল না। আমাদের জিততে হতো, যাতে সবকিছু আমাদের নিজেদের হাতে থাকে।’

মেক্সিকোর বিপক্ষে প্রথমার্ধের প্রায় পুরোটা সময় নিজেদের খুঁজে ফেরেন মেসি-মার্টিনেজরা। এই সময়ে পরিষ্কার কোনো সুযোগই তৈরি করতে পারেনি তারা। গোল করার কোনো তাড়নাও দেখা যায়নি তাদের মাঝে। মেসিও স্বীকার করে নেন প্রথমার্ধে নিজেদের মান অনুযায়ী খেলতে পারেননি তারা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রথমার্ধে যেভাবে দরকার ছিল, আমরা সেভাবে খেলতে পারিনি। দ্বিতীয়ার্ধে যখন আমরা মনকে শান্ত করতে পারলাম, আমরা আরো ভালো খেলতে শুরু করলাম।’

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App