×

জাতীয়

ফারদিন হত্যা: দুই ব্রিজ ঘিরে তদন্তে নতুন মোড়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ নভেম্বর ২০২২, ০২:৫৫ পিএম

ফারদিন হত্যা: দুই ব্রিজ ঘিরে তদন্তে নতুন মোড়

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র ফারদিন নূর পরশের লাশ উদ্ধারের ঘটনা রহস্যের বৃত্তেই ঘুরপাক খাচ্ছে এখনো। ঠিক কী কারণে, কারা কীভাবে তাকে হত্যা করেছে? আদৌ তিনি হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন কিনা? সে বিষয়ে এখনো কোনো ক্লু পায়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। লাশ উদ্ধারের পর মাদক সেবনের জন্য রূপগঞ্জের চনপাড়া গিয়েছিলেন বলে খবর চাউর হলেও সেটির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে তদন্তসংশ্লিষ্টদের মনে। সেইসঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যে ৪ নভেম্বর রাতের লোকেশন বিশ্লেষণে রাজধানীর বাবুবাজার ব্রিজ ও সর্বশেষ ডেমরার সুলতানা কামাল ব্রিজে হাঁটাহাঁটির তথ্য পাওয়ায় তদন্ত নতুন মোড় নিয়েছে। ফলে ফারদিন কোনো বিষয় নিয়ে হতাশাগ্রস্ত ছিলেন কিনা সে বিষয়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। যদিও এখন পর্যন্ত সে ধরনের কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পায়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ৪ নভেম্বর বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে ফারদিনের লোকেশন ছিল ধানমণ্ডিতে। রাতে বান্ধবী বুশরার সঙ্গে রামপুরার দিকে যান। রামপুরা ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সামনে নেমে যান ফারদিন। পরে কেরানীগঞ্জসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়ান। রাত ১০টা ৫৩ মিনিটে তার লোকেশন পাওয়া যায় বাবুবাজার ব্রিজের উপর। ১২টা ৫০ মিনিটে লোকেশন ছিল গুলিস্তানে। গোয়েন্দাদের ধারণা, ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট বাবুবাজার ব্রিজের আশপাশের এলাকায় অবস্থান ছিল ফারদিনের। রাত ১টা ৫৭ মিনিটে অবস্থান ছিল যাত্রাবাড়ীতে। ১টা ৫৯ মিনিটে ইফাত জাহান মোমো নামে এক বান্ধবীর সঙ্গে মেসেঞ্জারে চ্যাটিং করেন। ২টা ১৫ মিনিটে লেগুনায় ওঠেন। ২টা ২৫ মিনিটে নামেন ডেমরার সুলতানা কামাল ব্রিজের শেষ প্রান্ত থেকে একটু দূরে। পরে ইউটিউবে গান শুনতে শুনতে ব্রিজের দিকে হেঁটে আসেন। ২টা ৩৫ মিনিটের দিকে মোবাইলটি বন্ধ হয়ে যায়। তবে, ২টা ৩৪ মিনিট পর্যন্ত তার মোবাইলে গান বাজছিল। তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, লাশ উদ্ধারের সময় তার ৩৭ হাজার টাকায় কেনা মোবাইল ফোন, ব্লুটুথ এয়ারপড, হাতঘড়ি, মানিব্যাগ ও নগদ ৯৩০ টাকা পাওয়া যায়। যদি ছিনতাইয়ের ঘটনা হতো তাহলে অন্তত মোবাইল এবং নগদ টাকা পাওয়া যেত না। পাশাপাশি মোবাইল বন্ধ হতে আরো অন্তত ৫-১০ মিনিট সময় লাগত। সিসি ক্যামেরা ফুটেজে দেখা গেছে, তিনি একাই লেগুনায় উঠেছেন এবং চালকের ভাষ্যমতে, ফারদিন একাই নেমেছেন। অর্থাৎ তাকে কেউ অনুসরণ করছিল কিনা সেটিও নিশ্চিত হতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ফারদিনের মোবাইলে গ্রামীণ ও রবির দুটি সিম ছিল। তিনি জিপির ইন্টারনেট ব্যবহার করছিলেন। এ সময় তার একটি নম্বর চনপাড়ায় অবস্থিত টাওয়ারের নেটওয়ার্ক কভার করছিল। আরেকটি নম্বর ব্রিজের পাশে থাকা টাওয়ারকে কভার করেছে। এই টাওয়ারের নেটওয়ার্ক সেল বিশ্লেষণ করে গোয়েন্দারা নিশ্চিত হয়েছেন, ফারদিনের সবশেষ লোকেশন সুলতানা কামাল ব্রিজেই ছিল। কিন্তু সেখানে কোনো সিসি ক্যামেরা না থাকায় এবং প্রত্যক্ষদর্শী না পাওয়ায় ঠিক কী ঘটেছে সে বিষয়ে কোনো ধারণা পাচ্ছেন না তারা। প্রথমে লেগুনা চালককে সন্দেহ করে জিম্মায় নেয়া হলেও কোনো সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ায় তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। সূত্র জানায়, ফারদিনের মোবাইলসংশ্লিষ্ট মোট ৫৬৮টি মোবাইল নম্বর বিশ্লেষণ করেও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি ওই দুই টাওয়ারে কভার করে সন্দেহভাজন এমন শতাধিক মোবাইল নম্বর পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। সেইসঙ্গে নিখোঁজের ৩ দিন পর উদ্ধার হওয়া ফারদিনের পচনশীল লাশে পাওয়া আঘাতের চিহ্নগুলো কীসের হতে পারে সে বিষয়েও ফরেনসিক চিকিৎসকদের মতামত নেয়া হচ্ছে। সুলতানা কামাল ব্রিজই যদি শেষ লোকেশন হয়, তাহলে লাশ সিদ্ধিরগঞ্জের বনানী ঘাট পর্যন্ত ভেসে যেতে পারে কিনা, তদন্তে সেটিও জোর দিয়ে দেখা হচ্ছে। সেইসঙ্গে পরীক্ষার ফলাফল ও বিদেশ যাওয়ার টাকা জোগাড় না হওয়া নিয়ে কোনো ধরনের হতাশার কথা কাউকে ফারদিন বলেছেন কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদিও তার বাবা কাজী নূর উদ্দিন রানা তদন্তসংশ্লিষ্টদের বলেছেন, মৃত্যুর আগে ফারদিন কিছুটা ডিপ্রেশনে ছিল। তবে সেটি কখনোই মৃত্যুর কারণ হবে না বলে তাদের বিশ্বাস। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের উপকমিশনার (ডিসি) মো. রাজীব আল মাসুদ ভোরের কাগজকে বলেন, ইতিপূর্বে আমাদের পক্ষ থেকে যে তথ্য গণমাধ্যমে জানানো হয়েছে, তার বাইরে বলার মতো কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ফারদিনের সেদিনের লোকেশন বিশ্লেষণে বড় দুটি ব্রিজে হাঁটাহাঁটি করার তথ্য আমরা পেয়েছি। শুরু থেকেই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। কিন্তু বলার মতো কংক্রিট কোনো তথ্য আমরা পাইনি। কারো সঙ্গে শত্রæতা ও ছিনতাইয়ের যোগসূত্রও মেলেনি এখনো। ফারদিনের বন্ধুদের মাধ্যমে সে হতাশাগ্রস্ত ছিল কিনা জানার চেষ্টা করেছি। কিন্তু কোনো বিষয়েই আমরা এখনো নিশ্চিত হতে পারিনি। তদন্ত চলমান রয়েছে। তদন্ত শেষে বিষয়টি আরো স্পষ্ট হবে। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন ভোরের কাগজকে বলেন, এ ঘটনায় অগ্রগতি বিষয়ে বলার মতো পর্যায়ে আমরা পৌঁছাইনি। তদন্ত কাজ চলমান রয়েছে। সব বিষয় মাথায় রেখেই কাজ চলছে। অগ্রগতি হলে অবশ্যই জানানো হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চনপাড়ায় থাকা একটি টাওয়ারের নেটওয়ার্ক তার মোবাইল কভার করেছে। আমরা নিশ্চিত করে বলছি না, সে চনপাড়াতে ছিল। তবে হ্যাঁ, চনপাড়ার আশপাশের এলাকাতেই ছিল। নিখোঁজের তিন দিন পর গত ৭ নভেম্বর সন্ধ্যার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জের বনানী ঘাটসংলগ্ন ল²ীনারায়ণ কটন মিলের পেছন দিক থেকে বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র পরশের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এর আগে রামপুরা থানায় একটি জিডি করে তার পরিবার। নিখোঁজ হওয়ার আগে তার বান্ধবী বুশরা সঙ্গে ছিলেন বলে জিডিতে উল্লেখ করেন ফারদিনের বাবা কাজী নূর উদ্দিন। পরে বুশরার নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো কয়েক আসামির নামে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App