×

রাজনীতি

ঢাকার সমাবেশে আসবেন জামায়াতের ‘মেহমান’রাও

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ নভেম্বর ২০২২, ০৮:৫৪ এএম

ঢাকার সমাবেশে আসবেন জামায়াতের ‘মেহমান’রাও

ছবি: ভোরের কাগজ

আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশকে ঘিরে রাজনীতিতে চলছে উত্তাপ-উত্তেজনা। ওইদিন কী হবে তা নিয়ে চায়ের দোকান থেকে শুরু করে অফিস-আদালতেও চলছে আলাপ-আলোচনা, জল্পনা-কল্পনা কিংবা বিশ্লেষণ। এর মধ্যে বিশেষ আলোচনার খোরাক হচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। ওইদিন স্বাধীনতাবিরোধী এই দলটির ভূমিকা কী হবে- তা নিয়েও রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। তবে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন ও জামায়াতের মাঠপর্যায়ের কিছু নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১০ ডিসেম্বরকে ঘিরে জামায়াতের একটি পরিকল্পনা রয়েছে। সে অনুযায়ী সারাদেশ থেকে দলটির এক লাখ নেতাকর্মী ঢাকায় আনার প্রস্তুতি চলছে। ওইদিন দলটির নেতাকর্মীরা বিএনপির সমাবেশস্থল এড়িয়ে রাজধানীর বিভিন্ন অলিগলিতে অবস্থান নেবে। ইতোমধ্যে দলটির নেতাকর্মীদের ঢাকায় আগমনের বার্তাও দেয়া হয়েছে। ঢাকায় এসে তারা যেসব জায়গায় অবস্থান নেবে, সম্ভাব্য সেসব জায়গায়গুলোতে দলটির শীর্ষ পর্যায় থেকে মেসেজ দিয়ে বলা হয়েছে, ‘ঢাকায় মেহমান আসবে’। তাদের মেহমানদারি করার জন্য প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জামায়াত নেতৃত্বের ওপর বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে বলে কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে।

জামায়াতের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আগামী ১০ ডিসেম্বর রাজধানীতে বিএনপির মহাসমাবেশ উপলক্ষে ইতোমধ্যে জামায়াত রাজধানীর প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সারাদেশ থেকে রাজধানীতে আসা নেতাকর্মীদের থাকা-খাওয়ার প্রস্তুতিও নেয়া হয়েছে। অতীতে জামায়াতের নেতাকর্মীরা মসজিদ-মাদ্রাসা কিংবা গণহারে বিভিন্ন মেসে অবস্থান নিলেও এবার সেসব জায়গা এড়িয়ে চলতে বলা হয়েছে দলটির শীর্ষ মহল থেকে। এবার তাদের বিভিন্ন কৌশল অবলম্বনের পাশাপাশি ঢাকায় থাকা আত্মীয় স্বজনের বাসা-বাড়ি অথবা রাজধানীতে দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বাসায় উঠতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আর ঢাকায় অবস্থানরত নেতাকর্মীদের বলা হয়েছে, ১০ ডিসেম্বর উপলক্ষে সবাইকে কমপক্ষে চার-পাঁচজন নেতাকর্মীর থাকার ব্যবস্থা করার পাশাপাশি মেহমানদারি করতে হবে। এছাড়া যেহেতু রাজধানীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে কোনো সময় অভিযান চালাতে পারে, এ বিষয়টি মাথায় রেখে নেতাকর্মীদের ঢাকার আশপাশে অবস্থান নিতেও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যেমন উত্তরাঞ্চলের তিন বিভাগ- রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের নেতাকর্মীদের গাজীপুর, সাভার, আশুলিয়া ও গাবতলীর বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান নিতে বলা হয়। দক্ষিণের তিন বিভাগ- খুলনা, বরিশাল ও ফরিদপুর অঞ্চলের নেতাকর্মীদের ঢাকার পাশে কেরানীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জে অবস্থান নিতে বলা হয়। এছাড়া দেশের পূর্বাঞ্চল বিভাগ- চট্টগ্রাম, সিলেট ও কুমিল্লা অঞ্চলের নেতাকর্মীদের নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও রূপগঞ্জে অবস্থান নিতে বলা হয়। এসব এলাকায় অবস্থান নেয়ার কারণ হিসেবে বলা হয় ১০ ডিসেম্বরের আগেই বিএনপির অতীতের বিভাগীয় সমাবেশগুলোর মতো পরিবহন ধর্মঘটের আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণেই রাজধানী থেকে কম দূরত্বে অবস্থান নিলে ওইদিন যেন হেঁটে হলেও ঢাকায় ঢুকতে কোনো অসুবিধা না হয়।

১০ ডিসেম্বর নিয়ে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতের শীর্ষ এক নেতা বলেন, ওইদিন আমাদের কোনো পরিকল্পনা নেই। এটি বিএনপির সমাবেশ। এখানে জামায়াত অংশ নেবে কেন? এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি যেসব ইস্যুতে সমাবেশ করছে, এটা তো সত্য, এগুলো জনমানুষের চাওয়া। এখন এসব সমাবেশে সাধারণ মানুষ কে আসলো, এটা তো আমাদের দেখার বিষয় নয়। আগে তো সবাই এদেশের সাধারণ মানুষ, তারপর দলের সমর্থক। জামায়াত যারা করে তারাও তো এদেশের নাগরিক। তাদেরও তো নিত্যপণ্যের দামে পিষ্ট হতে হচ্ছে। এর আগে গত ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে একটি সেমিনারে অংশ নিয়ে জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, দেশে এখন দুর্বিষহ অবস্থা বিরাজ করছে। মানুষের সব অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। বিচারের নামে অবিচার মানুষের ঘাড়ে চাপানো হয়েছে। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার নেই, কথা বলার অধিকার নেই। মানুষের মানসম্মান নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকার নেই। এক কথায় জাতি এখন সর্বহারা জাতিতে পরিণত হয়েছে। যারা জাতির ঘাড়ে দুঃশাসন চাপিয়ে দিয়ে দমিয়ে রাখতে চাচ্ছে, তাদের শক্ত বার্তা দিতে চাই, মেহেরবানি করে নিজেদের হিসাবনিকাশ করে নেন। ক্ষমতা কারো চিরদিন থাকে না, আপনাদেরও যাবার সময় এসেছে। বুদ্ধিমানের পরিচয় দিয়ে জাতির কোনো ক্ষতি না করে বিদায় নিন।

এদিকে একটি গোয়েন্দা সূত্র জানায়, বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের মহাসমাবেশের মূল সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে জামায়াত। ইতোমধ্যে জামায়াত ঢাকা শহরের নকশা অনুযায়ী কোথায় কারা বসবে, এটি চূড়ান্ত করেছে। বিএনপি-জামায়াতের কৌশল অনুযায়ী ওইদিন রাজপথ এড়িয়ে চলবে জামায়াত। রাজপথ দখলে থাকবে বিএনপি, আর অলিগলির দখল নেবে জামায়াত। কারণ ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর অলিগলিতে সতর্ক অবস্থানে থাকবে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এজন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মোকাবিলায় জামায়াতকে অলিগলিতে অবস্থান নিতে নির্দেশনা দেয়া হয়। যাতে রাজপথের পাশাপাশি অলিগলিতেও সরকারবিরোধী অবস্থান নিশ্চিত করা যায়। যাতে কোনো ঝামেলা বাধলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কূলকিনারা না পায়।

তবে জামায়াত ইস্যুতে কোনো বিএনপি নেতাই প্রকাশ্যে কথা বলতে চাননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক নেতা বলেন, জামায়াত ইস্যুতে কথা বলা বারণ। বিএনপির চলমান সমাবেশগুলোতে জামায়াতের উপস্থিতির বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। আমাদের সমাবেশ হচ্ছে মূলত, নিত্যপণ্য মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে। যে কারণে দেশের যে কোনো সাধারণ নাগরিক এ ধরনের সমাবেশে আসতে পারে। কাজেই এটি জামায়াত না অন্য কেউ সেটি বিচার করা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। এছাড়া জামায়াতের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক কিংবা যোগাযোগ নেই। সরকারবিরোধী আন্দোলন এককভাবেই আমরাই করছি। ১০ ডিসেম্বর জামায়াতের অবস্থান পরিকল্পনা বিষয়ে এই নেতা বলেন, এগুলো গুজব। এরকমভাবে অবস্থান কর্মসূচি আমাদের মাথায় নেই। আমরা শুধু কেবল ঢাকার এই মহাসমাবেশকে ধারাবাহিক বিভাগীয় সমাবেশ হিসেবেই দেখছি। এর বাইরে বিএনপির মাথায় এই মুহূর্তে সরকার হটানোর মতো কোনো পরিকল্পনা নেই। বরং ঢাকার এই সমাবেশ থেকে বেশ কিছু দাবি আদায়ে সরকার পতনের একদফা আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে বলে নিশ্চিত করেন জ্যেষ্ঠ এই নেতা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App