×

মুক্তচিন্তা

হবু আমলার ঢাকা কলেজ ১৯৫১-৫২

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০২২, ১২:১৯ এএম

১৯৬০ ব্যাচের সিএসপি সরকারের সচিব এটিএম শামসুল হক যখন ঢাকা কলেজের ছাত্র তার উপরের ক্লাসের ছাত্র তখনই বেশ পরিচিত লেখক হয়ে ওঠা আলাউদ্দিন আল আজাদ। ১৯৭৪-৭৫-এ আমি যখন ঢাকা কলেজের ছাত্র সেই লেখক ঢাকা কলেজের প্রিন্সিপাল। এটিএম শামসুল হক ঢাকা কলেজের ছাত্র ছিলেন ১৯৫১-৫২ দু’ বছর; কলেজ তখন ফুলবাড়িয়া রেলস্টেশনের কাছে, কলেজের হোস্টেল বেচারাম দেওড়ি। ১৮৪১ সালে স্থাপিত ঢাকা কলেজের ঠিকানা অনেকবার বদল হয়েছে। ঢাকা কলেজের নামে ভবন তৈরি করা হয়েছে, আবার তা সরকারি সিদ্ধান্তে অন্য প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে হাতছাড়া হয়ে গেছে। আজকের কার্জন হল ছিল একদা ঢাকা কলেজ ভবন। ১৯২১-এ বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা লগ্নে এই ভবন ছেড়ে দিতে হয়েছে। (আগ্রহী পাঠক শরীফউদ্দিন আহমেদের ‘ঢাকা কলেজ : ইতিহাস ও ঐতিহ্য ১৮৪১’ পড়তে পারেন।) ঢাকা কলেজের ভালো ছাত্র ১৯২১-এর আগে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বেন, এটাই ছিল বিধান, সময় যখন কিছুটা বদলে গেল, পূর্ব বাংলাতেও উচ্চমানের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলো পূর্বাঞ্চলের মেধাবী শিক্ষার্থীদের গন্তব্যও বদলে গেল। আরো আগে স্থাপিত ঢাকা কলেজের খ্যাতিও তখন কম নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর মতো অনেক অনেক শিক্ষক তখন ঢাকা কলেজে পড়াচ্ছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুকাল পড়িয়ে বেতন-ভাতা ও চাকরির নিরাপত্তায় অধিকতর আকর্ষণীয় ঢাকা কলেজের শিক্ষকতায় যোগ দেয়ার ও ফিরে আসার নজিরও আছে। ১৮৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত কুমিল্লা জেলা স্কুল থেকে ১৯৫০ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা ভালো ফলাফল দেখিয়ে কোলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়ার লালিত স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে এটিএম শামসুল হক ঢাকায় এলেন এবং ঢাকা কলেজে ভর্তি হলেন। প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়ার স্বপ্নটা জাগিয়েছিলেন সে কলেজের দুই ছাত্র, যারা তার আপন বড় ভাই। কিন্তু ১৯৪৭-এর দেশ ভাগ তার স্বপ্নের স্থানান্তর ঘটাল; পূর্ব পাকিস্তানের শ্রেষ্ঠ কলেজটাই তাকে বেছে নিতে হলো। এটিএম শামসুল হকের ‘মোজাইক অব মেমরিজ’ আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা মূল ইংরেজি গ্রন্থ থেকে তার ঢাকা কলেজ জীবন কিছুটা সংক্ষেপে অনুসৃত হলো : সে দিনগুলোতে ফুলবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনের পাশে সিদ্দিক বাজারে ঢাকা কলেজের অবস্থান। দুটি বা তিনটি পুরনো জীর্ণ ভবন এবং টিনের চাল দেওয়া লম্বা ব্যারাকে কলেজ চলত। হোস্টেল আর ছাত্রদের মেস পুরনো ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। আমার কলেজ জীবনের বড় অংশ কেটেছে আমার ভাইদের সঙ্গে নাজিরাবাজারের শুলসুধা ভবনে। কলেজ যদিও জরাজীর্ণ এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে অবস্থিত, কলেজে অত্যন্ত ভালো ক’জন শিক্ষক ছিলেন এবং পড়াশোনার মান ছিল সত্যিই উঁচু। স্বঘোষিত নাস্তিক অধ্যাপক সাইদুর রহমান আমাদের যুক্তিবিদ্যা পড়াতেন, অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ (বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি প্রধান) পড়াতেন অর্থনীতি, অধ্যাপক আবু রুশদ মতিনউদ্দিন পড়াতেন ইংরেজি। বিপ্লবী মানবতাবাদী দার্শনিক এম এন রায়ের ভাবশিষ্য গণিতের অধ্যাপক হাবিবুর রহমান নিজ বিষয় পড়ানোর বাইরেও কলেজের বিভিন্ন সামস্টিক কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিতেন। পাঠ্য বিষয়ের বাইরে সাহিত্য প্রতিযোগিতা, বিতর্ক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠান ও বার্ষিক ক্রীড়ানুষ্ঠান কলেজ জীবনের অনিবার্য অংশ ছিল। দু’এক মাস ধরে ফাঁকা থাকা ঢাকা কলেজ স্টুডেন্টস ইউনিয়নের সেক্রেটারি জেনারেলের পদে নির্বাচন করার জন্য বাবার উৎসাহ এবং এ ধরনের কাজে নিজের আগ্রহ নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে গেলাম। তখনকার সেক্রেটারি জেনারেল সালেহউদ্দিন আকবর শিল্পচর্চায় নিবেদিত হওয়ার জন্য কলেজ ছেড়ে দিলেন- সেকালের জন্য এ ধরনের খায়েশ অস্বাভাবিক একটি বিষয়। নির্বাচনে এ পদে প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী ওয়াহিদুল হক, পরবর্তীকালের খ্যাতিমান সাহিত্যিক ও সাংবাদিক। তিনি ঢাকার ছেলে এবং আর্মানিটোলা স্কুলে পড়েছেন। ঢাকার বিভিন্ন স্কুলের ছাত্ররা তাকে সমর্থন দিল আর ঢাকার বাইরের সারা দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ ছাত্র সমর্থন করল আমাকে। একটি কেবল বিচ্ছিন্ন ঘটনায় আমার সমর্থক পরবর্তীকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক তাহেরুল ইসলামকে ছুরি দেখিয়ে হুমকি দেওয়া হয়। নির্বাচন ছিল শান্তিপূর্ণ। এর সঙ্গে রাজনীতির তেমন সংশ্রব ছিল না। ভালো ব্যবধানেই আমি ঢাকা কলেজের ছাত্র সংসদের জেনারেল সেক্রেটারি নির্বাচিত হলাম। নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং পরবর্তী পাঠ্যবহির্ভূত কলেজের কার্যক্রম আমার গণসংযোগ বেড়ে গেল। কলেজে আমরা পেলাম উদীয়মান কয়েকজন সাহিত্যিক : আবদুল গাফফার চৌধুরী, বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর এবং মাহফুজ উল্লাহ। ভয়েস অব আমেরিকা-খ্যাত দাউদ খান মজলিস আমাদের সঙ্গে ছিলেন। ঢাকা কলেজে আমার বন্ধুদের মধ্যে ছিলেন ক্যাপ্টেন নুরুল হক, হাবিবুল্লাহ খান এবং কর্নেল মুস্তাফিজুর রহমান- তারা পরে বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী হয়েছেন। এ কে এম কামালউদ্দিন চৌধুরী এবং লুৎফর রহমান খান (ভোলা) সিএসপি হয়েছেন। কামালউদ্দিন চৌধুরী স্বরাষ্ট্র সচিব হয়েছিলেন, পরে বেলজিয়ামের রাষ্ট্রদূত। ভোলা ব্যাংককে এসকাপ-এ (ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কমিশন ফর এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিক) যোগ দিয়েছিলেন, মৃত্যু তাকে অকালেই কেড়ে নেয়। বিখ্যাত সাহিত্যিক আলাউদ্দিন আল আজাদ আমাদের উপরের ক্লাসে পড়তেন। তখনই তার সাহিত্য মেধা স্ফূরিত হয়েছিল, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের শিক্ষকরা তার কথা বলতেন। আমার এক ক্লাস উপরের ছাত্র এম সায়েদুজ্জামান এবং মেজর জেনারেল অবসরপ্রাপ্ত মুনএম আমার বড় ভাই লুৎফুল কবিরের ক্লাসমেট- দু’জনই সরকারের অর্থমন্ত্রী হয়েছিলেন। ঢাকা কলেজ এখন নিউ মার্কেটের কাছে এবং যুক্তিসঙ্গত স্থান ও পরিসর নিয়ে অবস্থান করছে, পড়াশোনার গৌরব রক্ষা করে চলেছে। ১৯৫০-৫১ সালে আমি কুট্টি অধ্যুষিত পুরান ঢাকার নাজিরাবাজারে থাকতাম। কুট্টিদের রসবোধ ও হাসি-ঠাট্টা সাহিত্যে স্থান করে নিয়েছে। তখন আমাদের ঢাকা কলেজের চারপাশের অনেক গলি বর্ষাকালে আংশিক জলকাদায় ডুবে থাকত। বাসা থেকে কলেজ খুব দূরে না হওয়ায় আমাদের তেমন অসুবিধে হতো না। প্রচুর ঘোড়ার গাড়ি ছিল- এখন তা দুর্লভ হয়ে উঠেছে। কুমিল্লা থেকে আসতে যেতে ফুলবাড়িয়া রেলস্টেশন থেকে ঘোড়ার গাড়ি ভাড়া করে আমাদের ভাড়া বাসা শুলসুধা ভবনে আসতাম, যাওয়ার সময়ও ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে বাসা থেকে ফুলবাড়িয়া। রিকশা ছিল, তবে এমন অসংখ্য নয়। রাস্তাঘাটে মানুষের সংখ্যার বেলাতেও তাই, অনেক বেশি। রমনা এলাকায় নতুন শহর গড়ে উঠতে থাকে। ফুলবাড়িয়া স্টেশনে যাওয়া রেললাইন ঢাকাকে পুরান ও নতুন শহরে ভাগ করে দিয়েছে। রমনা এলাকার গুটিকয় ভবন, সন্ধ্যা হয়ে এলে একেবারে জনশূন্য এলাকা হয়ে ওঠে। রমনা রেসকোর্স, এখনকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তখনো ঘোড়দৌড় চলত। গণআপত্তির কারণে এক সময় পাকিস্তান সরকার ঘোড়দৌড় বন্ধ করে দেয়। নাজিরাবাজার থেকে নাজিমুদ্দিন রোডে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরনো ক্যাম্পাসে যাওয়ার রাস্তাটির কথা মনে পড়ে- একেবারে রেললাইনের সমান্তরাল। দু’একবার আমি বিশিষ্ট অধ্যাপক মুজাফফর আহমদ চৌধুরী, ‘ম্যাক’ নামে যিনি সমধিক পরিচিত, তার সঙ্গে দেখা করতে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে গিয়েছি। স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি শিক্ষামন্ত্রী হয়েছিলেন। ঢাকা কলেজের ভৌত অবকাঠামোগত সুবিধা না থাকায় কলেজের বার্ষিক নাটক হতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কার্জন হল অডিটোরিয়ামে। আবিদ হোসেন (পরে ব্যারিস্টার) এবং ইকবাল আনসারী খান (হেনরি) আইনজীবী ও রোটারি গভর্নর নাটকে মুখ্য ভূমিকায় থাকতেন। দুজনেই কোলকাতা শহরে বড় হয়েছেন, দু’জনেরই নাগরিক প্রেক্ষাপট। সে সময় সহ-অভিনয় চালু না হওয়ায় ছেলেদেরই মেয়ের ভূমিকায় অভিনয় করতে হতো। ১৯৫০-৫১ সালে আমাদের নাজিরাবাজারের শুলসুধা ভবন ছেড়ে দিতে হয়। বাড়িটা ভাড়া নিয়েছিলেন আমাদের সবার বড় ভাই এ এফ এম মান্নান, তিনি পাকিস্তান পুলিশ সার্ভিসে যোগ দিয়ে ঢাকা ত্যাগ করেছিলেন। আমরা তখন সবাই ছাত্র। আমার তিন ভাই চলে যায় যথাক্রমে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ হোস্টেল, মেডিকেল কলেজ হোস্টেল এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ হলে। আমাকে চলে যেতে হয় হাসিনবাগে ঢাকা কলেজ হোস্টেলে। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এ আমার নতুন ধরনের জীবনযাপনের শুরু। মৌলবীবাজার এলাকায় বেচারাম দেওড়িতে কলেজের তিনটি হোস্টেল ছিল- নূরপুর ভিলা, হাসিনবাগ এবং মোস্তফা হাউস। অবশ্য খাওয়া-দাওয়ার জন্য সবাইকেই যেতে হতো মোস্তফা হাউসে। রান্নার ব্যবস্থা ছিল সেখানে। বর্ষাকালে হোস্টেল থেকে কলেজে যাওয়া দুরূহ ব্যাপার হয়ে উঠত। তখন কখনো কখনো গোড়ালি নয়, হাঁটু ডোবানো পানির মধ্য দিয়ে আমাদের কলেজে যেতে হতো। ১৯৪৭-এর ভারত ভাগ ও পাকিস্তান সৃষ্টির পর এবং আরো কিছুকাল কেটে যাওয়ার পরও এই ছিল ঢাকা শহরের ভৌত পরিস্থিতি। সে সময় শিক্ষার্থীদের যে কষ্টকর জীবন ছিল তা একালের ছেলেমেয়েদের পক্ষে অনুধাবন করাও কঠিন ব্যাপার। আমরা অবশ্য তেমন কোনো অভিযোগ ছাড়াই তখনকার অবস্থা মেনে নিয়েছিলাম। হাসিনবাগে থাকার সময় আমি কোলকাতা ইসলামিয়া কলেজ-খ্যাত অধ্যাপক সাইদুর রহমানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ পাই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইসলামিয়া কলেজে তার ছাত্র ছিলেন (বঙ্গবন্ধু অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে লিখেছেন তিনি তাকে লজিকে ২৭ নম্বর দিয়েছিলেন)। ঢাকা কলেজের দর্শনের অধ্যাপক ছাড়াও তিনি ছিলেন হোস্টেলের সুপারিনটেনডেন্ট। তার ছেলে শফিক রেহমান, যায়যায়দিন সম্পাদক ঢাকা কলেজে আমার সহপাঠী। তার স্ত্রী বিবিসি-খ্যাত তালেয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে আমাদের সহপাঠী ছিলেন। সাইদুর রহমান একজন অসাধারণ ঘটক ছিলেন। হালকা জনবসতির পুরানা পল্টনে আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে থাকার সময় জিন্নাহ অ্যাভিনিউর (এখন বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ) পাশে গড়ে ওঠা দোকানপাটের মাঝখান দিয়ে আসতাম। কয়েকটি সুন্দর পাকা ভবন উঠেছিল। পুরানা পল্টনের সালিমাবাদ রেস্তোরাঁ ছিল চমৎকার মেনুর একটি সস্তা ও জনপ্রিয় রেস্তোরাঁ। এই এলাকায় একটি সিনেমা হল ছিল, ব্রিটানিয়া, এখানে সাধারণত ইংরেজি সিনেমা দেখানো হতো। উদয়শঙ্করের নাচযুক্ত একটি স্মরণীয় সিনেমা ‘কল্পনা’ আমি উপভোগ করেছিলাম। আদিবাড়ি বাংলাদেশের যশোরে হলেও রাজস্থানের উদয়পুরে জন্মগ্রহণ করা উদয়শঙ্কর পাশ্চাত্যকে ভারতীয় ধ্রæপদী নৃত্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। ১৯৫১’র ডিসেম্বরে ইন্টারমিডিয়েট টেস্ট পরীক্ষার আগে আমি নাজিরাবাজার থেকে হাসিনবাগের হোস্টেলে উঠি। টেস্ট পরীক্ষা দেয়ার পর খুব মজার একটি রাত্রিকালীন অভিসারে বেরোলাম। সঙ্গে আমার ক্লাসফ্রেন্ড আফজালুর রহমান (প্রাইভেট সেক্টরে খুব সফল উদ্যোক্তা), আহসানুল হক (পিএইচডি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি অধ্যাপক), আমরা সব মিলিয়ে ছয়জন রাত ১২টার পর রমনা রেসকোর্স এলাকায় প্রবেশ করি। হোস্টেল থেকে বেশ দূরে যৌবনের উচ্ছলতায় পায়ে হেঁটেই আমাদের যাত্রা ও প্রত্যাবর্তন। রমনা এলাকা বিশেষ করে রমনা লেক সংলগ্ন অংশটি এমন অস্বাভাবিক সময়ে পরিত্যক্ত ও ভৌতিক মনে হওয়ারই কথা। সেদিনের গা ছমছম করা অনুভূতি দীর্ঘদিন লালন করেছি। ফেরার পথে ফুলবাড়িয়া স্টেশনের রেস্তোরাঁয় ঢুকে নাস্তা ও চা খেয়ে নিই। টেস্ট পরীক্ষার পর হোস্টেল ছেড়ে বাবা-মার সঙ্গে বাস করতে কুমিল্লা মুন্সেফ কোয়ার্টার্র্সে চলে যাই। সে জন্য ভাষা আন্দোলনের ২১ ফেব্রুয়ারির ঘটনাবলীর প্রত্যক্ষদর্শী হতে পারিনি। পরবর্তী অংশের সংক্ষেপ : ১৯৫২ সালে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার পর ফল প্রকাশের আগের দিন পর্যন্ত তিনি আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ি ঘুরে বেড়ালেন, এমনকি ভারতের শিলংও গেলেন। যেদিন অস্থির হয়ে ঢাকায় ফিরলেন সেদিন পরীক্ষার ফল প্রকাশ হলো। স্টিমারে নারায়ণগঞ্জ নেমে হাঁটুপানি ভেঙে নারায়ণগঞ্জ শহরের একটি পেপারস্ট্যান্ড থেকে একটি সংবাদপত্র কিনে আনলেন। তখন নারায়ণগঞ্জ বন্যায় ডুবে আছে, বড় রাস্তায় নৌকা চলছে, শহরে বন্যা দেখার এটাই প্রথম অভিজ্ঞতা। খবরের কাগজ খুলে দেখলেন তিনি ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় পূর্ব পাকিস্তানে চতুর্থ স্থান অধিকার করেছেন। সে সময় ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডই সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে পরীক্ষা পরিচালনা করত। ঢাকা কলেজের পর তার আগামী দিনের পরবর্তী গন্তব্য ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সেকালে শিক্ষকদের প্রতিযোগিতা ছিল শিক্ষা প্রদানের ও শিক্ষা গ্রহণের- একালের মতো দলদাসত্ব বৃত্তির নয়।

ড. এম এ মোমেন : সাবেক সরকারি চাকুরে, নন-ফিকশন ও কলাম লেখক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App