×

খেলা

শেষের শুরু রাঙালেন রোনালদো

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০২২, ১১:১৩ এএম

শেষের শুরু রাঙালেন রোনালদো

ছবি: সংগৃহীত

বর্তমান ফুটবল বিশ্বের অন্যতম সেরা তারকা পর্তুগালের ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনি প্রতিনিয়ত নিজেকে ছাড়িয়ে যাচ্ছেন। বিশ্বকাপের আঙিনায় এবারই হয়তো শেষবারের মতো পথচলা শুরু তার। কারণ বয়স হয়ে গেছে ৩৭ বছর। ক্যামেরুনের রজার মিলারের মতো ৪২ বছর বয়সে বিশ্বকাপ খেলতে আসার মতো অবিশ্বাস্য কিছু না ঘটলে পরের আসরে তাকে দেখার আশা বলতে গেলে নেই।

নিজের শেষ বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে গত বৃহস্পতিবার ঘানার বিপক্ষে মাঠে নেমেছিলেন রোনালদো। খেলতে নেমেই অনন্য এক রেকর্ড গড়েন তিনি। বিশ্বকাপ ইতিহাসে প্রথম ফুটবলার হিসেবে টানা বা ভিন্ন পাঁচ আসরে গোল করার অনন্য কীর্তি গড়েছেন পর্তুগিজ মহাতারকা। চারটি আসরে গোল করে এতদিন পেলে, মিরোস্লাভ ক্লোসা, উয়ি সিলার ও লিওনেল মেসির পাশে ছিলেন রোনালদো। এবার সবাইকে ছাড়িয়ে পাঁচবারের বর্ষসেরা ফুটবলার উঠে যান নতুন উচ্চতায়। রোনালদোর জন্ম ১৯৮৫ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারি, পর্তুগালের পশ্চিমে অবস্থিত মাদেইরা নামের ছোট্ট একটি দ্বীপে। শৈশব থেকেই তার দারিদ্র্যের মাঝে বেড়ে ওঠা। চার ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট রোনালদো এক রুমে সবার সঙ্গে গাদাগাদি করে থাকতেন। তার মা ছিলেন একজন রাঁধুনি, আর বাবা ছিলেন বাগানের মালি। স্কুলে রোনালদোকে তার সহপাঠীরা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করত। কারণ তার বাবা স্কুলে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবেও মাঝেমধ্যে কাজ করতেন। দারিদ্র্য-অপমানের দুঃখ ভুলতে শিশু রোনালদো বেছে নেন ফুটবলকে। মাত্র ১০ বছর বয়সে তিনি তার এলাকা মাদেইরার একটি জনপ্রিয় ক্লাব ন্যাসিওনালে যোগ দেন। সেখানে দারুণ খেলে সবার নজরে পড়েন রোনালদো। ফলাফল স্বরূপ ১২ বছর বয়সে পর্তুগালের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ক্লাব স্পোর্টিং লিসবনে খেলার সুযোগ পান। এরপর তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০০৩ সালে মাত্র আঠার বছর বয়সে তিনি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সঙ্গে চুক্তি করেন ১২ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে। ২০০৯ সালে তিনি রিয়াল মাদ্রিদে পাড়ি জমান রেকর্ড ১৩১ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে। তারপর থেকে রিয়ালকেই স্থায়ী ঠিকানা বানিয়ে নিয়েছেন। ক্লাবটির ইতিহাসের সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে ফুটবলপ্রেমীদের কাছে বিবেচিত হন তিনি।

১৯৫৮, ১৯৬২, ১৯৬৬, ১৯৭০- টানা চার বিশ্বকাপে গোল করেছিলেন ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি পেলে ও জার্মানির সিলার। ২০০২, ২০০৬, ২০১০ ও ২০১৪ আসরে গোল করেন জার্মানির আরেক খেলোয়াড় মিরোস্লাভ ক্লোসা। গত চার আসরে গোল করে তাদের পাশে বসেন রোনালদো। কাতার আসরে সৌদি আরবের বিপক্ষে হেরে যাওয়া ম্যাচে গোল করে এই তালিকায় নাম লেখান মেসি। আর্জেন্টাইন তারকা এর আগে ২০০৬, ২০১৪ ও ২০১৮ আসরে গোল করেছিলেন। মেসির মতো রোনালদো প্রথমবার বিশ্বকাপে খেলেন ২০০৬ সালে।

ইউরোপিয়ান দেশগুলোর মধ্যে বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি বয়সি গোল স্কোরার এখন রোনালদো। তিনি ছাড়িয়ে যান সুইডেনের গুনার গ্রেনকে। ১৯৫৮ আসরে ৩৭ বছর ২৩৬ দিন বয়সে গোল করেছিলেন গ্রেন। আন্তর্জাতিক ফুটবলের রেকর্ড গোল স্কোরার রোনালদোর গোলসংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১১৮টি। যার ৮টি বিশ্বকাপে। আর একটি গোল করলেই তিনি ছুঁয়ে ফেলবেন বিশ্ব মঞ্চে পর্তুগালের হয়ে সবচেয়ে বেশি গোল করা ইউসেবিওকে। এই কিংবদন্তি ৯টি গোল করেছিলেন ১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপে।

২০০৬ সালে পশ্চিম জার্মানির আসর দিয়ে বিশ্বকাপের আঙিনায় রোনালদোর পা রাখা। ওই আসরে মাত্র একবার পেয়েছিলেন জালের দেখা। এরপর ২০১০ সালে আফ্রিকায় ও ২০১৪ সালে ব্রাজিলেও পারেননি এক গোলের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে। ২০১৮ সালে রাশিয়ার আসর দেখে রোনালদোর ঝলক, কিন্তু তাও শেষ পর্যন্ত পায়নি পূর্ণতা। গ্রুপ পর্বে তিনি করেন চার গোল। এর মধ্যে স্পেনকে ৩-৩ ড্রয়ে রুখে দেয়া ম্যাচে উপহার দেন হ্যাটট্রিক। গড়েন বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি বয়সি ৩৩ বছর ১৩০ দিন খেলোয়াড় হিসেবে হ্যাটট্রিক করার কীর্তি। মরক্কোর বিপক্ষে ১-০ ব্যবধানে জেতা ম্যাচে করেন নির্ণায়ক গোলটি। কিন্তু শেষ ষোলোয় বিবর্ণ রোনালদো, পর্তুগালের বিদায় ঘণ্টা বাজে উরুগুয়ের কাছে হেরে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App