×

জাতীয়

রাজধানীতে অজ্ঞান, ধাক্কা ও টানা পার্টির দৌরাত্ম্য

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০২২, ১২:৩৬ পিএম

রাজধানীতে অজ্ঞান, ধাক্কা ও টানা পার্টির দৌরাত্ম্য

ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীতে অজ্ঞান, ধাক্কা ও টানা পার্টির দৌরাত্ম্য বেড়েছে। কেউ না কেউ প্রতিদিনই তাদের শিকার হচ্ছেন। বাদ যাচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও। এমনকি মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের অপকর্ম মৌসুমি অপরাধ হিসেবে আগে বিবেচিত হলেও এখন সারা বছর ধরেই ঘটতে দেখা যায়। অভিযোগ কম হওয়ায় যা ঘটে তার চেয়ে কম জানা যায়। কারণ অধিকাংশ সময়ই ভুক্তভোগী হয়রানির ভয়ে অভিযোগই করেন না। চলমান অর্থনৈতিক অস্থির পরিবেশের কারণেও এ ধরনের ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে বলে মনে করেন তারা।

র‌্যাব লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন ভোরের কাগজকে গতকাল বলেন, অজ্ঞান, ধাক্কা ও টানা পার্টির সদস্যদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান সবসময়ই থাকে। গত মাসেও এ ধরনের শতাধিকের বেশি অপরাধীদের আমরা গ্রেপ্তার করেছি। তবে দেখা যায় এ ধরনের অপরাধীরা বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বের হয়ে ফের একই অপরাধে জড়ায়। কিন্তু আমাদের নজরদারি অব্যাহত আছে। এ ধরনের অপরাধীদের হাত থেকে বাঁচতে সাধারণ নাগরিকদেরও সচেতন থাকার দরকার রয়েছে বলে জানান তিনি।

গত ১৭ নভেম্বর পুরান ঢাকার ঠাঁটারীবাজারে স্টার হোটেলের সামনে থেকে রেজাউল করিম নামে এক মাছ ব্যবসায়ীকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) ভর্তি করা হয়। তার কাছে থাকা ১ লাখ ১৭ হাজার টাকা পাওয়া যায়নি। গত ১৬ নভেম্বর রাজধানীর কমলাপুর আসা একটি ট্রেন থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্র জাহিদ ও ফারুক নামে অপর এক ব্যক্তিকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তাদের কাছে মোবাইল ফোন বা টাকা-পয়সা কিছুই পাওয়া যায়নি। গত ১৫ নভেম্বর বিকালে রাজধানীর ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে মানিক মিয়া নামে এক যুবককে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে ৫০ হাজার টাকা খুইয়েছেন বলে অভিযোগ তার।

শাহবাগ থানার এসআই মো. আরাফাত জানান, গত ১৪ নভেম্বর জাতীয় জরুরি সহায়তা নাম্বার ৯৯৯ এর মাধ্যমে খবর পেয়ে রাজধানীর আসাদ গেট এলাকা থেকে অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়া একজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শাহজাহানপুর থানার এসআই রফিকুল ইসলাম জানান, গত ১৩ নভেম্বর রাজধানীতে বাসের ভেতর হাদিউল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েন। তার কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা খোয়া গেছে বলে অভিযোগ করা হয়। গত ১২ নভেম্বর রাজধানীর গুলিস্তানে বাসে নিহার রঞ্জন দাস নামে এক পুলিশ সদস্য অজ্ঞানপার্টির খপ্পরে পড়েন। ট্রাফিক রমনা জোনের রিজার্ভ অফিসে কর্মরত তিনি। গত ৩ নভেম্বর রাজধানীর মেয়র হানিফ উড়াল সড়ক গুলিস্তান অংশের নিচ থেকে হাসানুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে সাড়ে ১৮ হাজার টাকা খোয়ান। এছাড়াও যাত্রাবাড়ী থানার এসআই মো. আশরাফুজ্জামান জানান, গত ৩০ অক্টোবর রাজধানীর যাত্রাবাড়ী কাজলা এলাকায় অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়া আকবর নামে এক ব্যক্তি ঢামেক হাসপাতালে মারা যান।

এদিকে মাহমুদুল আলম নামে এক ভুক্তভোগী ভোরের কাগজকে বলেন, গত ১০ নভেম্বর মিরপুর মাজার রোড এলাকা বাসে ওঠার সময় টানা পার্টির সদস্যরা তার হাতের ঘড়ি টান দিয়ে ছিড়ে ফেললেও নিতে ব্যার্থ হয়। এ সময় তার হাতে আঘাত লাগে বলে জানান তিনি। সাকিব ফেরদৌস অংকন নামে এক বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা জানান, গত ১০ নভেম্বর তেজগাঁও এলাকা দিয়ে অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে ধাক্কা পার্টির খপ্পরে পড়েন তিনি। পেছন থেকে ঘুসি দিয়ে ধাক্কা দিলি কেনো বলে তাকে ঘিরে ধরে তার ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হয়। এ সময় আত্মরক্ষার্থে চিৎকার দিলে লোকজন জড়ো হয়ে পড়লে কেটে পড়ে ধাক্কা পার্টির সদস্যরা।

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি এন্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ উমর ফারুক গতকাল বলেন, সম্প্রতি এসব ঘটনা প্রায়ই ঘটার পেছনে অর্থনৈতিক অস্থিরতাও দায়ী থাকতে পারে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিষয়টি সবাইকেই কিন্তু ভাবিয়ে তুলছে। তিনি আরো বলেন, সাধারণত এ ধরনের অপরাধীরা গ্রেপ্তার হলেও কারাগার থেকে বের হয়ে ফের একই অপরাধে জড়ান। এমন উদাহরণ আমরা প্রায়ই দেখছি। যদিও আইনি সহায়তা পাওয়ার অধিকার সবার রয়েছে।

ডিএমপি মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশনাস শাখার উপকমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন গতকাল ভোরের কাগজকে বলেন, অজ্ঞান, ধাক্কা ও টানা পার্টি এখন আর মৌসুমী নয়, পেশাদার অপরাধীতে পরিণত হয়েছে। প্রায়ই ডিএমপির বিভিন্ন ইউনিট তাদের গ্রেপ্তার করে থাকে। গত মাসেও এ ধরনের উল্লেখযোগ্য অপরাধীদের আমরা গ্রেপ্তার করেছি। এ ধরনের অপরাধীরা জামিনে বের হয়ে ফের একই অপরাধে জড়াচ্ছে কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আইনি সহায়তা পাওয়া সবার অধিকার। তবে সমন্বিত সভাগুলোতে বিচার প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত সংশ্লিষ্টদের এ ধরনের অপরাধীদের ক্ষেত্রে সবদিক বিবেচনায় নিয়ে জামিন দেয়ার অনুরোধ করে থাকি আমরা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App