×

সম্পাদকীয়

নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ : জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িতদের কোনো ছাড় নয়

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০২২, ১২:১৮ এএম

নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ : জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িতদের কোনো ছাড় নয়

দেশের আলোচিত দুই খুনের মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কারাবন্দি জঙ্গিদের আদালত প্রাঙ্গণ থেকে ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে এবং হচ্ছে। আদালতের নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্য দিয়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ছিনতাই হওয়ার এই ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। তদন্ত কমিটি এখনো গাফিলতি বা দায় কার তা নিরূপণ করতে পারেনি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এমন নড়বড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা মোটেও কাম্য নয়। জানা গেছে, মামলায় আসামিদের হাজিরার জন্য আদালতে আনা-নেয়ার সময় নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে একেবারেই দুর্বল। ভিআইপি ছাড়া অন্য আসামি তোলার সময় পুলিশের গা-ছাড়া ভাব দেখা যায়। শুধু ওই দুই জঙ্গি ছিনতাই নয়, নানা সময় আরো অনেক আসামি আদালত থেকে পালিয়ে গেছে। আট বছর আগেও জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। সেবার প্রিজনভ্যান থেকে ৩ জঙ্গিকে ছিনিয়ে নিয়েছিল তাদের সহযোগীরা। কিন্তু এবার ছিনিয়ে নেয়া হয় আদালত প্রাঙ্গণ থেকে। গত ২০ নভেম্বর ভরদুপুরে পুরান ঢাকার জনাকীর্ণ আদালত থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয় তাদের সহযোগীরা। দুজনই প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন ও বিজ্ঞানমনস্ক লেখক অভিজিৎ রায় হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। এই দুই জঙ্গি নিষিদ্ধ সংগঠন আনসার আল ইসলামের অন্যতম শীর্ষ পর্যায়ের নেতা। তাছাড়া তাদের হাইসিকিউরিটি কারাগারে বন্দি রাখার বিধান থাকলেও তার বাস্তবতা আমরা দেখিনি। কারাগারে এবং আদালতে আনা-নেয়ার সময় তাদের পায়ে ডাণ্ডাবেড়ি থাকার কথা থাকলেও তা ছিল না। ডাণ্ডাবেড়ি ছাড়া দুর্ধর্ষ এসব জঙ্গিকে কীভাবে আদালতে নেয়া হলো, সেটা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। পুলিশি হেফাজত থেকে জঙ্গি ছিনতাই কিংবা আদালত থেকে আসামি পালানোর ঘটনাগুলো আমাদের বেশ কিছু প্রশ্নের মুখোমুখি করে, সে সঙ্গে উদ্বিগ্নও করে। দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়ার পরিকল্পনার ক্ষেত্রে সিজেএম আদালতের পেছনের গেট দীর্ঘদিন ধরে তালাবদ্ধ থাকার বিষয়টি এখন আলোচনায় উঠে এসেছে। ২০২০ সালে উদ্বোধনের পর থেকে সিজেএম আদালতের পেছনের গেট তালাবদ্ধ। তাই হাজতখানার সামনেই সিজেএম আদালতের এই গেট থাকলেও তা বন্ধ থাকায় আসামিদের কাঠগড়ায় আনা-নেয়ার ক্ষেত্রে অনেক রাস্তা ঘুরিয়ে আদালতে তোলা হতো। জানা যায়, হাঁটিয়ে নিতে পারলে আসামিদের সঙ্গে স্বজনদের কথা ও দেখা করানোর মাধ্যমে বকশিশ পান কিছু অসাধু পুলিশ সদস্য। এছাড়া অর্থের বিনিময়ে মেলে আসামির সঙ্গে তাদের স্বজনদের দেখা করা, খাবার দেয়া ও আড্ডা দেয়ারও সুযোগ। অনেক সময় হাতকড়া খুলে দেয়া হয়। এ ধরনের চিত্র আমাদের শঙ্কিত করে। আসামিকে হাজিরার জন্য আদালতে নিয়ে যাওয়া ও আনার পথে, এজলাস কক্ষে ও হাজতখানায় অর্থের বিনিময়ে স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ দেয়া হতো। তবে এ বিষয়ে ধরা পড়লে সাময়িক শাস্তি দেয়া হয়। বড় কোনো শাস্তি না হওয়ায় অর্থের বিনিময়ে আসামিদের দেয়া এসব সুযোগ বন্ধ হয়নি। এ ধরনের ঘটনা বন্ধে কর্তৃপক্ষ সচেতন থেকে সুষ্ঠু নজরদারি ও আইন অমান্যকারীদের কঠোর শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে না পারলে অনিয়ম বন্ধ হবে না। এছাড়া আদালতের সব স্থানে সিসি ক্যামেরা নেই। জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনাস্থল ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের গেটেও নেই কোনো সিসি ক্যামেরা। এ ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনায় দোষীদের চিহ্নিত করতে সিসি ক্যামেরার গুরুত্ব রয়েছে। অবিলম্বে আদালত প্রাঙ্গণসহ প্রয়োজনীয় সব জায়গায় পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা বসানো ও মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করা জরুরি। এটি বোঝাই যায় যে রবিবারের ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত। অন্য যে কোনো ঘটনার চেয়ে এটি স্পর্শকাতর ও উদ্বেগজনক। কারণ এরা ভয়ংকর সন্ত্রাসী, একটি সংঘবদ্ধ জঙ্গিগোষ্ঠীর সদস্য, যাদের রয়েছে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী যোগসাজশ। এ ক্ষেত্রে আসামি আনা-নেয়ায় সংশ্লিষ্টদের অবশ্যই বাড়তি নিরাপত্তা ও সতর্কতা গ্রহণ দরকার ছিল। আদালত চত্বরে নিরাপত্তা ব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা এর দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না। আমরা চাই এমন ঘটনা ভবিষ্যতে আর যেন কখনো না ঘটে। এ ঘটনার বিস্তৃত তদন্ত হওয়া উচিত। জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় যারাই জড়িত থাক না কেন তদন্তসাপেক্ষে তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। অন্যদিকে জঙ্গিদের তৎপর হয়ে ওঠার প্রেক্ষাপটেও উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া দরকার সরকারের।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App