×

জাতীয়

দুর্ধর্ষ বন্দিদের ডাণ্ডাবেড়ি না থাকার নেপথ্যে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২০২২, ০৮:৪৯ এএম

পুরান ঢাকার আদালতপাড়া থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গি ছিনতাইয়ের পর তাদের ডাণ্ডাবেড়ি না পরানো নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে কারা কর্তৃপক্ষ। পুলিশ বলছে, এর দায় তাদের নয়। এ অবস্থায় সামনে এসেছে হাইকোর্টের এক আদেশ।

৫ বছর আগের ওই আদেশে কারাবন্দিদের ডাণ্ডাবেড়ি না পরিয়ে আদালতে হাজির করতে বলা হয়। আদেশে আদালত পর্যন্ত ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে বন্দিদের আনার কথা বলা হলেও কাঠগড়ায় তোলার সময় তা খোলা এবং পুনরায় পরানো নিয়ে ছিল জটিলতা। এরপর ঝামেলা এড়াতে ডাণ্ডাবেড়ি পরানো বন্ধ রাখা হয়। তবে, গত রবিবারের জঙ্গি ছিনতাই ঘটনার ভয়াবহতায় গতকাল বুধবার থেকে দুর্ধর্ষ বন্দিদের ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে আদালতে হাজির করা হচ্ছে। এতে সমন্বয় করছে কারা কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের প্রসিকিউশন বিভাগ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি বিনা বিচারে কারাগারে থাকা ১০ আসামির জামিন প্রশ্নে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ২৩ ফেব্রুয়ারি তাদের হাজির করার নির্দেশ দেন বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান ও বিচারপতি এস এইচ মো. নূরুল হুদা জায়গীরদারের হাইকোর্ট বেঞ্চ। ২০১৭ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি বিচার শেষ না হওয়া ওই ১০ বন্দির মধ্যে ৪ জনকে ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে হাইকোর্টে নেয়া হয়। কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তাদের হাজির করা হয়। এদিন শুনানিকালে ডাণ্ডাবেড়ি পরানোর বিষয়টি নজরে আনেন আদালত। এর ধারাবাহিকতায় ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে আসামিদের আদালতে হাজির করার বিষয়ে ব্যাখ্যা জানাতে ঢাকার কারা উপমহাপরিদর্শক তৌহিদুল ইসলাম ও জ্যেষ্ঠ কারা তত্ত্বাবধায়ক জাহাঙ্গীর কবিরকে হাজির হতে নির্দেশ দেয়া হয়।

নির্দেশ অনুযায়ী ওই বছরের ১৩ মার্চ ওই দুই কর্মকর্তা আদালতে হাজির হন। এদিন বেলা ১১টার দিকে বিষয়টি শুনানির জন্য এলে তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। পুলিশ ডাণ্ডাবেড়ি দিয়ে নিয়ে এসেছে। ক্ষমাপ্রার্থী। ভবিষ্যতে এমন হবে না। এরপর জাহাঙ্গীর কবির বলেন, পুলিশকে বলেছিলাম, পুলিশ নিয়ে এসেছে। ব্রিটিশ আমল থেকে এ পদ্ধতি চলে আসছে। নিয়ে আসার সময় ডাণ্ডাবেড়ি খোলার ব্যবস্থা নেই। যাদের ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে আনা হয়েছিল, তারা জেএমবির সদস্য বলেও তিনি জানান।

এ সময় আদালত বলেন, পদ্ধতি নেই, ব্যবস্থা করবেন তো। এরপর বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্ব হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ আদেশ দেন, দেশের কোনো আদালতেই ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে আসামি হাজির করা যাবে না। তবে কারাগার থেকে আদালতে নিয়ে আসা পর্যন্ত সময় ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে রাখা যাবে। এ বিষয়ে নিরাপত্তাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেও নির্দেশ দেন আদালত।

কারা অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা গতকাল ভোরের কাগজকে বলেন, ২০১৭ সালে হাইকোর্টের ওই নির্দেশনা পাওয়ার পর থেকে ডাণ্ডাবেড়ি পরানোর সংস্কৃতি অনেকটা ঢাকা পড়ে যায়। কারণ ডাণ্ডাবেড়ি পরানো ও খোলার কাজটি কারাগারের। একই সঙ্গে তা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। ফলে পুলিশ যখন আসামি বুঝে নিয়ে আদালতে নিয়ে যায়, তখন সংশ্লিষ্ট কারারক্ষীকে তাদের সঙ্গে দেয়া সম্ভব হতো না। পুলিশ পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করায় ডাণ্ডাবেড়িতে গুরুত্ব দিত না। এভাবেই দিন দিন বিষয়টি আরো আড়ালে চলে যায়। দুর্ধর্ষ আসামিদেরও ডাণ্ডাবেড়ি ছাড়াই আদালতে পাঠানো শুরু হয়। অনেক ক্ষেত্রে ঝামেলা এড়াতে পুলিশও ডাণ্ডাবেড়ি পরাতে নিরুৎসাহিত করতে থাকে। এভাবে বিষয়টি অনেকটা গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে।

কর্মকর্তারা আরো বলেন, ডাণ্ডাবেড়ি পরাতে পুলিশের পক্ষ থেকে চিঠি পাওয়ার পর তা আবার চালু করা হয়েছে। এখন থেকে কোনো কুখ্যাত ও দুর্ধর্ষ আসামি আদালতে পাঠাতে ডাণ্ডাবেড়ি পরানো হবে এবং আদালত প্রাঙ্গণে খোলা ও পুনরায় পরানোর জন্য কারারক্ষী পাঠানো হবে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) প্রসিকিউশন বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. জসিম উদ্দীন ভোরের কাগজকে বলেন, আদালত এবং সরকার আমাদের ওপর যে নির্দেশনা দেবেন, আমরা সেই অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করে থাকি। ডাণ্ডাবেড়ির বিষয়টি দেখভাল করা কারাগারের দায়িত্ব। এর চাবিও তাদের কাছে থাকে। ফলে ডাণ্ডাবেড়ি খোলা এবং পরানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কারারক্ষীদের দরকার। কিন্তু আসামিদের কারাগার থেকে আদালতে আনার সময় সংশ্লিষ্ট কারারক্ষীরা সঙ্গে আসতেন না। এজন্য বিষয়টি পুলিশও সেভাবে গুরুত্ব দেয়নি।

যেহেতু জঙ্গি ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনার পর বিষয়টি আলোচনায় এসেছে, এখন থেকে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আসামিদের ডাণ্ডাবেড়ি পরানো হবে। এরই মধ্যে ডাণ্ডাবেড়ি পরানো শুরু হয়ে গেছে। এটি খোলা ও পরানোর দায়িত্ব পালন করছেন কারারক্ষীরাই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App