×

পুরনো খবর

১০১ ইয়াবা কারবারির ১৮ মাসের সাজা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ নভেম্বর ২০২২, ০১:০৫ পিএম

১০১ ইয়াবা কারবারির ১৮ মাসের সাজা

ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজারের টেকনাফে আত্মসমর্পণকারী ১০১ ইয়াবা কারবারির বিরুদ্ধে দায়ের করা পুলিশের দুটি মামলার রায়ে একটিতে ১৮ মাসের সাজা ও বিশ হাজার টাকা করে জরিমানার আদেশ দিয়েছেন আদালত। অপর মামলায় সবাইকে খালাস দেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম।

বুধবার (২৩ নভেম্বর) এ রায় ঘোষণা করেন জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল। এ মামলায় ইতোমধ্যে ১৮ জন কক্সবাজার কারাগারে রয়েছেন। আদালতের সর্বশেষ ধার্যদিন অনুপস্থিত থাকায় ৮৪ জনের জামিন বাতিল ঘোষণা করেছিলেন আদালত। এর মধ্যে মোহাম্মদ হোছাইন নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও এখনো পালাতক রয়েছে ৮৩ জন। পলাতক আসামির মধ্যে বেশ কয়েকজন বিদেশ পাড়ি দিয়েছেন। যাদের মধ্যে কয়েকজন জনপ্রতিনিধিসহ প্রভাবশালীরা রয়েছেন।

এদের মধ্যে রয়েছেন, সাবেক সাংসদ আব্দু রহমান বদির চার ভাই আব্দুল আমিন, আব্দু শুক্কুর, শফিকুল ইসলাম, ফয়সাল রহমান, ভাগ্নে সাহেদ রহমান নিপু, চাচাতো ভাই মোহাম্মদ আলম, টেকনাফ সদর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জিহাদ ও বড় ভাই আব্দু রহমান, বর্তমান জেলা পরিষদ সদস্য ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমেদের ছেলে দিদার মিয়া, টেকনাফ পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুরুল বশর নুরশাদ, টেকনাফ সদর ইউনিয়নের এনামুল হক এনাম মেম্বার প্রমুখ।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম জানান, ২০১৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি টেকনাফ সৈকতের নিকটবর্তী এলাকায় ইয়াবা ও অস্ত্রসহ একদল মাদক কারবারি অবস্থান করছে বলে খবর পেয়ে অভিযান চালায় পুলিশ। ওই সময় পুলিশের কাছে ১০২ জন আত্মসমর্পণের ইচ্ছে প্রকাশ করেন। পরে টেকনাফ সদরের টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের উপস্থিতিতে ১০২ জন আত্মস্বীকৃত ইয়াবা কারবারি ও গডফাদার সাড়ে ৩ লাখ ইয়াবা, দেশি তৈরি ৩০টি বন্দুক ও ৭০ রাউন্ড গুলিসহ আত্মসমর্পণ করেন। ওইদিন আত্মসমর্পণকারী ১০২ জনকে আসামি করে টেকনাফ মডেল থানায় অস্ত্র ও মাদক আইনে দুটি মামলা দায়ের হয়। মামলা দুটি করেন টেকনাফ থানার তৎকালীন পরিদর্শক (অপারেশন) শরীফ ইবনে আলম।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন পরিদর্শক এবিএম এস দোহাকে। মামলা দায়েরের দিনই আদালতের মাধ্যমে সব আসামিকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কক্সবাজার জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। ১০২ জন আসামির মধ্যে মামলার বিচারিক কার্যক্রম চলাকালে ২০১৯ সালের ৭ আগস্ট মোহাম্মদ রাসেল নামে এক আসামি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। পরে ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম তামান্না ফারাহর আদালতে ১০১ আসামির বিরুদ্ধে দুটি চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। পরবর্তীতে মামলা দুটি বিচারের জন্য জেলা ও দায়রা জজ আদালতে প্রেরণ করা হয়। একই বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল সব আসামির উপস্থিতিতে শুনানি শেষে মামলার চার্জ গঠন করেন। বিচার শেষে ১৫ নভেম্বর মামলার রায় ঘোষণার জন্য ২৩ নভেম্বর দিন ধার্য করেন।

কারাগারে থাকা ১৮ আসামিরা হলেন- নুরুল হুদা, শাহ আলম, আব্দুর রহমান, ফরিদ আলম, মাহবুব আলম, রশিদ আহমেদ, মোহাম্মদ তৈয়ব, জাফর আলম, মোহাম্মদ হাশেম ওরফে আংকু, আবু তৈয়ব, আলী নেওয়াজ, মোহাম্মদ আইয়ুব, কামাল হোসেন, নুরুল বশর ওরফে কালাভাই, আব্দুল করিম ওরফে করিম মাঝি, দিল মোহাম্মদ, মো. সাকের মিয়া ওরফে সাকের মাঝি, মোহাম্মদ হোছাইন।

পলাতক ৮৩ আসামিরা হলেন- সাবেক এমপি বদির ভাই আব্দুর শুক্কুর, বদির ভাই আমিনুর রহমান ওরফে আব্দুল আমিন, দিদার মিয়া, বদির ভাগনে মো. সাহেদ রহমান নিপু, আব্দুল আমিন, নুরুল আমিন, বদির ভাই শফিকুল ইসলাম ওরফে শফিক, বদির ভাই ফয়সাল রহমান, এনামুল হক ওরফে এনাম মেম্বার, একরাম হোসেন, ছৈয়দ হোসেন, বদির বেয়াই সাহেদ কামাল ওরফে সাহেদ, মৌলভী বশির আহমদ, আব্দুর রহমান, মোজাম্মেল হক, জোবাইর হোসেন, নুরুল বশর ওরফে কাউন্সিলার নুরশাদ, বদির ফুপাত ভাই কামরুল হাসান রাসেল, বর্তমানে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান ওরফে জিহাদ, মোহাম্মদ শাহ, নুরুল কবির, মারুফ বিন খলিল ওরফে বাবু, মোহাম্মদ ইউনুচ, ছৈয়দ হোসেন ওরফে ছৈয়দু, মোহাম্মদ জামাল ওরফে জামাল মেম্বার, মো. হাসান আব্দুল্লাহ, রেজাউল করিম ওরফে রেজাউল মেম্বার, মো. আবু তাহের, রমজান আলী, মোহাম্মদ আফছার, হাবিবুর রহমান ওরফে নুর হাবিব, শামসুল আলম ওরফে শামশু মেম্বার, মোহাম্মদ ইসমাঈল, আব্দুল গনি, মোহাম্মদ আলী, জামাল হোসেন, আব্দুল হামিদ, নজরুল ইসলাম, মোয়াজ্জেম হোসেন ওরফে দানু, মোহাম্মদ সিরাজ, মোহাম্মদ আলম, মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, হোসেন আলী, নুরুল কবির মিঝি, শাহ আজম, জাফর আহমেদ ওরফে জাফর, রুস্তম আলী, নুরুল আলম, শফি উল্লাহ, মো. জহুর আলম, মোহাম্মদ হুসাইন, মোহাম্মদ সিদ্দিক, রবিউল আলম, মঞ্জুর আলী, হামিদ হোসেন, মোহাম্মদ আলম, নুরুল আমিন, বোরহান উদ্দিন, ইমান হোসেন, মোহাম্মদ হারুন, শওকত আলম, হোছাইন আহম্মদ, মোহাম্মদ আইয়ুব, মো. আবু ছৈয়দ, মো. রহিম উল্লাহ, মোহাম্মদ রফিক, মোহাম্মদ সেলিম, নুর মোহাম্মদ, বদির খালাত ভাই মং অং থেইন ওরফে মমচি, মোহাম্মদ হেলাল, বদিউর রহমান ওরফে বদুরান, ছৈয়দ আলী, মোহাম্মদ হাছন, নুরুল আলম, আব্দুল কুদ্দুস, আলী আহম্মেদ, আলমগীর ফয়সাল ওরফে লিটন, জাহাঙ্গীর আলম, নুরুল আলম, সামছুল আলম শামীম, মোহাম্মদ ইউনুচ, নুরুল আফসার ওরফে আফসার উদ্দিন, মোহাম্মদ শাহজাহান আনছারী।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও আদালতের সরকারি কৌঁসুলি ফরিদুল আলম বলেন, মামলায় ১০১ আসামির শাস্তি হবে নিশ্চিত শাস্তি হবে জেনেই ৮৪ আসামি গত ১৫ নভেম্বর থেকে আদালতে হাজির না হয়ে আত্মগোপন করেন। ওই দিন আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ারা জারি করেন। এর আগে মামলার আসামি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী ও পৃষ্ঠপোষক (গডফাদার)। ২০১৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি টেকনাফ পাইলট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে আত্মসমর্পণের পর টানা দেড় বছর ১০১ জন আসামি কারাগারে বন্দী ছিলেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App