×

সারাদেশ

মেঘনা তীর রক্ষা বাঁধ প্রকল্পের কাজ অনিশ্চিত

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ নভেম্বর ২০২২, ০৮:৪৮ এএম

মেঘনা তীর রক্ষা বাঁধ প্রকল্পের কাজ অনিশ্চিত

ছবি: ভোরের কাগজ

লক্ষ্মীপুরের রামগতি-কমলনগরের মেঘনার ভয়াবহ ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ৫ বার এসে শুধু আশ্বাসই দিয়ে গেছেন।

কিন্তু বাস্তবে নদীর তীর রক্ষা বাঁধের কাজের কোনো অগ্রগতি নেই। আশ্বাস আর প্রতিশ্রুতিতে বছর পার হয়েছে।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে কাজের উদ্বোধন করেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল জাহিদ ফারুক। কিন্তু এখন পর্যন্ত কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

এখানকার মানুষ চরম আতঙ্কে রয়েছেন। মুহূর্তের মধ্যে ভেঙে তছনছ হচ্ছে বসতবাড়ি কৃষি জমিসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। মেঘনার ভাঙনে এই দুই উপজেলা ধীরে ধীরে ছোট হয়ে আসছে।

মেঘনার তাণ্ডবলীলায়-জলাবদ্ধতা ও অস্বাভাবিক জোয়ারে বিপর্যস্ত কমলনগর-রামগতি উপজেলার লাখো মানুষ। দীর্ঘ তিন দশক ধরে এমন অবস্থা চলছে নদী পাড়ে বসবাসকারী মানুষগুলোর। ভাঙনের ভয়াবহতায় এখানকার মানুষের দুঃখ-কষ্টের শেষ নেই। সারাবছর ধরে মেঘনার ভাঙনে ক্ষত-বিক্ষত উপকূলীয় অঞ্চলের লাখো মানুষ।

লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের জুন মাসে একনেক সভায় রামগতি-কমলনগরের মেঘনা নদীর তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের জন্য তিন হাজার ৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চলতি বছরের জানুয়ারিতে কমলনগরের সাহেবেরহাট ইউনিয়নের মেঘনা নদী এলাকায় বাঁধ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল জাহিদ ফারুক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি-কমলনগর) আসনের সংসদ-সদস্য মেজর (অব.) আবদুল মান্নান। বাঁধ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হলেও এখন পর্যন্ত কাজ শুরু হয়নি। তবে ভাঙন কিন্তু থেমে থাকেনি। প্রতিদিনই ভাঙছে মেঘনা নদী। ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে রামগতি-কমলনগর উপজেলার মানচিত্র। স্থানীয়রা বলেছেন, সেনাবাহিনীর মাধ্যমে নদী তীর রক্ষা বাঁধ প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবি থাকলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কাজ উদ্বোধন করা হয়। নয়ছয় করার জন্য গত জানুয়ারি মাসে উদ্বোধন করা হয় এই বিশাল প্রকল্পের কাজ। কিন্তু কাজ শুরু হয়নি এখন পর্যন্ত। বালু সংকটসহ নানা অজুহাত দেখিয়ে ঠিকাদাররা কাজ বন্ধ রাখেন। এতে প্রতিনিয়ত ভাঙছে মেঘনা নদীর তীরসহ আশপাশের লোকালয়।

জানা গেছে, প্রকল্প বাস্তবায়নে ৩৬টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দিয়েছিল সরকার। বালু সংকট ও বরাদ্দের টাকা ছাড় না পাওয়ায় তারা কাজ বন্ধ রেখেছে। এদিকে ক্ষতির মুখে পড়া এখানকার মানুষ মেঘনার তীর রক্ষা বাঁধের নির্মাণকাজ দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে বিভিন্ন সময় মানববন্ধন করে আসছেন। তারা এ দুই উপজেলা ভাঙনের হাত থেকে রক্ষার দাবি জানান। চলতি মাসে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক নদীভাঙন এলাকা পরিদর্শনে রামগতি ও কমলনগর আসেন। পরিদর্শনে এসে তিনি স্থানীয় জনতাকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, বালু সংকটের কারণে আমরা কাজ শুরু করতে পারিনি। এখন মেঘনা নদীর চরকাঁকড়া এলাকা থেকে বালু টেস্ট চলছে। মানসম্মত বালু পাওয়া গেলে আমরা দ্রুত নদীর বাঁধ নির্মাণকাজ শুরু করব। মন্ত্রীর এমন বক্তব্য মানতে নারাজ স্থানীয়রা। করণ এর আগেও মন্ত্রী ৪ বার এসে এমন আশ্বাস দিয়ে গেছেন। কাজের বেলায় কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি।

এদিকে তীব্র ভাঙনে প্রতিদিনই বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি, হাটবাজার, ফসলি জমিসহ সরকারি বেসরকারি বহু স্থাপনা। ভয়াবহ ভাঙন পরিস্থিতিতে বাড়ি-ঘর সরিয়ে নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। মানুষ সব হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে। পাঁচ-সাতবার ভাঙনের শিকার হয়ে এখন অনেকেই পথের ভিখারি। ভাঙনে আতঙ্কিত নদী পাড়ের লাখো মানুষ। ইতোমধ্যে রামগতি উপজেলার দাসপাড়া, রঘুনাথপুর, আসলপাড়া, বাংলাবাজার, সেবাগ্রাম, আলেকজান্ডার ইউনিয়ন ও পশ্চিম বালুরচর এবং কমলনগর উপজেলার সাহেবেরহাট, তালতলী বাজার, লুধুয়া বাজার, কাদিরপন্ডিতের হাট, মাতাব্বরহাট, মতিরহাট, হাজীগঞ্জ, নবীগঞ্জ, নাছিরগঞ্জ, বাঘারহাটসহ অসংখ্য বাজার, গ্রাম ও সরকারি বেসরকারি বহু স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে আরো কয়েকটি স্কুল মসজিদ-মাদ্রাসা, হাটবাজার, সরকারি বেসরকারি কয়েকটি স্থাপনা হুমকির মুখে রয়েছে।

জানা গেছে, কাজ পাওয়া ঠিকাদাররা প্রথমে স্থানীয় কিছু দালালের মাধ্যমে জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের কাজ শুরু করে। পরে তাদের মধ্যে দরদাম ও কমিশন বাণিজ্য নিয়ে ঝামেলা দেখা দেয়। পরে বালু সংকটের অজুহাত দেখিয়ে তারা কাজটি বন্ধ রাখেন। তা এখন পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে। এখন আবারো নির্মাণকাজ শুরু করার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও স্থানীয় সাংসদ।

রামগতির চরগাজী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাওহিদুল ইসলাম সুমন জানান, মেঘনার ভাঙন রোধে আমরা লক্ষ্মীপুর ও ঢাকায় ব্যাপক আন্দোলন করেছি। দুই উপজেলার সর্বস্তরের মানুষের কথা চিন্তা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেড়িবাঁধ নির্মাণকল্পে একটি বিশাল প্রকল্প অনুমোদন দেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা এই প্রকল্পের কোনো অগ্রগতি দেখছি না। নানা অজুহাত দেখিয়ে বারবার শুধু কাজ পিছিয়ে রেখেছে।

কমলনগরের সাহেবেরহাট ইউপি চেয়ারম্যান মাস্টার আবুল খায়ের ও কালকিনি ইউপি চেয়ারম্যান মাস্টার সাইফুল্লাহ বলেন, নদী ভাঙনে তাদের ইউনিয়নের অর্ধেকেরও বেশি জনপদ বিলীন হয়ে গেছে। এখন জোয়ার এলেই ডুবে যায় পুরো এলাকা।

বাঁধ নির্মাণকাজ শুরু না হওয়ায় কঠোর সমালোচনা করেন তারা।

লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক আহমেদ বলেন, কাজ পাওয়া ঠিকাদাররা চাঁদপুর থেকে বালু এনে জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের কাজ করত। কিন্তু সেখানে বালু সংকটের কারণে কাজটি বন্ধ হয়ে যায়। পরে সব ঝামেলা মিটিয়ে আমরা বিশেষ ব্যবস্থায় বালু আনার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এখন পুনরায় কাজ শুরু করা হবে। স্থানীয় সংসদ সদস্য মেজর অব. আবদুল মান্নান বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। টেন্ডার দেয়া হয়েছে। এখন ঠিকাদাররা কাজ করবে, তারা কীভাবে করবে সেটা তাদের বিষয়! এসব বিষয়ে আমার কাছে নতুন কোনো তথ্য নেই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App