×

জাতীয়

বিএনপির সমাবেশে বিপুল ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ নভেম্বর ২০২২, ০৮:২০ এএম

বিএনপির সমাবেশে বিপুল ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন

ছবি: সংগৃহীত

সমাবেশের দুই দিন আগেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সিলেটে আসে বিএনপির নেতাকর্মীরা। সেখানে চলে রান্না-বান্না, খাওয়া-দাওয়া, আড্ডা, খোশগল্প। যেন পিকনিকের আমেজ। বিএনপির দাবি ১৯ নভেম্বর সিলেটে সমাবেশের আগেরদিন শুক্রবার রাতে ১০ হাজার মানুষের জন্য মোরগ পোলাও রান্না করা হয়েছে। আর বিভিন্ন জেলা থেকে আসাদের কেউ কেউ রান্না করেছেন আলাদাভাবে। শুধু সিলেট নয়, দেশের প্রতিটি বিভাগীয় সমাবেশেই রান্না-বান্না ও খাওয়া-দাওয়ার চিত্র চোখে পড়েছে বিএনপির সমাবেশগুলোতে, যা ব্যয়বহুল।

এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানা আলোচনা। প্রশ্ন উঠেছে এই ব্যয়ের অর্থের উৎস নিয়ে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন বিএনপির সমাবেশে টাকা উড়ছে। টাকা আসছে দুবাই থেকে। জোরপূর্বক চাঁদা নিচ্ছে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। আর বিএনপি নেতারা বলছেন, বিদেশ বা চাঁদাবাজি নয়; নিজেদের পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করে রাজনীতি করেন তারা। নিজেরা চাঁদা দিয়ে সমাবেশগুলো করছেন।

বিএনপি নেতাদের এসব বক্তব্যকে রাজনৈতিক স্ট্যান্ডবাজি হিসেবে দেখছে আওয়ামী লীগ। তাদের দাবি নির্বাচন কমিশনে দেয়া বিএনপির আয়-ব্যয়ের হিসাব খতিয়ে দেখা হোক। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ গত রবিবার বলেন, বিএনপি সমাবেশের নামে বড় পিকনিক করছে। সেজন্য তারা চাঁদাবাজি করছে।

সমাবেশগুলোতে তিন দিন আগে গেছে, হোটেলে খাওয়া-দাওয়া, তাস খেলা- আবার মাঠের মধ্যে তাঁবু টানিয়ে রান্না-বান্না করে খেয়েছে। এটা বড় পিকনিক। শীতের সময় আমরা পিকনিকে যেতাম, বিএনপির নেতাকর্মীরাও সারাদেশ থেকে নেতাকর্মীদের নিয়ে সমাবেশের নামে বড় পিকনিক করছে। সারাদেশে চাঁদাবাজি করছে। অনেক ব্যবসায়ী অভিযোগ দিয়েছেন- বিএনপি ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করছে বা করার চেষ্টা করছে।

আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপি সারাদেশ থেকে বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে গণসমাবেশের নামে লোক জড়ো করছে। তাদের সমাবেশগুলোতে যারা আসছেন, তাদের যাওয়া-আসার খরচ, হোটেলে থাকা-খাওয়া, এমনকি সমাবেশের তিন দিন আগে থেকে সমাবেশস্থলে তাঁবু টানিয়ে অবস্থান করা এবং কয়েক হাজার মানুষের রান্না-বান্নায় অনেক টাকা ব্যয় হচ্ছে- যা কেন্দ্রীয় বিএনপি থেকে দেয়া হচ্ছে। এ

ই টাকা তারা দেশের বিভিন্ন ব্যবসায়ীসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষের কাছ থেকে ভয়ভীতি দেখিয়ে আদায় করছে। ব্যবসায়ীদের অনেকেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে অভিযোগ করেছেন। বিএনপি নেতাকর্মীরা এখন খুবই বেপরোয়া হয়ে গেছে। চাঁদাবাজির টাকা বিএনপি নেতাকর্মীরাও তাদের পকেটে ভরছে। আর বিদেশ থেকে তো তাদের লুটপাটের জমানো টাকা আসছেই। সব মিলিয়ে চাঁদাবাজি ও বিদেশি টাকায় বিএনপির নেতারা এখন ফুরফুরে মেজাজে আছেন। তারা এখন চারদিকে টাকা খরচ করছেন। তারা স্বপ্ন দেখছেন, ক্ষমতায় আসার। কিন্তু এই স্বপ্ন তাদের কোনোদিন বাস্তবায়ন হবে না। পিকনিকেই তাদের তৃপ্তি সীমাবদ্ধ থাকবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর একজন সদস্য ভোরের কাগজকে জানান, বিএনপির সমাবেশে দুবাইসহ বেশ কিছু দেশ থেকে টাকা আসছে। কারা টাকা দিচ্ছে, কীভাবে আসছে- সেই তথ্য সরকারের কাছে এসেছে। আরও খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। তাদের তালিকাও করা হচ্ছে।

ওই নেতা জানান, দেশে বিএনপিপন্থি যেসব ব্যবসায়ী আছেন, তারাও এই সমাবেশগুলোতে অর্থায়ন করছেন। এছাড়া বিএনপির সব পর্যায়ের নেতারা ঢাকা, চট্টগ্রামসহ সারাদেশেই ব্যবসায়ী ও ঠিকাদারদের ভয়ভীতি দেখিয়ে মোটা অঙ্কের চাঁদা আদায় করছে। সেই টাকা তারা সমাবেশগুলোতে খরচ করছে। লোক ভাড়া করে আনছে। তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করছে। দেশে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডেও তারা সেই অর্থ ব্যয় করছে। চাঁদাবাজির টাকা বিএনপির নেতারা নিজেদের পকেটেও ভরছেন। আবার লন্ডনেও পাঠাচ্ছেন। সরকার সব বিষয়েই খোঁজখবর নিচ্ছে। সবার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ভোরের কাগজকে বলেন, বিএনপি নির্বাচন কমিশনে আয়-ব্যয়ের যে হিসাব জমা দেয় তা কি সঠিক? আমরা তো শুনি প্রতি বছর তাদের আয়ে বেশ ঘাটতি থাকে। তাহলে এত টাকা তারা কোথায় পাচ্ছে। তাদের হিসাবে সমাবেশে ভাড়া করে লোক নিয়ে আসা, খাওয়া-দাওয়ার হিসাব উল্লেখ থাকে? সেগুলো দেখলেই তো বোঝা যাবে।

তিনি বলেন, বিএনপি ও জামায়াতের এসব কর্মকাণ্ড নিয়ে জনমনেও নানা প্রশ্ন আছে।

এর আগে গত ২৯ অক্টোবর ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিএনপির সমাবেশগুলোতে অর্থের উৎস নিয়ে প্রশ্ন তুলেন। ওই দিন রংপুরে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ ছিল।

দুবাই থেকে বিএনপির টাকা আসছে অভিযোগ করে ওবায়দুল কাদের সেদিন বলেন, ফখরুল সাহেব এখন চাঙা হয়ে গেছেন। টাকা পাচ্ছেন। দুবাই থেকে টাকা আসছে। আমরা খবর নিচ্ছি। কারা টাকা পাঠায়। খোঁজ পেয়েছি। ব্যবস্থা হবে। টাকার খেলা আর হবে না।

কাদের তার বক্তব্যে আরো বলেন, মির্জা ফখরুল শুয়ে আছেন টাকার বস্তার ওপর। ফখরুল মহাখুশি। টাকা পেলেই বিএনপি খুশি। টাকার বস্তার বিছানার ওপর ফখরুল শুয়ে আছেন।

এরপর আরো একাধিক সভায় বক্তব্য দিতে গিয়েও এমন প্রশ্ন তোলেন তিনি। তার বক্তব্যের সূত্র ধরেই শুরু হয় নানা আলোচনা-সমালোচনা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা প্রায় প্রতিটি বক্তব্যে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে অর্থায়ন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

তাদের মতে, বিএনপি নির্বাচন কমিশনে আয়-ব্যয়ের যে হিসাব জমা দেয়, তা সঠিক কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে।

এদিকে, দুবাই থেকে টাকা আসছে আর মির্জা ফখরুল টাকার বস্তার ওপর শুয়ে আছেন- আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের এমন বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পরদিন এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমরা আমাদের পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করে রাজনীতি করি। কারও পয়সায় রাজনীতি করি না। আমাদের দলের নেতাকর্মীরা চাঁদা দিয়ে প্রতিটি সমাবেশ করছে। এটাই হচ্ছে আমাদের বৈশিষ্ট্য। আমরা কারো কাছ থেকে টাকা-পয়সা নিয়ে রাজনীতি করি না।

তবে মির্জা ফখরুলের এ বক্তব্যকে রাজনৈতিক স্ট্যান্ডবাজি হিসেবেই দেখছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। তারা বলছেন, বিএনপি মহাসচিবের এসব বক্তব্য হাস্যকর। তারা বাস্তবতা আড়াল করার জন্যই এসব বলছেন। দেশের জনগনও জানে, তাদের এই অর্থ কোথা থেকে আসছে।

বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, বিএনপি আমলে তাদের যেসব নেতা ও ব্যবসায়ী বিদেশে কালোটাকা পাচার করেছিলেন। সেই টাকা তো তাদের এখনো শেষ হয়নি। তারা এখন হুন্ডির মাধ্যমে সেসব টাকা নিয়ে আসছে, তাদের সমাবেশে খরচ করছে। তাদের সেই জমানো কালোটাকা এখন দেশের জনগণ ও বাংলাদেশের বিপক্ষে ব্যবহার করছে। দেশের শান্তিশৃঙ্খলা বিনষ্টে সারাদেশে সন্ত্রাসীদের জনসভার নামে জমায়েত করছে। এমনকি দেশের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও গণহারে চাঁদাবাজি করছে। সুতরাং সম্পত্তি বিক্রি করে সমাবেশ করছে- তাদের এ বক্তব্য অবান্তর।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App