×

জাতীয়

দুই জঙ্গি ছিনতাই ঘটনায় কুলকিনারা পায়নি পুলিশ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ নভেম্বর ২০২২, ০৮:১০ এএম

দুই জঙ্গি ছিনতাই ঘটনায় কুলকিনারা পায়নি পুলিশ

ছবি: সংগৃহীত

পুরান ঢাকার আদালতপাড়া থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গি ছিনতাইয়ের কুলকিনারা হয়নি তিন দিনেও। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কোনো ইউনিটই এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পায়নি। ওই দুইজন কোন পথে, কোথায় চলে গেল- তার সদুত্তর মিলছে না। তারা দেশেই আছেন, না সীমানা পাড়ি দিয়েছেন তার সঠিক তথ্য কারো জানা নেই। পরিকল্পনা এবং সহায়তাকারীদের ব্যাপারে তথ্য মিললেও ধরা পড়েনি কেউ।

রিমান্ডে থাকা ১০ জনের তথ্য যাচাই-বাছাই ও সিটিটিসি, এটিইউ, র‌্যাব, পুলিশ, ডিবি, সিআইডিসহ গোয়েন্দারা ওই দুজনকে ধরতে হন্যে হলেও নেই কোনো সুখবর। এর মধ্যে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) বলেছে, জঙ্গিরা ভিপিএন ব্যবহার করে যোগাযোগ করতে পারে। তাই জঙ্গি ছিনতাইয়ের বিষয়ে আগাম কোনো গোয়েন্দা তথ্য মেলেনি। ডিএমপি, পুলিশ সরদ দপ্তর তদন্ত কমিটি গঠনের পর গতকাল মঙ্গলবার তদন্ত কমিটি গঠন করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তদন্ত শেষ করতে সময় চেয়েছে ডিএমপির কমিটি।

অঘটনের তিন দিন পর সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চাঞ্চল্যকর গুরুত্বপূর্ণ আসামি এবং সাজাপ্রাপ্ত আসামি বা একাধিক মামলার দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আদালতে উপস্থাপনের সময় ডাণ্ডাবেড়ি পরানোর জন্য কারা সদর দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। সিআইডির প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া গতকাল দুপুরে বলেন, জঙ্গিরা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। ভিপিএন ব্যবহার করায় তাদের পরিকল্পনা জানা যায়নি। পলাতকদের ধরতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অপরাধ ও তথ্য বিভাগের (প্রসিকিউশন) উপকমিশনার মো. জসিম উদ্দিন জানান, আদালতে হাজিরের সময় গুরুত্বপূর্ণ চাঞ্চল্যকর আসামিদের ডাণ্ডাবেড়ি না পরানোর কারণে ইতোমধ্যে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আদালত থেকে পালিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। ডাণ্ডাবেড়ি পরানো থাকলে এ ধরনের অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব হতো। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে কারা সদর দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

তিনি বলেন, সোমবারের মতো মঙ্গলবারও আদালতে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সোমবার রাজারবাগ পুলিশ লাইন থেকে তিন প্লাটুন অতিরিক্ত পুলিশ আদালতে মোতায়েন করা হয়েছিল। তারা মঙ্গলবারও দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া আদালত প্রাঙ্গণে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিতে ডিএমপি ও লালবাগ বিভাগ কাজ করছে।

ডিএমপির তদন্ত কমিটির সভাপতি অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপস) এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, কমিটি গঠনের ৩ কার্যদিবসের মধ্যে অর্থাৎ গতকাল তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে দেয়া হচ্ছে না। তদন্ত শেষ করতে আরো সময় লাগবে। রবিবার ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক সই করা এক আদেশে ৫ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা ছিল ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গঠিত এই কমিটির।

কমিটি সূত্রে জানা যায়, বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় বিচার-বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন জমা দিতে আরো সময় চাইবে কমিটি। আসামি পালিয়ে যাওয়া সংক্রান্ত দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ এবং ভবিষ্যতে করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত সুপারিশমালা প্রণয়নের কথা রয়েছে এই তদন্ত কমিটির। এদিকে, সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চাঞ্চল্যকর গুরুত্বপূর্ণ আসামি এবং সাজাপ্রাপ্ত আসামি বা একাধিক মামলার দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আদালতে উপস্থাপনের সময় ডাণ্ডাবেড়ি পরানোর জন্য কারা সদর দপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছে ডিএমপির প্রসিকিউশন বিভাগ।

সোমবার ডিএমপির প্রসিকিউশন বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার জসিম উদ্দিন বিষয়টি জানিয়েছেন। তিনি জানান, কোর্টে হাজিরের সময় গুরুত্বপূর্ণ আসামিদের ডাণ্ডাবেড়ি না পরানোর কারণে এরইমধ্যে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আদালত থেকে পালিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। ডাণ্ডাবেড়ি পরানো থাকলে এ ধরনের অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব হতো। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে কারা সদর দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

কারা সদর দপ্তরে পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, জেলখানা থেকে সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চাঞ্চল্যকর গুরুত্বপূর্ণ আসামি এবং সাজাপ্রাপ্ত আসামি বা একাধিক মামলার দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আদালতে উপস্থাপনের সময় অবশ্যই জেলকোড অনুযায়ী ডাণ্ডাবেড়ি পরানো অবস্থায় কোর্টে পাঠানোর নির্দেশনা ছিল। এমতাবস্থায় জেলখানা থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলার আসামিদের কোর্টে পাঠানোর সময় জেলকোড অনুযায়ী অবশ্যই ডাণ্ডাবেড়ি পরানো এবং জঙ্গি ও সন্ত্রাসীসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ আসামিদের আলাদা প্রিজন ভ্যানে পাঠানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো।

অন্যদিকে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত চত্বর থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ। চার সদস্যবিশিষ্ট এ কমিটি গঠন করে স¤প্রতি সংশ্লিষ্টদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, রবিবার ঢাকার সিএমএম আদালত প্রাঙ্গণ থেকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে সাজাপ্রাপ্ত আবু সিদ্দিক ওরফে সোহেল ওরফে সাকিব ও মাইনুল হাসান শামীম ওরফে ইমরানকে (ব্লগার দীপন এবং অভিজিৎ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডের আদেশপ্রাপ্ত আসামি) তার সহযোগীরা পুলিশ সদস্যদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়।

এ ঘটনায় চার সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলো। সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে (কারা অনুবিভাগ) আহ্বায়ক করে গঠিত কমিটির বাকি তিন সদস্য হলেন- মহাপুলিশ পরিদর্শকের প্রতিনিধি (ডিআইজি পদ মর্যাদার নিচে নয়), অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক এবং ঢাকার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। কমিটি আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করবে বলে এতে জানানো হয়।

অন্যদিকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়ার পর আদালতে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যদের জন্য ৩০টি হেলমেট ও ৩০টি বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট দেয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের হাজতখানার ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক আব্দুল হাকিম জানিয়েছেন, জঙ্গিসহ চাঞ্চল্যকর মামলার আসামিদের হাজতখানা থেকে এজলাস কক্ষে আনা নেয়ার সময় পুলিশ সদস্যরা এসব নিরাপত্তা সামগ্রী ব্যবহার করবেন।

এছাড়া পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনার পর ঢাকার নিম্ন আদালতগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তা নেয়া হয়েছে। গতকাল সকাল থেকে সিএমএম আদালত, চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, মহানগর দায়রা জজ আদালত, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল, সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল, জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রতিটি ফটকে ব্যাপক সংখ্যক পুলিশ সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে আদালত প্রাঙ্গণে অতিরিক্ত তিন প্লাটুন পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

এছাড়া সাদা পোশাকে পরিস্থিতি নজরদারি করছেন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনাকে ‘অস্বাভাবিক’ বর্ণনা করে তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করার দাবি জানিয়েছে দীপন স্মৃতি সংসদ। গতকাল দীপন স্মৃতি সংসদের সদস্য সচিব ও দীপনের স্ত্রী রাজিয়া রহমান জলি স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দুই জঙ্গির সহযোগীদেরও দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়।

প্রসঙ্গত, রবিবার দুপুরে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে ঢাকার আদালত থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় তাদের সহযোগীরা। পালিয়ে যাওয়া জঙ্গিরা হলেন- সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার মাধবপুরের মইনুল হাসান শামীম ও লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার ভেটশ্বর গ্রামের আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব। তারা দুজনই জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্য ও তারা প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার একটি মামলায় হাজিরা দিতে তাদের সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে আনা হয়েছিল।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App