×

জাতীয়

তৎপরতা-সক্ষমতার বার্তা দিলো ‘জঙ্গিরা’!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ নভেম্বর ২০২২, ০৯:৩১ এএম

তৎপরতা-সক্ষমতার বার্তা দিলো ‘জঙ্গিরা’!

প্রতীকী ছবি

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান ও গোয়েন্দা তৎপরতার মধ্যেও জঙ্গিরা বারবার মাথা চাড়া দেয়ার চেষ্টা করছে। নাম পাল্টে নতুন জঙ্গি সংগঠন গড়েও তারা সক্রিয় আছে। নিয়ন্ত্রণে থাকলেও নির্মূল হয়নি- আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এমন দাবির মধ্যেই গতকাল রবিবার আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘটনার জন্ম দিল জঙ্গিরা। দিনে-দুপুরে ঢাকার ব্যস্ততম আদালত পাড়ার রায়সাহেব বাজার মোড়সংলগ্ন সিজেএম আদালত ফটকের সামনে থেকে পুলিশের মুখে স্প্রে করে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) দুই সদস্যকে ছিনিয়ে নিয়েছে তারা। এর মধ্য দিয়ে জঙ্গিরা তাদের সক্ষমতা নতুন করে জানান দিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে জঙ্গি সন্ত্রাসীরা।

কারাগার ও আদালতসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র মতে, কারাগারে জঙ্গিদের মধ্যে যোগাযোগের সুযোগ আছে। এই সুযোগে তারা তথ্য আদান-প্রদান করে আসছে। বিশেষ করে আদালতে হাজিরার সময়ও তারা যোগাযোগ রক্ষা করে থাকে। পরিবারের সদস্যদের চেয়ে ‘সাথীদের’ সঙ্গে তাদের যোগাযোগ বেশি। এর মধ্য দিয়ে তারা পালানোর পরিকল্পনাসহ জঙ্গিবাদের বিস্তৃতির শলাপরামর্শ করে আসছে। রবিবারের ঘটনার মধ্য দিয়ে কারাগার ও আদালতে জঙ্গি নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনায় বড় ধরনের ব্যর্থতার চিত্র উঠে এসেছে। প্রশ্ন উঠেছে কারা অভ্যন্তর, জঙ্গিদের আনা-নেয়ার পথ-বাহন ও আদালতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে। ডাণ্ডাবেরি ছাড়া কীভাবে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গিদের আদালতে আনা নেয়া করা হয়- সে প্রশ্নেরও সদুত্তর মিলছে না।

এ প্রসঙ্গে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার ভোরের কাগজকে বলেন, জঙ্গিদের সক্ষমতা ও সামর্থ্য আগের মতো না থাকলেও একদম নেই তা বলা যাবে না। তারা সক্রিয় রয়েছে এ ঘটনাই তার প্রমাণ। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঘটনাটি অবশ্যই অনভিপ্রেত। তবে একটা ঘটনা দিয়েও সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করা ঠিক হবে না। এ বিষয়ে কারো গাফিলতি থাকতে পারে। থাকলে তদন্তের মাধ্যমে তা উঠে আসবে নিশ্চয়ই। তবে আমি বলব, সর্বোচ্চ গুরত্ব দিয়ে এ ঘটনা ঘটার পেছনে যে ব্যত্যয় ও অসম্পূূর্ণতাগুলো রয়েছে তা বন্ধ করতে হবে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশীদ বলেন, আমরা জানি যে আসামি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হলে তাদের অপরাধের ভয়ংকরতার ওপর নির্ভর করে নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়। সেক্ষেত্রে এদের ভয়ংকর মনে না করে সাধারণ বা কী নিরাপত্তা দেয়া হয়েছে তা আমাদের জানা নেই। তবে সেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা যথেষ্ট ছিল না- জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনা থেকে তা স্পষ্ট বোঝা গেছে। তাহলে প্রশ্ন হলো, নিরাপত্তা ব্যবস্থা যথেষ্ট না থাকার পেছনে কী কাজ করেছে। কেউ কী জঙ্গিদের প্রতি সভানুভূতিশীল হয়ে অবহেলা করলেন। নাকি জঙ্গি বা অন্যান্য যে কোনো মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আনা নেয়ার যে পদ্ধতি রয়েছে- সেখানে কোনো ঘাটতি আছে। সেটাকে খতিয়ে দেখে তা নির্ণয় করে যুগোপযোগী করতে হবে। তিনি আরো বলেন, সাধারণত এমন কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে প্রশাসনকে ব্যর্থ প্রমাণ করা জঙ্গিদের অন্যতম উদ্দেশ্য থাকে। আর এ ঘটনার মধ্য দিয়ে জঙ্গিদের সফলতা ও পুলিশের ব্যর্থতা নিঃসন্দেহে প্রকাশ পেয়ে যায়। তাই আমাদের জঙ্গিবিরোধী নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে স্বস্তিতে না থেকে সক্রিয় থাকতে হবে। আসামি ছাড়াও ঢাকা শহরের নিরাপত্তার জন্যও একটি আলাদা নিরাপত্তা ব্যবস্থা কাজ করে। মোড়ে-মোড়ে পুলিশসহ নানা ব্যবস্থা থাকে। তবে এতকিছুর মধ্যেও তারা চলে গেল। তাই আমাদের কী কী বিষয়ে ঘাটতি রয়েছে তা নিয়েও ভাবতে হবে।

জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সময়ে জঙ্গিবিরোধী অভিযান ও তদন্তে গত কয়েক বছরে অন্তত ১৭টি জঙ্গি সংগঠনের তৎপরতার খবর রয়েছে। বর্তমানে অন্তত ১১টি জঙ্গি সংগঠনের কম-বেশি তৎপরতা রয়েছে। তৎপরতার বর্তমানে মূল আলোচনায় রয়েছে ৬টি সংগঠন। সেগুলো হলো- জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি), আনসার আল ইসলাম, হিযবুত তাহরীর, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি), হরকাতুল জিহাদ (হুজি) ও জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া।

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশাল ও ভালুকার মাঝামাঝি সাইনবোর্ড এলাকায় পুলিশের প্রিজনভ্যানে ঝটিকা আক্রমণ চালিয়ে এবং এক পুলিশকে হত্যা করে জেএমবির মজলিসের শুরা সদস্য সালাহউদ্দিন ওরফে সালেহীন (৩৮), হাফেজ মাহমুদ ওরফে রাকিব হাসান (৩৫) ও জাহিদুল ইসলাম ওরফে মিজান ওরফে বোমা মিজান (৩৫)। এদের মধ্যে সালাহউদ্দিন ও হাফেজ মাহমুদ ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ও বোমা মিজান যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি। ঘটনার দিন বিকাল নাগাদ ছিনিয়ে নেয়া জঙ্গিনেতা হাফেজ মাহমুদকে টাঙ্গাইলের পুলিশ গ্রেপ্তার করে। রাতে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন তিনি। পরে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) তিন সদস্য ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ৮ জনকে আটক করেছে র‌্যাব। প্রায় ৮ বছর আগে ময়মনসিংহের ত্রিশালে পুলিশের প্রিজনভ্যানে ঝটিকা আক্রমণ চালিয়ে এবং এক পুলিশকে হত্যা করে জেএমবির তিন জঙ্গি ছিনতাইয়ের পর এখনো ধরা পড়েনি দুর্ধর্ষ জঙ্গি বোমা মিজান ও সালেহীন। এর মধ্যে রবিবার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গি ছিনতাই হলে নতুন করে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App