×

জাতীয়

কারাগারে থাকা ১০ জঙ্গি রিমান্ডে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ নভেম্বর ২০২২, ১০:১৬ পিএম

কারাগারে থাকা ১০ জঙ্গি রিমান্ডে

ছবি: সংগৃহীত

আদালত থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনতাইয়ের ঘটনায় ১০ জনের ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রবিবার (২০ নভেম্বর) রাতে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফি উদ্দিনের আদালত এ আদেশ দেন। রিমান্ডে যাওয়া আসামিরা সকলেই মোহাম্মদপুর থানার মামলায় কারাগারে আটক রয়েছেন।

এর আগে এদিন রাতে রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় সিএমএম আদালতের পরিদর্শক জুলহাস বাদী হয়ে ২০ জনের বিরুদ্ধে এ মামলা করেন। পরে মোহাম্মদপুর থানার মামলায় কারাগারে থাকা ওই ১০ আসামিকে রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আবু সাইদ। আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত এ আদেশ দেন।

আসামিরা হলেন- আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের সদস্য আবু সিদ্দিক সোহেল ও মইনুল হাসান শামীম (সদ্য পলাতক), শাহিন আলম, শাহআলম, ঈদী আমিন, বিএম মজিবুর রহমান, মেহেদী হাসান, সুমন হোসেন পাটোয়ারী, খায়রুল ইসলাম, মোজাম্মেল হোসেন, আরাফাত রহমান, শেখ আব্দুল্লাহ, আ: সবুর, রশিদুন্নবী ভূঁইয়া, সৈয়দ মো. জিয়াউল হক, সাব্বিরুল হক চৌধুরী, আয়মান ওরফে মশিউর রহমান, তানভীর শামশেদ, রিয়াজুল ইসলাম ও ওমর ফারুক।

এছাড়া এদিন দুপুর সোয়া ১২ টার দিকে ঢাকার চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রধান ফটকের সামনে থেকে পুলিশের চোখে-মুখে পিপার স্প্রে করে প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

ওই দুই আসামি হলেন- নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের সদস্য আবু সিদ্দিক সোহেল ও মইনুল হাসান শামীম। শামীমের বাড়ি সুনামগঞ্জের ছাতকের মাধবপুর গ্রামে। এছাড়া সোহেলের বাড়ি লালমনিরহাটের আদিতমারীর ভেটোশ্বর গ্রামে বলে জানা মামলা সূত্রে গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মোহাম্মদপুর থানায় দায়ের করা সন্ত্রাস বিরোধ আইনের মামলায় আজ শুনানির দিন ধার্য ছিলো। আসামির সংখ্যা ২০ জন। এদের মধ্যে দুই আসামি জামিনে আছেন। তারা আদালতে হাজির হন। ৬ আসামি শুরু থেকে পলাতক রয়েছেন। অপর ১২ আসামিকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়।

এরপর শুনানি শেষে ২০ আসামির বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ঢাকার সন্ত্রাস বিরোধ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান। একই সঙ্গে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ৫ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন।এরপর আসামিদের আদালত থেকে ঢাকার সিএমএম আদালতের হাজতখানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। ঢাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মেইন গেইটে আসলে হঠাৎ করে কয়েকজন দুর্বৃত্ত পুলিশের চোখে স্প্রে নিক্ষেপ করে দুই আসামিকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। পুলিশকে মারধরও করে তারা। এদের মধ্যে পুলিশ সদস্য নুরে আজাদ আহত হন।

প্রত্যক্ষদর্শী আইনজীবীর ড্রাইভার শিপলু জানান, প্রতিদিন সকাল ৮টার দিকে স্যারকে (আইনজীবী) উত্তরা থেকে নিয়ে আসি। এরপর আর কোনো কাজ থাকে না। আদালতের সামনেই বসেছিলাম। হঠাৎ দেখি হট্টগোল। দেখি কয়েকজন পুলিশের চোখে স্পে মারছে। হাতকড়া পড়া চার আসামিকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। আহত হয়েও দুই জনকে আটক করে পুলিশ। তবে অপর দুইজনকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় তারা।

এছাড়া ঘটনাস্থলে উপস্থিত কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, চারজন ড্রাইভারও এসেছিলেন পুলিশকে সাহায্য করতে। তাদের ওপরও স্প্রে নিক্ষেপ করে জঙ্গিরা।

এদিকে এ ঘটনার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান ও অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশিদসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান।

হারুন অর রশিদ বলেন, এটা একটা অনাকাঙ্খিত ঘটনা। আসামি অনেকেই ছিলো। দুইটি মোটরসাইকেলে ৬ জন এসে নতুন টেকনিক স্প্রে করে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। পুলিশের গায়েও তারা হাত তুলেছে। স্পে করার কারণে তারা চোখে দেখতে পায় নাই। মোটরসাইকেলে করে তারা পালিয়ে যায়। আমাদের ডিবি পুলিশ প্রত্যেকটা জায়গায় চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করছে। আমরা সিসি ক্যামেরা পর্যালোচনা করছি। সবাই কাজ করছে। তাদের শীঘ্রই গ্রেপ্তার করা হবে।

জানা যায়, ২০১৬ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি পুলিশ খবর পায় মোহাম্মদপুর থানার নবোদয় হাউজিং এলাকায় আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের সদস্যরা অস্ত্রসহ অবস্থান করছে। তারা সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, ব্লগার-লেখক-প্রকাশকদের হত্যার উদ্দেশ্যে একত্রিত হয়েছে। পুলিশ সেখানে গিয়ে শাহীন আলম ওরফে কামাল এবং শাহ আলম ওরফে সালাউদ্দিনকে আটক করে। পরে পুলিশকে লক্ষ্য করে জঙ্গিরা গুলিবর্ষণ করে। আল্লাহু আকবর ধ্বনি দিয়ে পালাতে থাকে। ওইসময় পুলিশ পরিদর্শক বাহাউদ্দিন ফারুকীকে ধারালো চাপাতি দিয়ে মাথায় কোপ মারে। এসময় আসামিদের কাছ থেকে ৮ টি গ্রেনেড, ৯ টি বোমাসহ বিস্ফোরকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করে। মামলাটি তদন্ত করে ২০ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন।

এদিকে পলাতক ওই দুই জঙ্গিসহ বাকিদের গ্রেপ্তারে রাজধানীতে রেড অ্যালার্ট জারি করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। রাজধানীর প্রতিটি থানা ও অন্যান্য ইউনিটকে চেকপোস্ট বসানোর নির্দেশনা দেয়া হয়। তারা যেন ঢাকার বাইরে না চলে যায় সে বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া পালিয়ে যাওয়া ওই দুই জঙ্গিকে ধরিয়ে দিতে পারলে প্রত্যেকের জন্য ১০ লাখ টাকা করে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ পুলিশ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App