×

খেলা

ইউরোপ নাকি লাতিন আমেরিকা কোথায় যাবে শিরোপা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ নভেম্বর ২০২২, ০৪:৫১ পিএম

ইউরোপ নাকি লাতিন আমেরিকা কোথায় যাবে শিরোপা

ছবি: সংগৃহীত

আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পর কাতারে শুরু হচ্ছে বিশ্বকাপ ফুটবলের ২২তম আসর। বিশ্বকাপের ৯২ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথমবারের মতো বছরের মাঝামাঝি সময়ের বদলে নভেম্বর-ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ফুটবলের এই মহারণ। বিশ্বকাপ মানেই উন্মাদনা, যার ছোঁয়া লেগেছে বিশ্বের আনাচে-কানাচে।

আগের ২১টি আসর মিলিয়ে বিশ্বকাপ ফুটবল এখন পর্যন্ত উপহার দিয়েছে ৮ চ্যাম্পিয়ন দল। যার মধ্যে ব্রাজিল ৫, জার্মানি ও ইতালি ৪ বার করে। আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে ও ফ্রান্সের দখলে রয়েছে ২টি করে শিরোপা। ইংল্যান্ড ১৯৬৬ সালে ও স্পেন ২০১০ সালে শিরোপা জিতেছে। তাই বলা চলে বিশ্বকাপে শিরোপার লড়াইটা মূলত কয়েকটি দলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে।

আগের ২১ আসরের মধ্যে ইউরোপ শিরোপা জিতেছে ১২ বার। লাতিন আমেরিকার দল ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও উরুগুয়ে জিতেছে ৯ বার। তাই ফুটবলানুরাগীদের প্রশ্ন- এবার কাতার বিশ্বকাপের শিরোপা যাবে কার ঘরে। ইউরোপের কোনো দেশে নয়তো লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল কিংবা আর্জেন্টিনায়। শিরোপা জয় নিয়ে বিভিন্নজন ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন।

কারো মতে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা এবার বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় দাবিদার, কেউ বা বলছে সর্বোচ্চ পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলের কথাও। কারো কাছে শোনা যাচ্ছে, বিশ্বকাপের শিরোপা নিজেদের কাছেই ধরে রাখবে বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স।

কাতার বিশ্বকাপ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার শেষ নেই। একেকজন একেক রকম আজগুবি সব মতও দিচ্ছেন। কেউ বলছেন, ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা এবার প্রথম রাউন্ডেই বাড়ি ফিরবে। ব্রিটেনের ক্রীড়া বিশ্লেষণ কোম্পানি অপটা স্পোর্টস ডাটা জানিয়েছে এবারের বিশ্বকাপ জেতার দৌড়ে সবার চেয়ে এগিয়ে আছে ব্রাজিল।

২০০২ সালের পর আর বিশ্বকাপ জিততে পারেনি ব্রাজিল। কাতার বিশ্বকাপ জয়ের প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে তাদের। ডাটা পর্যালোচনা করার পর এমনই তথ্য তুলে ধরেছে অপটা স্পোর্টস ডাটা কোম্পানি। কৃত্রিম উপায়ে পারফরম্যান্সের পরিসংখ্যান মডেল ব্যবহার করে বিশ্বকাপ বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

২০২২ বিশ্বকাপে কে জিতবে, সেটি জানাতে ভবিষ্যদ্বাণী মডেলে প্রতিটি ম্যাচের ফলাফলের সম্ভাব্য জয়, ড্র বা হার, পরিসংখ্যান ও পারফরম্যান্স, দলের র‌্যাঙ্কিং, বাজির দর ব্যবহার করেছে অপটা স্পোর্টস ডাটা কোম্পানি।

অপটা স্পোর্টসের সব পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বকাপ জয়ের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি ব্রাজিলের। পাঁচবারের বিশ্বজয়ী সেলেসাওরাই এবার ট্রফি জয়ের জন্য ফেভারিট। মডেল অনুযায়ী ট্রফি জয়ে ১৬ শতাংশ সম্ভাবনা রয়েছে ব্রাজিলের।

ফেভারিট হিসেবেও ফাইনালে ওঠার সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ সম্ভাবনা রয়েছে হলুদ জার্সিধারীদেরই। বিশ্বকাপ জয়ে ব্রাজিলের পরের স্থানেই আছে আর্জেন্টিনা। এই বছরের বিশ্বকাপ জয়ে সম্ভাবনাময়ী দ্বিতীয় দল গ্রুপ ‘সি’তে থাকা আর্জেন্টিনা। লিওনেল মেসির নেতৃত্বাধীন আলবেসেলেস্তোদের বিশ্বকাপ জয়ের সম্ভাবনা ১৩ শতাংশ।

কাতার বিশ্বকাপই হতে যাচ্ছে আর্জেন্টাইন সুপারস্টার লিওনেল মেসির শেষ বিশ্বকাপ। কয়েক দিন আগেই এ খবর দিয়েছেন তিনি নিজেই। তবে নিজের শেষ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে ফেভারিট বলেই মানছেন না মেসি। তার দাবি চির প্রতিদ্ব›দ্বী ব্রাজিলই বিশ্বকাপের অন্যতম দাবিদার।

ডিরেক্ট স্পোর্টস স্টারকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে আসন্ন কাতার বিশ্বকাপের পাঁচ ফেভারিটের নাম জানিয়েছেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। যেখানে বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় দুই দাবিদার বলতে ব্রাজিল এবং ফ্রান্সের নামই বলেছেন মেসি। এছাড়া অন্য তিন দল ইংল্যান্ড, জার্মানি এবং স্পেনকেও কাতার বিশ্বকাপের ফেভারিট বলে মানছেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক।

ব্রাজিলকে শিরোপার সবচেয়ে বড় দাবিদার বলা হচ্ছে মূলত তাদের দুর্দান্ত স্কোয়াডের জন্য। সাম্প্রতিক সময়ের আসরগুলোর কোনোটিতেই এত দুর্দান্ত স্কোয়াড পায়নি হলুদ জার্সিধারীরা। গত এক দশকের অতিমাত্রায় নেইমারনির্ভরতা কাটিয়ে ব্রাজিল এখন তারকায় পরিপূর্ণ এক দল।

লিওনেল মেসি যে দলে খেলেন, তাকে ফেভারিটের তালিকায় রাখতেই হয়। তবে মেসি একাই এই আর্জেন্টিনার ত্রাতা নন, বরং দল হিসেবেই আর্জেন্টিনা দারুণ সব খেলোয়াড় নিয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করছে। খুব বড় তারকা না হলেও বেশিরভাগ খেলোয়াড়ই নিজেদের পজিশনে দুর্দান্ত পারফর্মার। কোচ স্কালোনি অভিজ্ঞতায় পিছিয়ে থাকলেও দল গোছানোয় দিয়েছেন মুনশিয়ানার ছাপ।

সেই সঙ্গে খেলোয়াড়দের পারস্পরিক সম্পর্ক বৃদ্ধিতে দারুণ কাজ করেছেন তিনি। যার ফলও পাচ্ছেন। ২০১৯ সালে কোপা আমেরিকার সেমিফাইনালে হারার পর টানা ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত আলবেসেলেস্তোরা। এ সময়ে ঘুচেছে দীর্ঘ শিরোপা খরাও।

২০১৮ বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে হারের পর ২০২০ ইউরোতে ফাইনালে উঠেছিল হ্যারি কেইন-বুকায়ো সাকার দল। কিন্তু ফাইনালে ইতালির বিপক্ষে টাইব্রেকারে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয় থ্রি লায়নদের। এবার ফেভারিটদের তালিকায় আছে ইংল্যান্ড। দলে তারকার ছড়াছড়ি। প্রতি পজিশনেই আছে বিশ্বসেরা তারকাদের ছড়াছড়ি।

এক বিশ্বকাপ বিরতি দিয়ে বিশ্বকাপের মঞ্চে ফিরেছে নেদারল্যান্ডস। ২০১০ এ ফাইনাল ও ২০১৪ বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল খেলা ডাচরা এই বিশ্বকাপে হতে পারে ডার্কহর্স। কাতারে ফ্রান্সের বিশ্বকাপ স্বপ্নে বড় বাধা ইনজুরি। বিশ্বকাপে ইনজুরির কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দল ফ্রান্সই। ইনজুরির কারণে বিশ্বকাপ স্কোয়াডেই থাকতে পারেননি পল পগবা ও এনগোলো কান্তে। যা তাদের মধ্যমাঠের শক্তি হ্রাস করেছে মারাত্মকভবে।

এখানেই থেমে নেই। স্কোয়াড ঘোষণার পর ইনজুরির কারণে নাম প্রত্যাহার করে নেন প্রেসনেল কিম্পেম্বের মতো ডিফেন্ডার। অনুশীলনের সময় সতীর্থের সঙ্গে বল দখলের লড়াইয়ে ধাক্কা খেয়ে ছিটকে গেছেন ক্রিস্টোফার এনকাকু। ক্রোয়েশিয়া ২০১৮ সালে রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে ফাইনালে পৌঁছেছিল। কারণ লুকা মড্রিচ। দলকে ফাইনাল পর্যন্ত একা টেনে নিয়ে ব্যালন ডি’অর জেতার গৌরব অর্জন করেছিলেন।

চার বছর পর আরেকবার কি বিশ্বকে চমকে দিতে পারবে মড্রিচের দল? বেলজিয়ামের এবারের দলটাকে বলা হয় সোনালি প্রজন্ম। কেভিন ডি ব্রুইন এবং এডেন হ্যাজার্ডের মতো সুপারস্টার রয়েছে দলটিতে। সারা বিশ্বের আর্জেন্টাইন ও ব্রাজিলের সমর্থকদের প্রত্যাশা ১৮ ডিসেম্বর কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে ফাইনালে খেলুক ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা।

এবার যদি বিশ্বকাপ লাতিন আমেরিকায় যায়, তাহলে কিছুটা ব্যবধান কমবে। ২০০২ সাল পর্যন্ত বিশ্বকাপের শিরোপা জয়ে এগিয়ে ছিল লাতিনরা। ২০০৬ সালে ইতালি, ২০১০ সালে স্পেন, ২০১৪ জার্মানি এবং ২০১৮ সালে ফ্রান্স শিরোপা জেতায় ইউরোপের পাল্লা ভারি হয়েছে। এবার মেসি-নেইমারদের সামনে লাতিনের মান রক্ষার হাতছানি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App