×

মুক্তচিন্তা

অর্থনীতির শত্রু হুন্ডি

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২০ নভেম্বর ২০২২, ০৭:৫৮ এএম

হুন্ডি বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য সাক্ষাৎ শত্রু হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ভয়াবহ এ দানব গিলে খাচ্ছে অর্থনীতির অনেক ইতিবাচক অর্জন। হুন্ডির মাধ্যমে পাচার হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা। মোবাইল ব্যাংকিং সেবা বিকাশ ও রকেটের কারসাজিতে তছনছ হয়ে যাচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের অনেক দেশে প্রকাশ্যে সাইনবোর্ড লাগিয়ে হুন্ডির ব্যবসা করছে বাংলাদেশের দুটি মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রতিষ্ঠান। ফলে দেশে আসছে না ডলার। ডলার সংকটে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পকারখানায় অচলাবস্থা দেখা দিচ্ছে। বন্ডে বিনিয়োগও চলছে মন্দা। প্রবাসীদের বন্ড নবায়ন হচ্ছে না। মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে হুন্ডি হওয়ায় বৈধ পথে রেমিট্যান্স কমে যাচ্ছে। বিশেষ করে ছোট আকারের রেমিট্যান্সের অধিকাংশই আসছে এ উপায়ে। হুন্ডিকারীরা কৌশলে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সাইনবোর্ড টানিয়ে অর্থ সংগ্রহ করছে। এরপর মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের মাধ্যমে তা পৌঁছে দেয়া হচ্ছে সুবিধাভোগীর কাছে। হুন্ডিকারীরাই মূলত কৌশলে এ কাজ করছে। সিআইডির তদন্তে ওঠে এসেছে, বিদেশ থেকে হুন্ডির মাধমে যে শুধু রেমিট্যান্সের টাকাই আসছে তা নয়, ইয়াবা বা মাদক ব্যবসার লেনদেনের টাকাও বিকাশ ব্যবহার করে দেশের বাইরে পাঠানো হচ্ছে। সম্প্রতি টেকনাফের মানি লন্ডারিং আইনে দায়ের করা মামলার তদন্তে সিআইডি জানতে পারে, টেকনাফ থেকে ইয়াবা এনে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রির পর, সেই বিক্রির টাকা আবার মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টেকনাফে পাঠিয়ে দেয়া হয়। সেখান থেকে হাতঘুরে টাকা চলে যায় মিয়ানমারেও। দেশের ডলারের দাম বাড়ার কারণে তদন্ত শুরু করে সিআইডি। তদন্তে নেমে হুন্ডি কারবারের সঙ্গে জড়িত ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে গত ৪ মাসে ২০ কোটি ৭০ লাখ টাকা পাচার হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া সিআইডির সাইবার ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে এমএফসে হুন্ডি করে এমন ৫ হাজারের বেশি এজেন্টের সন্ধান পেয়েছে। বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের (বিএফআইইউ) তদন্তে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী প্রবাসীদের টাকা ডিজিটাল হুন্ডির মাধ্যমে দেশে আসার তথ্য ওঠে আসে। সিআইডির প্রধান বলেন, যে নাম্বারগুলোতে টাকা এসেছে, সেগুলো বেশিরভাগই বিকাশ, নগদ, রকেট ও উপায়ের নামে নিবন্ধিত। এতে প্রবাসীদের অর্থ বৈদেশিক মুদ্রায় দেশে আসছে না। ফলে রেমিট্যান্স হারাচ্ছে সরকার। এমন পরিস্থিতিতে অবৈধ এসব হুন্ডি নাম্বার ব্যবহারকারীকে ধরতে মাঠে নামে সিআইডি। সংস্থাটি জানায়, গত এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত এক লাখ ৮১ হাজার ৫০৫টি সন্দেহজনক লেনদেন চিহ্নিত করে বিএফআইইউ। এসব নাম্বারের মোট লেনদেনের ৯০ শতাংশ বা তার বেশি শুধু ‘ক্যাশ ইন’ হয়েছে। মোট লেনদেনের ৯০ শতাংশের বেশি ‘ক্যাশ আউট’ হয়েছে। রাত ২টা থেকে ভোর ৬টার মধ্যে প্রতি মিনিটে চারটি বা তার বেশি ‘ক্যাশ ইন’ হয়েছে। এভাবে বিকাশের ৬৯ হাজার ৬১৩টি, উপায়ের ৩৮ হাজার ৮৩৫টি, রকেটের ৩৮ হাজার ৩৫৮টি এবং নগদের ৩৪ হাজার ৩৫৮ এজেন্টকে প্রাথমিকভাবে সন্দেহজনক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ডলার সংকট মোচনে যেসব কারণে প্রবাসীরা ব্যাংকিং খাতের বদলে হুন্ডির মাধ্যমে দেশে অর্থ পাঠাতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন সে পথ বন্ধ করতে হবে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো সক্রিয় হলে কারা হুন্ডির সঙ্গে জড়িত তা চিহ্নিত করা কঠিন কিছু নয়। কারণ কোন এলাকার কারা হুন্ডি ব্যবসা করে এটি ওপেন সিক্রেট। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো সক্রিয় হলে তাদের জালের মধ্যে আটকানো সম্ভব। সংকট নিরসনে ব্যাংকিং খাতে আসা অর্থের জন্য প্রণোদনা বাড়ানোর বিষয়েও গুরুত্ব দিতে হবে। আর কে চৌধুরী মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষাবিদ। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App