×

সম্পাদকীয়

পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখুন

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০২২, ১২:৩৪ এএম

পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখুন

নিত্যপণ্যের বাজার একেবারেই সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। চাল-ডাল, তেল, মাছ-মাংস, পেঁয়াজ-মরিচসহ সব ধরনের সবজি কিনতে ক্রেতার নাভিশ্বাস। সবশেষ বাড়ল চিনি ও তেলের দাম। আয়ের সঙ্গে ব্যয় সামলাতে না পেরে মানুষ এখন দিশাহারা। সংসার সামলাতে হাত পড়েছে সঞ্চয়ে। আগামী দিনগুলো কোনদিকে যাবে- সেটা দেখার বিষয়। করোনা মহামারিতে কাবু হয়েছেন সব পেশার মানুষ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবও পড়েছে। বেড়েছে রেকর্ডমূল্য জ¦ালানি তেলের। বিশ্বমন্দার কথা বলা হচ্ছে। সবকিছুর যেন প্রভাব পড়ছে নিত্যপণ্যসহ প্রতিটি খাতে। এভাবে চলতে থাকলে সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে। তাই বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকারকে কঠোর হওয়া ছাড়া উপায় নেই। বাজার স্থিতিশীল রাখতে প্রথমত সরকারের নীতিগত সহায়তা প্রয়োজন। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যের দাম কমে গেলে সরকার আমদানি শুল্ক বাড়িয়ে উৎপাদকদের স্বার্থ রক্ষা করে থাকে। একইভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে আমদানি শুল্ক কমিয়ে বাজার সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা সম্ভব। তবে মুক্তবাজার অর্থনীতিতে সরকারের নীতিগত সহায়তা যথেষ্ট নয়। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজন নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কম দামে পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সরকার টিসিবির মাধ্যমে সেটি করেও থাকে। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে যাতে বাজারকে অস্থিতিশীল করতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখার কথা জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করছেন সরকারি কর্মকর্তারা। অবশ্য এসব তৎপরতায় তেমন কোনো সাফল্য আমরা দেখি না। চাল আমাদের প্রধান খাদ্যপণ্য। অথচ এই চাল নিয়ে প্রায় ধারাবাহিকভাবে চলছে চালবাজি। চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে ইতোমধ্যে সরকার অনেকবার চাল আমদানি করেছে। আমদানি শুল্কও কমিয়েছে কিন্তু ভোক্তারা এর যথাযথ সুফল কখনোই কাক্সিক্ষত মাত্রায় পাননি। সরকারি ঘোষণার পর অনেকেই আশাবাদী ছিলেন ভোজ্যতেলের বাজার স্বস্তিতে আসবে। কিন্তু হয়েছে আরো বিপরীত। এক হিসাবে জানা গেছে, দেশে ভোজ্যতেলের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ২০ লাখ টনেরও বেশি। অভ্যন্তরীণভাবে উৎপাদন হয় সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টন। বাকিটা আমদানি করতে হয়। ৭-৮টি প্রতিষ্ঠান অপরিশোধিত তেল আমদানি ও পরিশোধন করে বাজারজাত করে। তাদের কারো কারো বিরুদ্ধে সিন্ডিকেট তৈরি করে দাম বাড়ানোর অভিযোগ পুরনো। উল্লেখ করা জরুরি, ১৯৭৪ সালে বিশেষ ক্ষমতা আইনটির একটি প্রেক্ষিত ছিল। আইনটি করাই হয়েছিল মূলত মজুতদারদের দমানোর উদ্দেশ্যে। সেই আইনে মজুতদারদের মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ নানা শাস্তির বিধান আছে। কিন্তু কোনো মজুতদারকে তেমন কোনো দণ্ড দেয়ার খবর আমাদের কাছে নেই। ভোক্তাদের স্বার্থ দেখা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। এ জন্য মজুতদারি, সিন্ডিকেশনসহ দাম বাড়ানোর সব ধরনের কারসাজির বিরুদ্ধে আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বাজার পরিস্থিতি তদারকি অব্যাহত রাখতে হবে। আমরা এটাও মনে করি, কেন্দ্র থেকে স্থানীয় উৎপাদন ক্ষেত্র পর্যন্ত ব্যবস্থাপনাও নজরদারির আওতায় আনা জরুরি। একই সঙ্গে আমদানিকৃত ও দেশজ উৎপাদিত- এই দুই ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন ও নির্বিঘœ রাখার ব্যবস্থাও নিশ্চিত করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App