×

আন্তর্জাতিক

ক্ষতিপূরণের অর্থ পাওয়া নিয়ে সংশয়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০২২, ০৮:১৮ এএম

ক্ষতিপূরণের অর্থ পাওয়া নিয়ে সংশয়

ছবি: সংগৃহীত

মিসরের নয়নাভিরাম শারম আল-শেখে শুক্রবার পর্দা নামল জাতিসংঘের জলবায়ুবিষয়ক শীর্ষ সম্মেলন কপ২৭ এর। জলবায়ু সংকট থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে গত ৬ নভেম্বর থেকে ১৯৬টি দেশের অন্তত ৪৫ হাজার প্রতিনিধি সেখানে জড়ো হয়েছিলেন। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল চলতি শতাব্দীর মধ্যে বিশ্বের তাপমাত্রা যেন আরো দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস না বাড়ে, অর্থায়ন, অভিযোজন তহবিল, অপূরণীয় ক্ষয়ক্ষতি তহবিল, বিশ্বব্যাংক সংস্কার ও আফ্রিকার গ্যাস উত্তোলন। অন্য বিষয়গুলোর অগ্রগতি সামান্য হলেও বিশ্বের তাপমাত্রা দেড় ডিগ্রিতেই রাখার ব্যাপারে এরই মধ্যে একটি খসড়া চুক্তিও হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার কপ২৭ সাম্মেলনের প্রথম খসড়া চুক্তিটি প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের জলবায়ু সংস্থা। যদিও খসড়া চুক্তিটি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা করেছে দরিদ্র দেশগুলো। বলছে, জলবায়ু সৃষ্ট ঝড়, খরা এবং বন্যার ক্ষতি মোকাবিলায় তহবিল ঘাটতি পূরণে ব্যর্থ এ খসড়া চুক্তি। খবর রয়টার্স। এবারের সম্মেলনের প্রেসিডেন্ট সামেহ শোউকরি এক চিঠিতে আলোচকদের উদ্দেশে মতভেদ কাটিয়ে আলোচনার গতি বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। প্রতিনিধিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সময় আমাদের পক্ষে নেই, আসুন আমরা এখনই একত্রিত হই এবং শুক্রবারের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানাই।’ প্রত্যাশিত চূড়ান্ত চুক্তির জন্য ২০ পৃষ্ঠার খসড়াটিতে গত বছর গ্লাসগোয় অনুষ্ঠিত কপ২৬ এর বৈশ্বিক তাপমাত্রা দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার পুনরাবৃত্তি করা হয়। চুক্তিতে ‘নিরবচ্ছিন্ন কয়লা বিদ্যুতের ব্যবহার ধীরে ধীরে বা পর্যায়ক্রমে বন্ধ করার পদক্ষেপ ত্বরান্বিত করতে এবং অকার্যকর জীবাশ্ম জ্বালানি ভর্তুকি যুক্তিযুক্ত করতে বা পর্যায়ক্রমে বন্ধ করতে’ বলা হয়েছে। এতে ভারত ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনুরোধ অনুযায়ী সব জীবাশ্ম জ্বালানি পর্যায়ক্রমে বন্ধ করার কথা বলা হয়নি। এই খসড়ায় জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণ দিতে তহবিল গঠনের বিস্তারিতও অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোসহ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হুমকির মুখে থাকা অধিকাংশ দেশের প্রধান দাবি ছিল এটি। সম্মেলনের কার্যসূচিতে ‘ক্ষয়ক্ষতির ক্ষেত্রে সাড়া দিতে তহবিল ব্যবস্থাসংক্রান্ত বিষয়াদি’ অন্তর্ভুক্ত করতে প্রথমবারের মতো পক্ষগুলোর সম্মত হওয়ার বিষয়টিকে ‘স্বাগত’ জানানো হয়েছে। তবে এই নথিতে ‘প্যারিস চুক্তির তাপমাত্রা লক্ষ্য অর্জনের জন্য সব স্তরে সব প্রচেষ্টা চালানোর গুরুত্বের ওপর জোর দেয়া’ হয়েছে। ক্ষতিপূরণের অর্থ পাওয়া নিয়ে সংশয়: ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি ইউরোপে শিল্প বিপ্লব ঘটার পর থেকে এখন পর্যন্ত শিল্পোৎপাদন ও উন্নত জীবনযাত্রার স্বার্থে বিপুল পরিমাণ জীবাশ্ম জ্বালানি পুড়িয়ে চলছে বিশ্বের উন্নত বিভিন্ন দেশ। স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল বিশ্বভুক্ত দেশগুলোয় জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর হার উন্নত বিশ্বের তুলনায় এখনো অনেক কম। কিন্তু উন্নত দেশগুলোর অতিমাত্রায় জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে বাতাসে ছড়িয়ে পড়া কার্বন ও গ্রিনহাউস গ্যাসের প্রভাবে ঝড়, অতিবর্ষণ, খরা, বন্যাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হচ্ছে মূলত স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল বিভিন্ন দেশ। এমনকি, বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ায় মালদ্বীপসহ অনেক দ্বীপরাষ্ট্র সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতেও রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে গত কয়েক বছর ধরেই উন্নত বিভিন্ন দেশের কাছে আর্থিক ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে আসছে উন্নয়নশীল বিশ্ব। জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিজনিত বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে এই অর্থ ব্যয় করা হবে বলে জানিয়ে আসছে এই ব্লকের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন দেশ। কিন্তু ‘বিপুল পরিমাণ অর্থ’ দিতে ভয়ে উন্নত বিশ্ব বরাবরই এই ক্ষতিপূরণ বা এ সংক্রান্ত তহবিল গঠনে গড়িমসি করছে। চলতি বছরের সম্মেলনেও পরিলক্ষিত হয়েছে এ ব্যাপারটি। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার ও কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্র। কপ২৭সম্মেলনে চীনের জলবায়ুবিষয়ক দূত শিয়ে ঝেনহুয়ার সঙ্গে বিশেষ রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন জন কেরি। তাদের বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে জানা যায়নি। তবে জন কেরি বলেছেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা হ্রাসে জাতিসংঘের লক্ষ্যের সঙ্গে চীনের কোনো দ্বিমত নেই। কপ২৭ সম্মেলনে ক্ষতিপূরণ তহবিল গঠনের ব্যাপারটিতে গুরুত্ব কম দেয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন পরিবেশবিষয়ক আন্তর্জাতিক অলাভজনক থিংক ট্যাংক সংস্থা ইথ্রিজির গবেষক ক্যাথেরিন অ্যাবরিউও। রয়টার্সকে তিনি বলেন, এটা দুর্ভাগ্যজনক যে, এই সম্মেলনেও জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যাবহার হ্রাস করাকে যতটা গুরুত্ব দেয়া হলো, সেই তুলনায় অনুন্নত দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার ব্যাপারটির তেমন উল্লেখই হলো না। এ বিষয়ে একমত পোষণ করে ইউরোপীয় দেশগুলোর জোট ইউরোপীয় ইউনিয়নের পলিসি বিভাগের প্রধান ফ্র্যান্স টিমেরম্যানস বলেন, এটি একটি খসড়া চুক্তি, এখনো এটি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায়নি। আমি মনে করি, সেই পর্যায়ে পৌঁছানোর আগে এখানে অনেক কাজ এখনো বাকি রয়ে গেছে। চুক্তিটি চূড়ান্ত করতে আমরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করব। আমরা চেষ্টা করব এমন একটি চুক্তি তৈরি করতে- যেখানে সবার আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন থাকবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App