×

সারাদেশ

সিলেটে ধর্মঘটে ভোগান্তি চরমে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ নভেম্বর ২০২২, ০৫:১৫ পিএম

সিলেটে ধর্মঘটে ভোগান্তি চরমে

সিলেট থেকে শুক্রবার কোনো দূরপাল্লার বাস ছেড়ে যায় নি। ছবি: সংগৃহীত

বিএনপির সমাবেশের একদিন আগেই বন্ধ দূরপাল্লার বাস

সিলেট বিভাগীয় শ্রমিক ঐক্য পরিষদ ও সিলেট জেলা বাস মালিক সমিতির ডাকা পরিবহন ধর্মঘট শুরু হবার কথা শনিবার ভোর ৬টা থেকে। কিন্তু হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে ধর্মঘট থাকায় সিলেট ঢাকা মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। আর একারণেই সিলেট থেকে শুক্রবার কোনো দূরপাল্লার বাস ছেড়ে যায় নি। আর এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। তবে জেলার ভেতরে বাস চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে বলে দাবি পরিবহন নেতাদের।

শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) সকালে সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, সারিবদ্ধভাবে বাস-মিনিবাস দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে পুরো টার্মিনাল এলাকাজুড়ে। টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছাড়ছে না। আন্তঃজেলা বাস চলাচল করলেও তা স্বাভাবিকের তুলনায় একেবারেই কম। এছাড়া দূরপাল্লার সকল বাসের কাউন্টার বন্ধ রয়েছে। টার্মিনালে কথা হয় ঢাকাগামী যাত্রী তানভীর আহমেদের সাথে। রবিবারে তার ঢাকায় একটি চাকরির ইন্টারভিউ দিতে যাবার কথা।

ভোরের কাগজের সাথে আলাপকালে ক্ষোভ প্রকাশ করে তানভীর বলেন, আমি রাজনীতি করিনা, বিএনপি বা আওয়ামী লীগের সমাবেশে যাবারও ইচ্ছে নেই। তবে আমাকে কেনো ভুগতে হবে। রবিবারে আমার পরীক্ষা, এখানে এসে শুনতে পাচ্ছি কোনো বাস যাবে না। এখন কিভাবে যাবো বা আদৌ যেতে পারবো কিনা বলতে পারছিনা। তিনি বলেন, পরিবহন শ্রমিকদের কাছে আমরা জিম্মি, তাদের ইচ্ছে হলে ধর্মঘট ডাকবে, ইচ্ছে হলে চালাবে। মাঝখানে আমার মতো সাধারণ জনগণকে ভোগান্তি পোহাতে হয়।

ধর্মঘটের আগেই বাস বন্ধের ব্যাপারে সিলেট জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল কবির পলাশ বলেন, আমাদের ধর্মঘট শনিবার। কিন্তু মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে আজকে থেকে ধর্মঘট শুরু হয়েছে। ঢাকাসহ অন্যান্য জেলায় যেতে হলে এই দুই জেলা পাড়ি দিয়ে যেতে হয়। কিন্তু দুই জায়গায়ই ধর্মঘট থাকায় দূরপাল্লার বাস আসা যাওয়া করতে পারছে না। তবু কিছু বাস চলছে। তিনি বলেন, পাঁচদফা দাবিতে শনিবার সিলেটে ভোর ৬ টা থেকে ২৪ ঘন্টার বাস ধর্মঘট ডাকে বাস মালিক সমিতি। ভিন্ন চারটি দাবিতে শনিবার অন্য পরিবহনগুলোরও ধর্মঘট ডেকেছে সিলেট বিভাগীয় শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।

তবে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে গণসমাবেশ আয়োজনে বাধাবিপত্তি সৃষ্টি করতেই সরকার কৌশলে পরিবহনে ধর্মঘট ডাকিয়েছে। শনিবার সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ হবে।

এ ব্যাপারে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী ভোরের কাগজকে বলেন, সরকারের নির্দেশেই এই পরিবহন ধর্মঘট। সমাবেশে যাতে সাধারণ মানুষ ও বিএনপির নেতাকর্মীরা যোগ দিতে না পারে সেজন্য সরকারই কৌশলে এই ধর্মঘট ডাকিয়েছে। তবে এতে কোনো লাভ হবেনা। আমাদের বেশিরভাগ নেতাকর্মীরা ইতিমধ্যেই সমাবেশ সফল করতে সিলেট পৌঁছে গেছেন। আশা করছি গণসমাবেশে অন্তত পাঁচ লাখ মানুষের জমায়েত হবে।

এদিকে, সমাবেশকে ঘিরে ধর্মঘটের আশঙ্কা থাকায় বিভাগের বাকি তিন জেলা ও দূরবর্তী উপজেলাগুলো থেকে শুক্রবারেই চলে এসেছেন কয়েক হাজার নেতাকর্মী। নগরীর বিভিন্ন আবাসিক হোটেলের পাশাপাশি অন্তত ২০টি কমিউিনিটি সেন্টার ও সমাবেশস্থলে টানানো শামিয়ানার নিচে অবস্থান নিয়েছেন তারা। বুধবার রাত থেকে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠেই চলছে রান্নাবান্না। বিভিন্ন নেতাদের টানানো তাঁবুতে কাটাচ্ছেন রাত, চলছে গল্প-গুজব আর গান বাজনা। মাঝে মাঝে নেতাকর্মীদের স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠছে সমাবেশস্থল।

শুক্রবার সকালে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে গিয়ে দেখা যায়, মাঠের এক পাশে তৈরি করা হয়েছে প্রায় ৭০ ফুট দীর্ঘ মঞ্চ। মঞ্চের তিন পাশে নির্মাণ করা হয়েছে বিভাগের বিভিন্ন এলাকার নেতাদের উদ্যোগে ক্যাম্প। ক্যাম্পে ক্যাম্পে চলছে রান্না ও খাবারের আয়োজন। ক্যাম্পগুলোতে মজুদ করে রাখা হয়েছে চালের বস্তা, তেল ও রান্নার সামগ্রী। কয়েকজন নারীকে পেঁয়াজ, রসুন, আদা, মরিচ কাটতে দেখা যায়। প্রতিটি ক্যাম্পেই বড় বড় ডেকচিতে হচ্ছে রান্নাবান্না। জুম্মার নামাজের পর প্রতিটি ক্যাম্পে খাবার পরিবেশন করা হয়। প্রত্যেক ক্যাম্পেই নিজেদের মানুষ ছাড়া অন্যান্য নেতাকর্মীদেরও খাবার দেয়া হয়। এক কথায় সমাবেশ ঘিরে উজ্জ্বীবিত সিলেটের বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App