×

মুক্তচিন্তা

অতিথি পাখি রক্ষা করতে হবে

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৮ নভেম্বর ২০২২, ১২:২৬ এএম

শীতের সঙ্গে সঙ্গে সুদূর সাইবেরিয়া পাড়ি দিয়ে এ দেশে আসতে শুরু করেছে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখি। এ সময়টাতে সাধারণত পুরো সাইবেরিয়ায় অতিরিক্ত ঠাণ্ডার কারণে পাখিদের খাদ্য বরফের নিচে ঢাকা পড়ে এবং এই অতিরিক্ত বরফের আস্তর কমতে কমতে প্রায় ৩ মাস ক্ষেত্রবিশেষে আরো কয়েক মাস বেশি সময় লাগে। আর এই সময় সাইবেরিয়ার পাখিদের মধ্যে চরম খাদ্যের অভাব দেখা দেয় আর তাই তারা সুদূর সাইবেরিয়া থেকে অপেক্ষাকৃত নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল বাংলাদেশে চলে আসে খাদ্যের খোঁজে। ওই সময় বাংলাদেশে শীত পড়লেও একেবারে বরফঠাণ্ডা শীত পড়ে না। ফলে এ সময় এখানে নদ-নদী, খাল-বিল, হাওর-বাঁওড়গুলোতে খাদ্যে পরিপূর্ণ থাকে। অতিথি পাখিরা সহজে এসব জায়গা থেকে খাদ্য সংগ্রহ করে খেতে পারে। এসব অতিথি পাখির খাদ্য সাধারণত ছোট পোকামাকড়, ঝিলের ছোট শামুক, নদীর ছোট মাছ হওয়ায় এগুলো এ সময় বাংলাদেশের বিভিন্ন জলাধারে যথেষ্ট পরিমাণ পাওয়া যাওয়ার কারণে অতিথি পাখিরা দূরদূরান্ত থেকে এ দেশে প্রতি বছর আসে। তাছাড়া দীর্ঘদিন ধরে অতিথি পাখিরা এ দেশে আসা-যাওয়া করতে থাকায় এখানে কিছু জায়গায় এদের জন্য অভয়ারণ্য হিসেবে গড়ে উঠেছে। ফলে অতিথি পাখিরা এ দেশে অনেকটা নিরাপদ মনে করে। এ দেশের বেশিরভাগ মানুষই এসব অতিথি পাখিকে সাদরে গ্রহণ করেছে এবং কিছু জায়গায় মানুষ নিজ উদ্যোগে এদের জন্য অভয়ারণ্য গড়ে তুলেছে, এমনকি কিছু মানুষ এদের জন্য খাদ্যদ্রব্যও বিতরণ করে। কিন্তু দুঃখের বিষয় মাঝেমধ্যে কিছু চোরা পাখি শিকারিকে অত্যন্ত গোপনে এসব অতিথি পাখি শিকার করে বিক্রি করতে দেখা যায়। আর হাওর, বাঁওড়ে কিছু মানুষকে পাখি ধরে তা রান্না করে খেতে দেখা যায়, যা অত্যন্ত অমানবিক ও বেদনাদায়ক কাজ। যে পাখিগুলো দূর দেশ থেকে আমাদের দেশে ক্ষণিকের মেহমান হয়ে এসেছে তাদের শিকার করে মেরে ফেলা কিংবা তাদের শিকার করে ভক্ষণ করা তা কোনো অবস্থাই মেনে নেয়া যায় না। এমনও দেখা গেছে যে, অতিথি পাখিদের শিকারের জন্য বিষটোপ ব্যবহার করছে কিছু অমানবিক মানুষ। আর সে বিষটোপ খেয়ে শ’য়ে শ’য়ে পাখি মারা পড়ছে। এর বাইরে অতিথি পাখি শিকারের জন্য কেউ কেউ জাল, ফাঁদ, এয়ারগান, লাইসেন্স করা বন্দুকও ব্যবহার করছে, যা কোনো অবস্থাই মেনে নেয়া যায় না। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বর্ধনকারী এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাকারী এসব পাখির নিরাপদে চলাচল এবং বসবাস করার জন্য ১৯৭৪ সালের বন্যপ্রাণী রক্ষা আইন এবং ২০১২ সালে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। বিশেষ করে অতিথি পাখি নিধন এবং এর অঙ্গ সংরক্ষণের জন্য সর্বোচ্চ ৬ মাস থেকে ১ বছর পর্যন্ত জেল জরিমানার বিধান আছে। এ দেশে প্রায় ৬৫০ প্রজাতির পাখি রয়েছে, যার মধ্যে ৩৬০ প্রজাতি আমাদের দেশের স্থায়ী পাখি, এদের জন্ম ও বেড়ে ওঠা সব এদেশেই। ভোর হলেই এসব পাখি আমরা আমাদের আঙিনায়, বাড়ির পাশে পুকুরের ডোবায়, ঝিলে এবং বনবাদাড়ে হরহামেশাই দেখতে পাই। ফলে এসব পাখি আমাদের জীবনের সঙ্গে মিশে গেছে অত্যন্ত গভীরভাবে। ময়না, টিয়া, কাকাতুয়ার নাম জানে না এদেশে এমন কেউ নেই। চড়–ই, শালিক, কাক, পানকৌড়ি, মাছরাঙা দেখলেই আমরা চিনি। এর বাইরে প্রায় ৩০০ প্রজাতির পাখি আমাদের দেশে অস্থায়ীভাবে শীতের সময় আসে আবার তারা নিজ দেশে ফেরত চলে যায়। এসব অস্থায়ী অতিথি পাখির মধ্যে প্রায় ১০ প্রজাতির পাখি রয়েছে, যারা এ দেশে থেকে যায় এবং এ দেশের পাখিদের সঙ্গে মিশে গিয়ে একসময় এসব পাখি এ দেশের স্থায়ী পাখিতে পরিণত হয়। ২৯০ প্রজাতির অতিথি পাখির মধ্যে বেশিরভাগই হাঁস প্রজাতির, ফলে এসব পাখির মাংস খেতে অনেকে পছন্দ করে, যা উচিত নয়। প্রকৃতপক্ষে শীতের সময় খাদ্য তথা জীবন বাঁচানোর জন্য এ দেশে অতিথি হয়ে আসা অতিথি পাখিদের রক্ষার দায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি আমাদেরও নিতে হবে। তবেই অতিথি পাখিরা এ দেশ থেকে নিরাপদে নিজ দেশে ফিরে যেতে পারবে। আসুন সবাই এ দেশে কয়েক মাসের জন্য আসা অতিথি পাখিদের প্রতি সদয় হই। এদের এ দেশে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে সহায়তা করি।

রতন কুমার তুরী : লেখক ও শিক্ষক, ঢাকা। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App