×

মুক্তচিন্তা

সাইবার অপরাধ ও ঝুঁকি রোধে করণীয়

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২২, ১২:৪৮ এএম

বর্তমানে দেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি, যার মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটি। তবে অবাক করার বিষয় হচ্ছে উন্নত প্রযুক্তি, সহজ অ্যাক্সেস ও দিনকে দিন নতুন প্ল্যাটফর্ম আসার সঙ্গে সঙ্গে দেশে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে সাইবার অপরাধ ও এর নিরাপত্তা ঝুঁকি। সরকারের সাইবার ক্রাইম ইউনিটের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে ৪টি ভিন্ন আইনের অধীনে প্রতি মাসে গড়ে ১৬৯টি সাইবার মামলা দায়ের হয়েছে। ২০২১ সালে এই সংখ্যাটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯৪টি। এসব অপরাধের বেশির ভাগই মানুষের সরলতাকে পুঁজি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ই-কমার্স ও এফ-কমার্সের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। মূলত সাইবার নিরাপত্তা হচ্ছে এমন কিছু উপায় যার মাধ্যমে আমরা আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য, কম্পিউটার, আমাদের বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল ডিভাইসকে হ্যাকিং ও বিভিন্ন ধরনের আক্রমণ থেকে নিরাপদ রাখতে পারি। অনেকেরই হয়তো স্মরণে আছে ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা সুইফট পেমেন্ট পদ্ধতিতে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ওই বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয়। পরে বিভিন্ন সময় ১ কোটি ৫০ লাখ ডলার ফেরত আসে। এখনো ৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার উদ্ধার হয়নি। এই ডলারগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট বা ভল্ট থেকে নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে রাখা বাংলাদেশের রিজার্ভ ডলার থেকেই হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে জালিয়াতি করে নিয়েছিল। এর আগে বাংলাদেশে সাইবার অপরাধ ও এর নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে মানুষের মধ্যে তেমন কোনো আগ্রহ বা ধারণা ছিল না। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির পর থেকেই সরকার, দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ব্যাংকিং সেক্টরসহ অনেকেই নড়েচড়ে বসে এবং সাইবার অপরাধ ও নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে তৎপর হয়ে ওঠে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাইবার পুলিশ সেন্টারের (সিপিসি) সাম্প্রতিক এক তথ্য মতে, মাত্র কয়েক বছর আগেও তারা প্রতি মাসে গড়ে প্রায় দেড় হাজার সাইবার অপরাধের অভিযোগ পেতেন। এখন সেই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে আড়াই হাজার। ২০২১ সালের মে থেকে ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম টিকটক ব্যবহার করে সংঘটিত অপরাধের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রায় ২৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। যে কোনো ধরনের সাইবার আক্রমণ থেকে বাঁচতে হলে সবচেয়ে জরুরি বিষয় হচ্ছে সচেতনতা এবং জানা কীভাবে আক্রমণগুলো হয়, কীভাবে তা যে কোনো সিস্টেমকে ক্ষতি করে এবং কীভাবে তা প্রতিহত করা যায়। সরকার সাইবার নিরাপত্তা এবং অপরাধ প্রতিরোধ, তদন্ত ও বিচারের উদ্দেশ্যে ২০০৬ সালে প্রণয়ন করে ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন’। অন্যদিকে একই উদ্দেশ্যে ২০১৫ সালে প্রণয়ন করা হয় ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন’। সর্বশেষ ২০১৮ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণীত হয়েছে। সাইবার নিরাপত্তায় সচেতনতার পাশাপাশি কিছু অতি প্রয়োজনীয় বিষয়ে সতর্ক থাকা খুবই জরুরি। সাইবার অপরাধ থেকে রক্ষা পেতে হলে প্রথমত যারা অনলাইন বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে, তাদের সরকারের সাইবার ক্রাইম বিভাগের পেজে গিয়ে আইনগুলো ভালো করে পড়তে ও জানতে হবে। দ্বিতীয়ত অনলাইনে যদি কেউ ভালোবাসা বা ব্যবসার প্রস্তাব দেয়, তাহলে তা ভালো করে যাচাই-বাছাই করতে হবে। আর তৃতীয়ত, যদি কেউ সাইবার অপরাধের শিকার হয়েই যায়, তাহলে দ্বিধাদ্ব›দ্ব না করে তথ্য দিয়ে পুরোটা বিষয়টা যথাসম্ভব খুলে বলতে হবে এবং সমস্যা সমাধানের জন্য নিকটজন বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহযোগিতা নিতে হবে। মোট কথা সাইবার অপরাধের ঝুঁকি থেকে বাঁচতে হলে সচেতনতা ও সতর্কতার বিকল্প নেই। মো. জিল্লুর রহমান গেণ্ডারিয়া, ঢাকা। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App