×

জাতীয়

পিছিয়ে যাচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ পাওয়া

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২২, ০৫:০৫ এএম

পিছিয়ে যাচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ পাওয়া
পিছিয়ে যাচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ পাওয়া

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। ফাইল ছবি

বাংলাদেশের চলমান ডলার সংকটের কারণে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ ঠিক সময়ে শেষ হওয়া নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষ নাগাদ এই কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। খবর-বিবিসির

কিন্তু ডলার সংকটের কারণে সঞ্চালন লাইন তৈরিতে দেরি হওয়ায় ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের আগে সেই বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন না কর্মকর্তারা।

বুধবারও সঞ্চালন লাইনের জন্য ঋণপত্র খোলার বিষয়ে বৈঠক করেছেন অর্থ মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, পিজিসিবি, সোনালি ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় অবশ্য এখনো আশা করছে, তারা যথাসময়েই রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু করতে পারবে।

এর আগে পায়রা ও রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষেত্রে একই ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে। সেখানেও সঞ্চালন লাইনের অভাবে কেন্দ্রগুলো অলস বসিয়ে রেখে সরকারকে আর্থিক ক্ষতি গুনতে হয়েছে।

কী জটিলতা তৈরি হয়েছে?

পাবনায় বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে দুটি ইউনিটে ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে।

প্রকল্প পরিচালক ড. শওকত আকবর অক্টোবর মাসে বলেন, আমরা আশা করছি, ২০২৩ সালের শেষ দিকে প্রথম ইউনিটের কাজ শেষ হবে। আমাদের সসব অবকাঠামো যদি রেডি থাকে, তাহলে আমরা শুরু করতে পারবো।

২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর নাগাদ প্রথম চুল্লির জন্য জ্বালানি পাওয়ার আশা করছেন কর্মকর্তারা। এর পরে অক্টোবর থেকে পরীক্ষামূলকভাবে উৎপাদন শুরু করার কথা ভাবা হচ্ছে।

কিন্তু জটিলতা হলো, জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে যে সঞ্চালন লাইন থাকতে হবে, তার কাজ এখনো শেষ করা যায়নি। কারণ ডলার সংকটের জেরে কোন ব্যাংক এর জন্য এলসি খুলতে চাইছে না।

পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশ লিমিটেডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ডলার সংকটের কারণে সঞ্চালন লাইন স্থাপনে ৫,২৪০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি আমদানিতে এলসি খুলতে রাজি হচ্ছে না ব্যাংক। ফলে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আমদানি করা যাচ্ছে না।

জানা গেছে, রূপপুর কেন্দ্রের বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করতে সঞ্চালন লাইন তৈরির প্রকল্পটি একনেকে ২০১৮ সালে অনুমোদন পেয়েছিল। এই প্রকল্পের আওতায় আর পাঁচটি প্যাকেজের কাজ চলছে। কিন্তু যমুনা ও পদ্মা নদীর ওপর দিয়ে যে ১৬টি টাওয়ার বসানোর কথা, তার বাস্তবায়ন নিয়েই জটিলতা তৈরি হয়েছে।

সর্বনিম্ন দরদাতা হিসাবে প্রকল্পের কাজ করছে ভারতীয় ট্রান্সরেইলী লাইটিং লিমিটেড। তাদের জার্মানি, নেদারল্যান্ডস ও তুরস্ক থেকে যন্ত্রপাতি আমদানি করার কথা।

গত অক্টোবর মাসে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক মো. ইয়াকুব ইলাহি চৌধুরী বলেন, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ নেয়ার একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো, এখানে আমাদের দুটা রিভার ক্রসিং আছে। যমুনা নদীতে দুটি আর পদ্মা নদীতে একটি। সেগুলোর ওপর দিয়ে সঞ্চালন লাইন নেয়ার জন্য কিছুদিন আগে টেন্ডার করে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। এসব কাজ শেষ হতে ২০২৪ সালের অগাস্ট পর্যন্ত সময় লেগে যাবে।

ঋণপত্র জটিলতায় পড়ার পর অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছে পিজিসিবি। তাতে বলা হয়েছে, চুক্তি অনুযায়ী ঠিকাদারের বিল ডলারে পরিশোধ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এজন্য ব্যাংকে ঋণপত্র খোলার আবশ্যকতা রয়েছে। কিন্তু কোন ব্যাংকই ঋণপত্র খুলতে রাজি হচ্ছে না। ফলে ঠিকাদারি কোম্পানি কাজ শুরু করতে পারছে না।

সঞ্চালন লাইনের কাজ এখনো শুরু করতে না পারায় আশঙ্কা তৈরি হয়েছে যে, ২০২৫ সালের আগে এসব কাজ শেষ হবে না। ফলে এই সময়ের আগে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ করা সম্ভব হবে না।

আর যতদিন এটা শেষ না হবে, ততদিন রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রটি বিদ্যুৎ উৎপাদনেও যেতে পারবে না।

সমাধানে কী করা হচ্ছে?

এর আগে দুই দফা বৈঠকের পর বুধবারও এ নিয়ে একটি মিটিং করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাণিজ্যিক সোনালি ব্যাংক, বিদ্যুৎ বিভাগ, পিজিসিবি এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

নির্বাহী পরিচালক মো. ইয়াকুব ইলাহি চৌধুরী বলেন, আর কোন উপায় না পেয়েই আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছিলাম। আজও সেখানে সবাইকে নিয়ে একটা মিটিং হয়েছে। সেখানে একটা সমাধান বের হয়েছে। এখন কিছু ফর্মালিটির ব্যাপার আছে। তারপর ঋণপত্র খোলা যাবে বলে আশা করা যায়।

তিনি বলেন, এটা হলেই পুরোদমে সঞ্চালন লাইনের কাজ শুরু হয়ে যাবে। তবে বিদ্যুৎ ও প্রযুক্তি খাতের বেশিরভাগ যন্ত্রপাতি ও কর্মকাণ্ডের জন্য বিদেশি যন্ত্রপাতি, নকশা এবং বিশেষজ্ঞদের ওপরে নির্ভর করতে হয়। ফলে দেশে যে ডলার সংকট তৈরি হয়েছে, কর্মকর্তাদের আশঙ্কা, তার প্রভাব পড়তে পারে পরবর্তী ধাপের কাজের ওপরেও।

ইয়াকুব ইলাহি চৌধুরী বলেন, কাজ শুরু হলে সঞ্চালন লাইন ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে হস্তান্তর করে দিতে পারবো বলে আশা করছি।

অক্টোবর মাসে রূপপুর প্রকল্প এলাকায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে রূপপুরের প্রকল্প পরিচালক শওকত আকবর বলেন, পাওয়ার গ্রিড আপগ্রেড না করা পর্যন্ত তারা প্ল্যান্টটি চালাতে পারবেন না। একবার এই প্ল্যান্টে পারমাণবিক জ্বালানি ব্যবহার শুরু করলে, আমরা আর উৎপাদন বন্ধ করতে পারব না। তার অর্থ হচ্ছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রস্তুত হয়ে গেলেও সঞ্চালন লাইনের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত সেখানে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ২০২৫ সালের আগে জাতীয় গ্রিডে যোগ হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

তবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান মনে করেন না ডলার সংকটের কারণে এই প্রকল্পে কোন সমস্যা তৈরি হবে।

তিনি বলেন, এই প্রকল্পের কাজ তো এগিয়ে যাচ্ছে, কোথাও কোন সমস্যা তো দেখছি না। আমরা যেভাবে পরিকল্পনা করেছিলাম, সেভাবেই আমাদের কাজ চলছে। ডলার সংকট বলেন বা যুদ্ধ- আমাদের প্রকল্পে তার কোন সমস্যা হচ্ছে না।

সঞ্চালন লাইন প্রসঙ্গে মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান বলেন, সম্প্রতি এ নিয়ে আমরা বৈঠকে বসেছিলাম। কিছু সমস্যা আছে, সেগুলো আমরা শুনেছি। কিন্তু এটা খুব তাড়াতাড়ি সমাধান হয়ে যাবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App