×

মুক্তচিন্তা

শওকত আলীর প্রয়াণবার্ষিকীতে বিনম্র শ্রদ্ধা

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২২, ০১:৩০ এএম

মৃত্যুঞ্জয়ী বীর, সাবেক ডেপুটি স্পিকার কর্নেল (অব.) শওকত আলী আমাদের ছেড়ে চলে গেলেও দেশ ও জাতির ক্রান্তিলগ্নে তার দুঃসাহসিক পদচারণা বিস্মৃত হওয়ার সাধ্য আমাদের নেই। প্রথম জীবনে কর্নেল (অব.) শওকত একজন সেনা কর্মকর্তা হিসেবে পেশা শুরু করলেও ছাত্রজীবনে প্রগতিশীল রাজনৈতিক মতাদর্শ থেকে সামান্য বিচ্যুত হননি। স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব ও অন্যান্য’ অর্থাৎ তথাকথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় সংশ্লিষ্টতার কারণে ২৬ নম্বর অভিযুক্ত হিসেবে তাকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন থাকাকালীন করাচির ক্যান্টনমেন্ট থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৯৬৯-এর আইয়ুববিরোধী আন্দোলন তথা গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জননেতা শেখ মুজিবুর রহমানসহ অন্যদের সঙ্গে শওকত আলীও ২২ ফেব্রুয়ারি মুক্তি লাভ করেন। দেশ ও জাতির প্রতি নৈতিক দায়বদ্ধতা তথা দেশাত্মবোধের কারণে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে শওকত আলী মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। শওকত আলী হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করেছিলেন, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একাত্তরের বিজয়গাথা, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গৌরবগাথা, বীরত্বগাথা সম্পর্কে অবহিত করে উজ্জীবিত না করলে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি নৈতিক দায়বদ্ধতা থেকে যাবে, এই উপলব্ধিবোধ থেকেই তিনি তার প্রতিষ্ঠিত মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদে (মুসপ) ’৭১-এর রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত করার বিধান রেখে গেছেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকার পরিবর্তে মুষ্টিমেয় স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার-আলবদরদের তালিকা প্রস্তুতের পক্ষে ছিলেন এবং মুসপের ঘোষণাপত্রে এটি সন্নিবেশিত করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহীদদের রক্তঋণ পরিশোধের লক্ষ্যে তাদের স্মরণে দেশব্যাপী স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ ছিল শওকত আলীর অন্যতম স্বপ্ন, যার মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম শ্রদ্ধাবনত চিত্তে শহীদদের স্মরণ করে দেশাত্মবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশ ও জাতির সেবায় আত্মনিয়োগ করে শহীদদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে অঙ্গীকারবদ্ধ হবে। কর্নেল (অব.) শওকত আলী স্বাধীনতার শত্রæদের বর্বরতা বা নৃশংসতা বর্তমান ও নতুন প্রজন্মের কাছে উপস্থাপনের মাধ্যমে তাদের দেশাত্মবোধে উদ্বুদ্ধ করার ভূমিকা রেখেছেন। তার প্রতিষ্ঠিত মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদের প্রকাশনা ‘একাত্তরের ঘাতক-দালাল যা বলেছে যা করেছে’ এবং ‘একাত্তরের দালালেরা কে কোথায়’ এই দুটি প্রকাশনার তথ্য-উপাত্ত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রে গঠিত বিশেষ ট্রাইব্যুনাল আমলে নেয়ায় শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গঠিত গণআদালত শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের প্রতীকী বিচারের ক্ষেত্রে গণজোয়ার সৃষ্টিতে সক্ষম হয়েছিল। কিন্তু এই আন্দোলনের সূচনা ঘটেছিল কর্নেল (অব.) শওকত আলীর নেতৃত্বাধীন মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদের মাধ্যমে। জাতির পিতার স্বপ্ন দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি তথা শোষণহীন অসাম্প্রদায়িক সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা বিনির্মাণে শওকত আলী প্রতিশ্রæতিবদ্ধ ছিলেন বলেই মুসপের সেøাগান হিসেবে ‘মুক্তিসংগ্রাম চলছে চলবে’কে সন্নিবেশিত করেছিলেন। যে সেøাগান অত্যন্ত অর্থবহ ও তাৎপর্যপূর্ণ। তার চারিত্রিক ও রাজনৈতিক গুণাবলি থেকে আমাদের অনেক কিছুই শিক্ষণীয় আছে। দ্বিতীয় প্রয়াণবার্ষিকীতে জাতীয় বীর শওকত আলীর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। হাসান-উজ-জামান লেখক ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব, মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App