×

মুক্তচিন্তা

পালালে আত্মরক্ষা হয়, দেশ রক্ষা হয় না

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২২, ০১:১১ এএম

জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব, করোনা অতিমারির থাবা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ- সবকিছু মিলিয়ে বিশ্ব অর্থনীতি ও রাজনীতি বেসামাল অবস্থায় নিপতিত হয়েছে। বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্ব অর্থব্যবস্থাকে এমনভাবে টুঁটি চেপে ধরেছে, এর ফলে অর্থনৈতিক চাপ সামাল দিতে না পেরে বিভিন্ন দেশে হরহামেশাই সরকারের উচ্চমহল থেকে নিম্ন স্তর পর্যন্ত নানা কৌশল, কৃচ্ছ্রসাধন কিংবা অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে নতুন নতুন কৌশল গ্রহণে বাধ্য হচ্ছে। কারণ অর্থনৈতিক অবরোধ, পাল্টা অবরোধ আরোপের ফলে ডলার সংকট ও জ¦ালানি তেলের দাম বৃদ্ধি বিশ্ব অর্থনৈতিক চেইন নানাভাবে ব্যাহত হচ্ছে, যার ঢেউ উন্নত বিশ্বের চাকচিক্যময় দেশ থেকে শুরু করে একেবারে দরিদ্র রাষ্ট্রগুলোর মধ্যেও এসে লাগছে। বাংলাদেশও এ ঢেউয়ের বাইরে নয়। অর্থনৈতিক অবরোধ ও পাল্টা অবরোধের ফলে ডলার সংকটও প্রকট আকার ধারণ করছে, দেশে দেশে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত হচ্ছে, খাদ্য ও জ¦ালানির মূল্য বলতে গেলে লাগামছাড়া; যা বৈশ্বিক সংকটকে ত্বরান্বিত করছে। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর জন্য চ্যালেঞ্জটা আরো মোটা দাগের। মূল্যস্ফীতি, জ্বালানি সংকট, রপ্তানিমুখী বাণিজ্যে মন্দা, নানাবিধ সমস্যা তৈরি করছে। এ বৈশ্বিক সমস্যা কেবল বাংলাদেশের তা নয়, বরং ইউরোপ-আমেরিকাসহ অন্যান্য দেশ-মহাদেশেও একই অবস্থা। কিন্তু আমাদের দেশে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি বৈশ্বিক এ সমস্যাকে সরকারের ব্যর্থতা ও দুর্নীতির ফল বলে আন্দোলনের ইস্যু হিসেবে কর্মসূচি ঘোষণা করে জনসমর্থন আদায়ে চেষ্টা করছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে, আন্দোলনের জন্য বাস্তবতা না ভেবেই এ ইস্যুকে কাজে লাগানোর অব্যাহত চেষ্টা করছে। গণতান্ত্রিক আন্দোলন, সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা, সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্তে ভুলগুলো তুলে ধরা বা বিরোধিতা করা উন্নত রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনার ইঙ্গিত বহন করে, তবে তা যদি হয় কল্পনাপ্রসূত। এরই মধ্যে বিএনপি যুগপৎ আন্দোলনের প্রস্তুতি হিসেবে বিভাগীয় পর্যায়ে গণসমাবেশের কর্মসূচি বেশ ভালোভাবেই পালন করছে। যেখানে বিএনপি নেতারা সরকারের পতন, রিজার্ভের টাকা গিলে খাওয়া, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ গালগর্ব বক্তৃতা দিয়ে যাচ্ছেন, যার সত্য-মিথ্যা বা যথার্থতা আমাদের নিকট অতীতের রাজনৈতিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলে যে কেউ অনুমান করতে পারবেন। যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য বিএনপি রাজপথ উত্তপ্ত করছে, সে তত্ত্বাবধায়কের অভিজ্ঞতা তো বাংলাদেশের জন্য নয়ই বরং বিএনপির জন্যও সুখকর ছিল না। আদালত জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ঘোষিত আয়ের বাইরে ৪ কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬১ টাকার মালিক হওয়া এবং সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার এ মামলা দায়ের করেছিল। বাংলাদেশের কোর্টের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৩ সালে সিঙ্গাপুর ৮ কোটি টাকা ফেরত দেয়। গণমাধ্যমের তথ্য থেকে দেখা যায় তারেক রহমান ও তার ব্যবসায়িক বন্ধু গিয়াসউদ্দিন আল মামুন সিঙ্গাপুরে সিটিএনএ ব্যাংকে ২১ কোটি টাকা পাচার করে। আমেরিকার এফবিআই এ ব্যাপারে তদন্ত করেছে। ২০১২ সালে এফবিআই ঢাকায় বিশেষ আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে গেছে। এ মামলায় হাইকোর্টে তারেক রহমানের সাত বছরের সাজা ও ২১ কোটি টাকা জরিমানা হয়। ইতিহাস তো বলে পালিয়ে গেলে আত্মরক্ষা হয় কেবল! দেশ রক্ষা হয় না। এক-এগারোর পর যারা দুর্নীতি, মানিলন্ডারিং, অর্থ পাচার ক্ষমতার অপব্যবহার ইত্যাদির দায় মাথায় নিয়ে মুচলেকা দিয়ে বিদেশে পালিয়ে গিয়েছিলেন, তারা আত্মরক্ষা করেছেন শুধু, দেশ রক্ষা করতে পারেননি। বাংলাদেশ রক্ষার মিশনে তারা পরাজিত। জনগণের কথা চিন্তা করে হাজারো বাধা-রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে অনিশ্চিয়তার অন্ধকারাচ্ছন্ন কালো মেঘকে দূরে সরিয়ে স্বাধীনতার স্বপ্নকে বুকে ধারণ করে যিনি জননেত্রী হয়ে এ দেশে পা রেখেছিলেন, তিনিই তো ভিশনারি নেতৃত্বের আলোকবর্তিকা। যার হাতে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্নরা ভিত গড়তে সাহস পায়। সংকটকে সম্ভাবনায় রূপদানকারী এমন কাণ্ডারিকে বাংলাদেশ নিজের ভাগ্য বদলের আলোর মশাল হিসেবে সব সময় প্রত্যাশা করে, যা অন্ধকারের অমানিশাকে দূরে ঠেলে আলো ঝলমলে প্রভাতের দিশা দিতে পারে। তানজিব রহমান লেখক ও গবেষক। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App