×

সম্পাদকীয়

ডায়াবেটিস প্রতিরোধ নীতিমালার বাস্তবায়ন জরুরি

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২২, ০১:১২ এএম

গতকাল পালিত হয়েছে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস। ১৯৯১ সালে আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশন (আইডিএফ) ১৪ নভেম্বর তারিখটিকে ‘বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে। ২০০৭ থেকে পৃথিবীজুড়ে দিবসটি পালিত হচ্ছে। এবারের প্রতিপাদ্য ছিল- ‘আগামীতে নিজেকে সুরক্ষায় ডায়াবেটিসকে জানুন’। ডায়াবেটিস একটি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণযোগ্য রোগ হলেও অসচেতনতা এবং প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান না থাকায় বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে রোগটি ক্রমশ বাড়ছে, যা আশঙ্কাজনক। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে ইনসুলিন হরমোনের নিঃসরণ কমে যায়। ফলে দেহের কোষে গøুকোজ পৌঁছাতে পারে না। এতে রক্তে গøুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায়। বর্তমানে দেশে ১ কোটি ৩০ লাখেরও বেশি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। যাদের প্রায় অর্ধেকই নারী। ডায়াবেটিস আছে এমন অর্ধেকেরও বেশি মানুষ জানেনই না, তাদের ডায়াবেটিস আছে। আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশনের তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে ১০০ জনের মধ্যে ২৬ জন নারীই গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন, যাদের ৬৫ শতাংশই পরবর্তীকালে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন। ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বাড়লেও এই রোগ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরিতে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ, যা খুবই দুঃখজনক। জনস্বার্থে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ নীতিমালা প্রণয়নে সংশ্লিষ্টরা বহুবার তাগিদ দিলেও আজো তা আলোর মুখ দেখেনি। এক যুগের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও তা আজো চূড়ান্ত হয়নি। এমনকি আইনটি চূড়ান্ত করার কার্যকর কোনো উদ্যোগও দৃশ্যমান নয়। ২০০৭ সালে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির পক্ষ থেকে একটি খসড়া নীতিমালা সরকারের কাছে দেয়া হয়। বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবসের প্রস্তাবক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের দায়িত্ব অনেক। সরকার যাতে তাড়াতাড়ি এই নীতিমালা প্রণয়ন করতে পারে সেজন্য বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি একটি খসড়া নীতিমালাও তৈরি করে। খসড়াটি এমনভাবে করা হয়, যাতে সরকার দ্রুত সেই নীতিমালা বাস্তবায়ন করতে পারে। কিন্তু এরপরও সেই নীতিমালা বাস্তবায়িত হয়নি। নীতিমালায় যেসব উদ্যোগ নেয়ার ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে সেগুলো হলো- শিশু-কিশোরদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে পাঠ্যপুস্তকে সচেতনতামূলক রচনা বা নিবন্ধ অন্তর্ভুক্ত করা, ফাস্টফুড ও কোমল পানীয়ের গায়ে যাতে খাদ্যমান উল্লেখ থাকে, শহরের রাস্তাগুলো হাঁটার উপযোগী রাখা, এলাকাভিত্তিক ওয়াকিং ক্লাব, সুইমিং ক্লাব, জগিং ক্লাব বা স্পোর্টস ক্লাব গড়ে তোলার ব্যাপারে উৎসাহিত করা, গণমাধ্যমে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান ও সেøাগান প্রচারের ব্যবস্থা করা, হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে রোগীদের স্বাস্থ্যশিক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা রাখা প্রভৃতি। ডায়াবেটিস প্রতিরোধে এই নীতিমালা বাস্তবায়ন জরুরি বলে মনে করি। নীতিমালা অনুমোদনের ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা মোটেও কাম্য নয়। এই নীতিমালা প্রণীত হলে স্কুল-কলেজসহ প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে ডায়াবেটিস প্রতিরোধী কার্যক্রম জোরালো হবে। ২০১৯ সালে বাংলাদেশের স্থান শীর্ষ ১০ ডায়াবেটিস সংখ্যাধিক্য দেশের মধ্যে দশম অবস্থানে ছিল। দ্রুত ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সচেতনতা ও উদ্যোগ গ্রহণ না করলে ২০৩০-২০৪৫ সালে বাংলাদেশ নবম অবস্থানে থাকবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ডায়াবেটিস এক নীরব ঘাতক। এখনই প্রতিরোধ করা না গেলে স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকিতে পরিণত হবে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতার বিকল্প নেই। নীতিমালার বিষয়ে সরকারকে গুরুত্ব দিতে হবে। অবিলম্বে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ নীতিমালার বাস্তবায়ন দেখতে চাই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App